ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে নিয়ে জানতে হলে আগে জানতে হবে পরমাণুতে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে কিছু কক্ষপথের মধ্যে সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে। তবে এখানে ইলেকট্রন খুব স্মার্ট একটা বৈশিষ্ট্য দেখায়।
পরমাণুর মধ্যে যদি দুটো বা তার বেশি কক্ষপথ বা শক্তিস্তর থাকে তবে প্রতিটা কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের মধ্যে থাকা ইলেকট্রনের শক্তির লেভেল (Energy Level) কখনো একই মানের হবে না। আবার একই শক্তিস্তরে থাকা অনেকগুলো ইলেকট্রনের আলাদা আলাদা শক্তিও এক রকম হয় না।
ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে
নিউক্লিয়াসের চারপাশে বিভিন্ন শক্তিস্তরে শক্তির ক্রমানুসারে ইলেকট্রনগুলো যেভাবে সাজানো থাকে তাকে ইলেকট্রন বিন্যাস বলে।
ইলেকট্রনের খুব মজার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যখন আমরা পরমাণুতে অনেকগুলো ইলেকট্রনকে প্রবেশ করাই তখন সেই ইলেকট্রন গুলো প্রথমে সবচেয়ে কম শক্তিস্তরে থাকা উপশক্তিস্তরের অরবিটালে প্রবেশ করে। এই কম শক্তি যুক্ত শক্তিস্তরটি থাকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রের একদম কাছে। নিউক্লিয়াস থেকে যতই দুরত্ব বাড়ানো হয়, প্রতিটা শক্তিস্তরের মধ্যে থাকার জন্য ইলেকট্রনের শক্তি ততই বাড়তে হয়।
এর ফলে আস্তে আস্তে উপরের শক্তিস্তরের উপশক্তিস্তরে থাকা অরবিটালে প্রবেশ করার জন্য ইলেকট্রনকে আরো বেশি শক্তিশালী হতে হয়। অর্থাৎ যে শক্তিস্তরের উপশক্তিস্তরে থাকা অরবিটালের শক্তি একদম কম, সেই উপশক্তিস্তরের সেই অরবিটালে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করে। আর যে শক্তিস্তরে থাকা উপশক্তিস্তরে থাকা অরবিটালের শক্তি বেশি, সেখানে ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করে।
এখন ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে সেটা তো আমরা জানলাম। কিন্তু পরমাণুর শক্তিস্তর গুলোর মধ্যে কোনটির শক্তি কম এবং কোনটির শক্তি বেশি সেটা দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে-
প্রধান শক্তিস্তরের মান – n
উপশক্তিস্তরের মান – l
যেসব শক্তিস্তরের জন্য এদের যোগফল বা (n + l) এর মান কম, সেসব শক্তিস্তরে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করে। আবার যেসব শক্তিস্তরের জন্য (n + l) এর মান বেশি, সেসব শক্তিস্তরে ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করে।
ইলেকট্রন বিন্যাসের ক্ষেত্রে অরবিটালের ধারণা
মনে রাখতে হবে, অরবিটাল বলতে বোঝায় ইলেকট্রন কোন আকৃতির পথ ধরে ঘোরে সেটাকে। তাই- s, p, d, f অরবিটালের জন্য-
s অরবিটালের আকৃতি মত পথ অনুসরণ করে সর্বোচ্চ 2টা ইলেকট্রন ঘোরে,
p অরবিটালের আকৃতি মত পথ অনুসরণ করে সর্বোচ্চ 6টা ইলেক্ট্রন ঘোরে,
d অরবিটালের আকৃতি মত পথ অনুসরণ করে সর্বোচ্চ 10টা ইলেক্ট্রন ঘোরে,
f অরবিটালের আকৃতি মত পথ অনুসরণ করে সর্বোচ্চ 14টা ইলেকট্রন ঘোরে।
এবার আমরা কিছু তুলনামূলক ক্যালকুলেশন করি যেখানে এই (n + l) যোগফলটা বের করে দেখবো যে কাদের মধ্যে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে এবং কাদের মধ্যে ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করবে-
1s ও 2s এর জন্য,
1s = 1 + 0 = 1
2s = 2 + 0 = 2
তাই ইলেকট্রন আগে 1s উপশক্তিস্তরে আগে যাবে, পরে 2s এর মধ্যে যাবে।
3d ও 4s এর জন্য,
3d = 3 + 2 = 5
4s = 4 + 0 = 4
তাই ইলেকট্রন আগে 3d উপশক্তিস্তরে আগে যাবে, পরে 4s এর মধ্যে যাবে।
4f ও 5p এর জন্য,
4f = 4 + 3 = 7
5p = 5 + 1 = 6
তাই ইলেকট্রন আগে 4f উপশক্তিস্তরে আগে যাবে, পরে 5p এর মধ্যে যাবে।
ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে ও এর ধাপসমূহ
আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে। এবার আমরা একটা দারুন জিনিস দেখব যেটা হলো উপশক্তিস্তরে থাকা অরবিটালের শক্তিক্রম। এই ক্রমের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারব যে ইলেকট্রন আগে কোন অরবিটালে যাবে এবং পরে কোন অরবিটালে যাবে। এই ক্রমটি হচ্ছে-
1s – 2s – 2p – 3s – 3p – 4s – 3d – 4p – 5s – 4d – 5p – 6s – 4f – 5d – 6p – 7s – 5f – 6d – 7p – 8s
তাই প্রথমদিকের ইলেকট্রনগুলো কম শক্তি সম্পন্ন অরবিটাল অনুসারে ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে থাকে এবং আস্তে আস্তে উপরের শক্তিস্তরে যায়। এখন, যদি আমরা সোডিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস এই ক্রম অনুসারে লিখি তবে সেটা হবে-
Na (11) – 1s2 2s2 2p6 3s1
এখানে প্রতিটা অরবিটালের উপরে 2, 2, 6, 1 সংখ্যা গুলো হচ্ছে ইলেকট্রন সংখ্যা, যেগুলো নিচের শক্তিস্তর বা কম মানের (n + l) পূরণ করে করে উপরের শক্তিস্তরে যাচ্ছে। একইভাবে ক্লোরিনের ইলেকট্রন বিন্যাস-
Cl (17) – 1s2 2s2 2p6 3s2 3p5
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- অর্ধপরিবাহী কাকে বলে
- আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে
- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে
- কাইম কাকে বলে?
- কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক
- জৈব যৌগ কাকে বলে
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ
- ধারকের শ্রেণী বিