ধরে নাও সাইফা এবং পিংকি দুই বোন। সাইফার কাছে ২০০০ টাকা আছে এবং পিংকির কাছে ৪০০০ টাকা আছে। এই বিষয়টিকে আমরা এভাবে বলতে পারি, পিংকির কাছে সাইফার তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা আছে, অথবা আমরা বলতে পারি পিংকির তুলনায় সাইফার কাছে অর্ধেক পরিমাণ টাকা আছে। অর্থাৎ সাইফার টাকা এবং পিংকির টাকার অনুপাত হচ্ছে ১ বনাম ২ বা অর্ধেক।
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাইফা এবং পিংকির টাকাকে সংখ্যাতে প্রকাশ না করে একজনের তুলনায় অন্যজনের টাকা কত গুণ বেশি আছে সেই অংশ হিসেবে প্রকাশ করা যায়। এটিই হচ্ছে অনুপাত। খেয়াল করে দেখবে, এখানে পিংকি এবং সাইফার টাকার কথা বলা হয়েছে, যেখানে টাকাটি হচ্ছে একজাতীয় রাশি। অর্থাৎ সাইফার ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ এবং পিংকির ক্ষেত্রেও টাকার পরিমাণের কথা বলা হয়েছে। কাজেই অনুপাত বলতে বোঝায়-
দুটি একজাতীয় রাশির ক্ষেত্রে একটি অপরটির তুলনায় কত গুণ বা কত অংশ কম-বেশি তা একটি ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করার মাধ্যম।
মনে রাখতে হবে, অনুপাত একটা ভগ্নাংশ। এর কোনো একক নেই। অনুপাত দ্বারা রাশি দুটির মূল সংখ্যা কত সেটা কখনো জানা যায় না। একটা অনুপাতে দুটো রাশি থাকলে প্রথমটিকে পূর্ব রাশি এবং পরেরটিকে উত্তর রাশি বলে। দুটো রাশির মাঝে একটা অনুপাত সাইন (:) ব্যবহার করতে হয়। যেমন-
৪ (পূর্ব রাশি) : ৯ (উত্তর রাশি)
অনুপাতের দুটো রাশির ক্ষেত্রে তাদের একক অবশ্যই রকই হতে হবে, যেমন- মিটার : মিটার, সেন্টিমিটার : সেন্টিমিটার, টাকা : টাকা, পয়সা : পয়সা, কেজি : কেজি ইত্যাদি। কিন্তু অনুপাতের একটা রাশি এক এককের, আরেকটা রাশি অন্য এককের হলে সেটা অনুপাত হবে না। যেমন- সেন্টিমিটার : মিটার, পয়সা : কেজি, এগুলো অনুপাত হতে পারবে না। ভিন্ন ভিন্ন একক থাকলে তাদেরকে একই রকম এককে রূপান্তর করে তারপর অনুপাত বানাতে হবে।
অনুপাত vs ভগ্নাংশ
অনুপাত এবং ভগ্নাংশকে অনেকে একই মনে করলেও এদের মধ্যে অনেক বড় একটা পার্থক্য আছে। বিষয়টা একটা ক্লিয়ার করি!
সাইফা এবং পিংকির টাকার কথায় আসা যায়। এখানে সাইফার টাকা ২০০০ টাকা, পিংকির টাকা ৪০০০ ছিলো। আমরা তাদের টাকার তুলনা বের করতে গেলে তাদের টাকাকে পাশাপাশি বসিয়ে অনুপাত পাবো-
সাইফা : পিংকি
= ২০০০ : ৪০০০
= ২ : ৪
= ২ / ৩ (এভাবেও লিখা যায়)
আবার ধরে নাও, সাইফা তার ২০০০ টাকাকে ৪ ভাগ করেছে, যার প্রতিটা ভাগের মান ৫০০ টাকা করে। এখন সে তার টাকার ৩ ভাগ খরচ করেছে, এক ভাগ নিজের কাছে জমিয়ে রেখেছে। তাহলে তার পুরো টাকাটার পরিমান হরে বসিয়ে এবং তার খরচ + জমা করা অংশ গুলো পৃথক পৃথকভাবে লবে বসিয়ে যে অংশ গুলো আমরা পাবো সেগুলো হচ্ছে ভগ্নাংশ।
সাইফা খরচ করে ৪ ভাগ টাকার ৩ ভাগ = ৩/৪ অংশ
সাইফা জমা রাখে ৪ ভাগ টাকার ১ ভাগ = ১/৪ অংশ
কাজেই, ভগ্নাংশতে পুরো একটা পরিমানকে (যেমন ২০০০ টাকা) সমান কতগুলো ভাগে (যেমন ৫০০ টাকা) বিভক্ত করা হয়, তারপর সেই পুরো অংশকে (যেমন ২০০০ টাকা) হর বানিয়ে ভাগ করা অংশ গুলোকে (যেমন ১৫০০ টাকা, ৫০০ টাকা) লব বানিয়ে ভগ্নাংশ বানানো হয়।
কিন্তু অনুপাতে হর হিসেবে এরকম পুরো অংশ থাকে না, হর হিসেবে থাকে উত্তর রাশি এবং লব হিসেবে থাকে পূর্ব রাশি। মূলত এটিই হচ্ছে অনুপাত ও ভগ্নাংশের মধ্যকার পার্থক্য।
সমানুপাত
চারটা রাশির কথা ধরা যাক! ২টা কলম, ৪ টা কলম, ১০ টাকা, ২০ টাকা। এখানে এদের অনুপাত-
১ম রাশি : ২য় রাশি = ২টা কলম : ৪ টা কলম
৩য় রাশি : ৪র্থ রাশি = ১০ টাকা : ২০ টাকা
খেয়াল করলে দেখতে পাবে,
১ম রাশি : ২য় রাশি = ৩য় রাশি : ৪র্থ রাশি
অর্থাৎ, ২টা কলম : ৪ টা কলম = ১০ টাকা : ২০ টাকা
or, ২ : ৪ = ১০ : ২০
এর মানে, কলমের অনুপাতের সাথে টাকার অনুপাত পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। যখন দুটো অনুপাতের মান একে অপরের সাথে এভাবে মিলে যায় তখন তাদেরকে সমানুপাত বলে। সমানুপাতের ক্ষেত্রে ৪ টা রাশি থাকে, কিন্তু দুটো অনুপাতের রাশি গুলোকে যে একই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন উপরের উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, কলম এবং টাকা একই ধরনের রাশি না।
সমানুপাতের ক্ষেত্রে কিছু কথা আছে-
সমানুপাতের প্রতিটা রাশিকে যথাক্রমে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থী সমানুপাতী বলে।
সমানুপাতের দুটো অনুপাতের মাঝে দুটো :: চিহ্ন বা সমান = চিহ্ন দিতে হয়। যেমন-
৪ : ৬ :: ২০ : ৩০
অথবা, ৪ : ৬ = ২০ : ৩০
দুটো অনুপাত সমানুপাত কিনা সেটা বের করার শটকার্ট টেকনিক হচ্ছে সমানুপাতের ১ম রাশি ও ৪র্থ রাশির গুণফল সবসময় এর ২য় রাশি ও ৩য় রাশির গুণফলের সমান হবে। অর্থাৎ –
১ম রাশি x ৪র্থ রাশি = ২য় রাশি x ৩য় রাশি
সমানুপাতের ১ম ও ৪র্থ রাশিকে প্রান্তীয় রাশি এবং ২য় ও ৩য় রাশিকে মধ্য রাশি বলে।
সমানুপাত যেভাবে তৈরি হয়!
কোনো অনুপাতে থাকা দুটো রাশিকে যখন একই সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করা হয় তখন যে নতুন অনুপাত পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে প্রথম অনুপাতটির সমানুপাতিক রাশি। যেমন একটা অনুপাত ধরে নেই-
৭ : ১০
এবার এই অনুপাতের দুটো রাশিকে একই সংখ্যা ৫ দ্বারা গুণ করি-
৭ x ৫ : ১০ x ৫
= ৩৫ : ৫০
তাহলে নতুন যে অনুপাত পেলাম, এটি হচ্ছে ১ম অনুপাতের সমানুপাত। অর্থাৎ-
৭ : ১০ :: ৩৫ : ৫০
ক্রমিক সমানুপাত
ধরে নাও তিনটা রাশি যথাক্রমে ৩ কেজি, ৬ কেজি, ১২ কেজি। এদেরকে ব্যবহার করে আমরা দুটো অনুপাত বানাতে পারি যেখানে তাদের মান হচ্ছে-
৩ : ৬ এবং ৬ : ১২
একটু খেয়াল করে দেখো, এই দুটো অনুপাত আবার সমানুপাত হিসেবে কাজ করছে! অর্থাৎ-
৩ : ৬ :: ৬ : ১২
এই ধরনের অনুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলে। তাহলে বলা যায়-
যেকোনো তিনটি রাশির ১ম ও ২য় রাশির অনুপাত যদি ২য় ও ৩য় রাশির অনুপাতের সমান হয় তবে সেই সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলে।
ক্রমিক সমানুপাতের মধ্যে মনে রাখতে হবে-
২য় রাশিটিকে ১ম ও ৩য় রাশির মধ্য সমানুপাতী বা মধ্য রাশি বলে।
ক্রমিক সমানুপাতের ৩টা রাশিই এক জাতীয় হতে হবে। যেমন উপরের উদাহরণে সবগুলো রাশি কেজিতে ধরা হয়েছিলো।
ক্রমিক সমানুপাত অনুসারে, মধ্যরাশি দুটো একই সাথে বলে এর থেকে একটা সূত্র বের করা যায়-
a : b :: b : c
or, a : b = b : c
or, a / b = b / c
or, b2 = ac
তারমানে, (২য় রাশি)২ = ১ম রাশি x ৩য় রাশি
তাই, কোনো সমানুপাত ক্রমিক সমানুপাত কিনা সেটা বোঝার জন্য আমরা এই সূত্রটা ব্যবহার করতে পারি। যদি সূত্রটা মিলে যায় তবে সেই রাশি গুলোই হচ্ছে ক্রমিক সমানুপাতের অন্তর্ভুক্ত। একটা উদাহরণ দেখে ফেলি!
৬, ১২, ২৪ ক্রমিক সমানুপাত কিনা?
Solution : এখানে,
(২য় রাশি)২ = (১২)২ = ১৪৪
আবার, ১ম রাশি x ৩য় রাশি = ৬ x ২৪ = ১৪৪
অর্থাৎ, প্রশ্নে দেওয়া রাশি তিনটি ক্রমিক সমানুপাতের অন্তর্ভুক্ত!
অনুপাত সম্পর্কিত বিভিন্ন সংজ্ঞা
লঘু অনুপাত : যে অনুপাতে পূর্ব রাশি উত্তর রাশি অপেক্ষা ছোট, যেমন- ৩ : ৫।
গুরু অনুপাত : যে অনুপাতে পূর্ব রাশি উত্তর রাশি অপেক্ষা বড়, যেমন- ৬ : ২।
ব্যস্ত অনুপাত : যে অনুপাতে পূর্ব রাশি কে উত্তর রাশি এবং উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি দ্বারা রূপান্তর করা হয় তাকে ব্যস্ত অনুপাত বলে। যেমন- ৩ : ৫ এর ব্যস্ত অনুপাত ৫ : ৩।
দ্বিগুণানুপাত : কোনো অনুপাতের দুটো রাশিকে বর্গকে করে নতুন যে অনুপাত বানানো হয় তাকে দ্বিগুণানুপাত বলে। যেমন- ৩ : ৫ এর দ্বিগুণানুপাত = ৩২ : ৫২ বা ৯ : ২৫।
দ্বিভাজিত অনুপাত : কোনো অনুপাতের দুটো রাশিকে বর্গমূল করে নতুন যে অনুপাত বানানো হয় তাকে দ্বিগুণানুপাত বলে। যেমন- ৯ : ২৫ এর দ্বিগুণানুপাত = √৯ : √২৫ বা ৩ : ৫।
কিছু অংক!
১. দুটো রাশির অনুপাত ৫ : ১১। উত্তর রাশি ৯৯ হলে পূর্ব রাশি কত?
Solution : পূর্ব রাশি ধরি x, তাহলে-
৫ : ১১ = x : ৯৯
or, ৫ / ১১ = x / ৯৯
or, x = (৯৯ x ৫) / ১১
or, x = ৪৫
২. ৬৪ কে ৭ : ৮ অনুপাতে হ্রাস করলে নতুন সংখ্যা হবে কত?
Solution : এই প্রশ্নের মানে, ৮ এর সমতুল সংখ্যা ৬৪ দেয়া, তাহলে ৮ কে কমিয়ে ৭ করা হলে ৬৪ কমে কত হবে, সেট বের করতে বলা হয়েছে।
যেহেতু ৮ এর ৮ গুন = ৬৪, তাই ৭ এর ৮ গুন = ৫৬ হবে আমাদের উত্তর!
৩. ৩, ৯, ৪ এর ৪র্থ সমানুপাতিক কত?
Solution : যদি ৪র্থ সমানুপাতিককে x ধরি তবে,
৩ : ৯ = ৪ : x
or, ৩ / ৯ = ৪ / x
or, x = ১২
৪. সাইফার বোনের বয়স সাইফার ও তার বাবার বয়সের মধ্য সমানুপাতী। সাইফার বয়স ১২ বছর এবং তার বাবার বয়স ৪৮ হলে তার বোনের বয়স কত?
Solution : মধ্য সমানুপাতীর ক্ষেত্রে ক্রমিক সমানুপাত বিষয়টা কাজ করে, যেখানে বোনের বয়স মধ্য সমানুপাতিক বা b হলে, সাইফার বয়স a, বাবার বয়স c হলে-
b = √(ac)
= √(১২ x ৪৮)
= √৫৭৬
= ২৪ বছর
৫. একটা জিনিস ১২০ টাকায় কিনে ১৪৪ টাকায় বিক্রি করলে ক্রয়মূল্য ও লাভের অনুপাত কত?
Solution : লাভ = ১৪৪ – ১২০ = ২৪
তাহলে, ক্রয়মূল্য : লাভ = ১২০ : ২৪
= ৫ : ১
৬. একটা কলম ১০% লাভে বিক্রয় করা হলো। কলমটির বিক্রয়মূল্য ও ক্রয়মূল্যের অনুপাত কত?
Solution : ক্রয়মূল্য যদি ১০০ টাকা ধরি তবে বিক্রয়মূল্য হবে = ১০০ + ১০ = ১১০ টাকা।
তখন, বিক্রয়মূল্য : ক্রয়মূল্য = ১১০ : ১০০
= ১১ : ১০
দুটো ভগ্নাংশকে পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ
যদি দুটো অনুপাতের অংশকে ভগ্নাংশ আকারে দেওয়া থাকে তবে তাদেরকে নিয়ে কাজ করা সমস্যার। তাই তাদেরকে আমরা পূর্ণ সংখ্যাতে রূপান্তর করবো। যেমন-
কোনো অনুপাত = ১/৭ : ১/৫
১ম পদ্ধতি : এই অনুপাতের দুটো রাশিকে আড়াআড়ি গুন করে পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে রূপান্তর করা যায়, যেমন-
১/৭ : ১/৫
= (১ x ৫) : (১ x ৭)
= ৫ : ৭
২য় পদ্ধতি : অনুপাতের দুটো রাশির হরের লসাগু বের করে তাদেরকে সেই লসাগু দিয়ে গুন করার মাধ্যমেও আমরা ভগ্নাংশের অনুপাতকে পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে রূপান্তর করতে পারি।
যেমন ২/৫, ৩/৭, ১/২ এই তিনটা ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে যদি তাদেরকে পূর্ণ সংখ্যায় রূপান্তর করতে চাই তবে হরগুলোর লসাগু = ৭০ আসবে। এই ৭০ দিয়ে প্রতিটা ভগ্নাংশকে আলাদা আলাদা ভাবে গুণ করবো-
৭০ x (২/৫) : ৭০ x (৩/৭) : ৭০ x (১/২)
= ২৮ : ৩০ : ৩৫
ধারাবাহিক অনুপাত
দুটো অনুপাত a : b এবং b : c হলে তাদেরকে একসাথে a : b : c আকারে লেখা যায়। একে ধারাবাহিক অনুপাত বলে। অর্থাৎ-
ধারাবাহিক অনুপাত তৈরি হয় দুটো অনুপাত দিয়ে, যেখানে প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি এবং ২য় অনুপাতের পূর্ব রাশি একই হয়।
তবে আমাদের হাতে যদি ভিন্ন দুটো অনুপাত থাকে, যার প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি এবং ২য় অনুপাতের পূর্ব রাশি না মিলে, তবে আমরা সেই দুটো অনুপাতকে অন্য উপায়ে ধারাবাহিক অনুপাত বানাতে পারবো। সেই উপায়টা হচ্ছে-
১ম অনুপাত = a : b
২য় অনুপাত = c : d
ধারাবাহিক অনুপাত = ac : cb : bd হবে, অর্থাৎ ab, cb, bd বলতে অনুপাতের রাশিদ্বয়ের গুণফলকে বোঝাচ্ছে।
Example 1 : ক : খ = ৫ : ৪, ক : গ = ৬ : ৫ হলে, গ : খ =?
Solution : এখানে গ : খ সিকুয়েন্স মানে হচ্ছে পুরো অনুপাতটি- খ : ক : গ
তাই প্রথমে অনুপাতগুলোকে সিকুয়েন্স অনুসারে সাজিয়ে লিখি-
খ : ক = ৪ : ৫ (প্রশ্নে দেওয়া অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত)
ক : গ = ৬ : ৫
তাহলে, ধারাবাহিক অনুপাতের সূত্রানুসারে,
খ : ক : গ = (৪ x ৬) : (৬ x ৫) : (৫ x ৫)
= ২৪ : ৩০ : ২৫
এখন, গ : খ = ২৫ : ২৪।
তিনটি অনুপাতের ধারাবাহিক অনুপাত গঠন
যদি আমাদেরকে তিনটি অনুপাত দেওয়া থাকে তবে আমরা প্রতিটা অনুপাতকে গুণ করে সবশেষে যে ভগ্নাংশ পাবো, সেটাই হচ্ছে আমাদের দেওয়া তিনটা অনুপাতের মধ্য থেকে ১ম অনুপাতের পূর্ব রাশি এবং ৩য় অনুপাতের উত্তর রাশির অনুপাত। যেমন-
A : B = ২ : ৩, B : C = ২ : ৪, C : D = ২ : ৫ হলে, A : D = কত?
আমরা এখানে প্রতিটা অনুপাতকে ভগ্নাংশ আকারে লিখে সরাসরি গুণ করবো-
(২ / ৩) x (২ / ৪) x (২ / ৫) = ৮ / ৬০ = ২ / ১৫
তাহলে, A : D = ২ : ১৫
আবার কিছু অংক!
১. সাইফার আয়ের ২০%, পিংকির আয়ের ২৫% এর সমান। তাদের আয়ের অনুপাত কত?
Solution : শর্তমতে,
সাইফার আয়ের ২০% = পিংকির আয়ের ২৫%
or, সাইফার আয় x (২০ / ১০০) = পিংকির আয় x (২৫ / ১০০)
or, সাইফার আয় / পিংকির আয় = (২৫ / ১০০) / (২০ / ১০০)
or, সাইফার আয় / পিংকির আয় = ২৫ / ২০
or, সাইফার আয় / পিংকির আয় = ৫ / ৪
or, সাইফার আয় : পিংকির আয় = ৫ : ৪
২. A এর ২/৩ = B এর ৭৫% = C এর ০.৬ হলে, A : B : C কত?
Solution : দেয়া আছে,
A এর ২/৩ = B এর ৭৫% = C এর ০.৬
or, ২A / ৩ = ৩B / ৪ = ৩C / ৫
এখানে সবগুলো ভগ্নাংশ আকারে দেওয়া, এদেরকে পূর্ণ সংখ্যায় কনভার্ট করতে হলে লবগুলোর লসাগু দ্বারা প্রত্যেকটি ভগ্নাংশকে ভাগ করতে হবে। যেখানে লবগুলোর ২, ৩ এবং ৩ এর লসাগু = ৬
তাহলে,
২A / (৩ x ৬) = ৩B / (৪ x৬) = ৩C / (৫ x ৬)
or, A / ৯ = B / ৮ = C / ১০
or, A : B : C = ৯ : ৮ : ১০
৩. P = Q এর ৫০% এবং Q = R এর ৫০% হলে, P : Q : R = কত?
Solution : ধরি, R = ১০০,
তাহলে Q = ৫০, P = ২৫
সেজন্য, P : Q : R = ২৫ : ৫০ : ১০০ = ১ : ২ : ৪
মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত
একাধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশি গুলোর গুণফলকে উত্তর রাশি ধরে যে অনুপাত পাওয়া যায় তাকে মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত বলে। যেমন-
৪ : ৩, ৭ : ১২, ৯ : ৫ এর মিশ্র অনুপাত হচ্ছে-
(৪ x ৭ x ৯) : (৩ x ১২ x ৫)
= ২৫২ : ১৮০
= ৭ : ৫
সমানুপাতিক ভাগ
কোন একটা রাশিকে একাধিক নির্দিষ্ট সংখ্যার অনুপাতে ভাগ করাকে সমানুপাতিক ভাগ বলা হয়। সমানুপাতিক ভাগের ক্ষেত্রে যা মনে রাখতে হবে-
প্রদত্ত অনুপাতের রাশিগুলো যোগ করে রাশিগুলোর যোগফল বের করতে হবে এবং প্রদত্ত নির্দিষ্ট রাশিটিকে উক্ত যোগফল দ্বারা ভাগ করে ১ ভাগ অনুপাতের মান বের করতে হবে।
এরপর ১ ভাগ অনুপাতের মানের ভিত্তিতে যার যত ভাগ তত দ্বারা এর সাথে গুন করে বন্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আবারো কিছু ম্যাথ!
১. সাইফা ২৫০০ টাকা মিতা, রিতা ও সীতার মাঝে ৩ : ২ : ৫ অনুপাতে ভাগ করে দিয়েছে। তারা প্রত্যেকে কত টাকা করে পাবে?
Solution : প্রথমে অনুপাতের রাশিদ্বয়ের যোগফল বের করবো – ৩ + ২ + ৫ = ১০
তাহলে, ১ ভাগ অনুপাত = ২৫০০ / ১০ = ২৫০
এবার, এই ভাগটি দিয়ে প্রতিটা অনুপাতের অংশকে গুন করলে আমরা উত্তর পেয়ে যাবো!
মিতার টাকা = ২৫০ x ৩ = ৭৫০ টাকা
রিতার টাকা = ২৫০ x ২ = ৫০০ টাকা
সীতার টাকা = ২৫০ x ৫ = ১২৫০ টাকা
২. ৪৯৫ টাকাকে ১ : ২ : ৩ : ৪ : ৫ অনুপাতে ভাগ করলে বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম অংশের পার্থক্য কত হবে?
Solution : অনুপাতের যোগফল = ১ + ২ + ৩ + ৪ + ৫ =১১
তাহলে, ১ ভাগ অনুপাত = ৪৯৫ / ১১ = ৪৫
বৃহত্তম অংশ = ৪৫ x ৫ = ২২৫
ক্ষুদ্রতম অংশ = ৪৫ x ২ = ৯০
তাহলে, পার্থক্য = ২২৫ – ৯০ = ১৩৫
৩. একটা চতুর্ভূজের চারটি কোণের অনুপাত ১ : ২ : ২ : ৩ হলে বৃহত্তম কোণের পরিমাণ কত?
Solution : অনুপাত রাশির যোগফল = ১ + ২ + ২ + ৩ = ৮
চতুর্ভুজের ৪ কোণের সমষ্টি = ৩৬০°
তাহলে, ১ ভাগ = ৩৬০ / ৮ = ৪৫
বৃহত্তম কোণের মান = ৪৫ x ৩ = ১৩৫°
৪. একটা জারে দুধ ও পানির অনুপাত ৫ : ১। দুধের পরিমান যদি পানি অপেক্ষা ৮ লিটার বেশি হয় তবে পানির পরিমাণ কত?
Solution : দুধ ও পানির অনুপাতের পার্থক্য ৫ – ১ = ৪, এর মানে এই ৪ অংশটুকু হচ্ছে ৮ লিটারের সমতুল্য।
তাই, ৪ ভাগ = ৮ লিটার হলে,
১ ভাগ = ৮/৪ = ২ লিটার হবে।
আর প্রশ্নে পানির অনুপাত ১ ভাগ দেওয়া, তাই উত্তর হচ্ছে ১ ভাগ = ২ লিটার।
৫. দুটো সংখ্যার অনুপাত ২ এবং পার্থক্য ১৫, ছোট সংখ্যাটি কত?
Solution : দুটো সংখ্যার অনুপাত ২ মানে = ২ : ১
ধরি সংখ্যা দুটো = ২x, x
তাদের মাঝে পার্থক্য = ২x – x = x
শর্তমতে, x = ১৫, এটাই উত্তর।
৬. কাগজের পূর্বমূল্য : বর্তমান মূল্য = ২ : ৩। পূর্বের তুলনায় কাগজের মূল্য শতকরা কত বেড়েছে?
Solution : ধরি কাগজের পূর্বমূল্য ২x, বর্তমান মূল্য ৩x।
তাহলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে = ৩x – ২x = x
সুতরাং শতকরা বৃদ্ধি = (x / ২x) x ১০০ = ৫০%
৭. ধানে চাল ও তুষের অনুপাত ৭ : ৩, এতে শতকরা কি পরিমান চাল আছে?
Solution : ধরি চাল ও তুষের পরিমান = ৭x এবং ৩x।
মোট ধান = ৭x + ৩x = ১০x
তাহলে শতকরা চালের পরিমান = (৭x / ১০x) x ১০০ = ৭০%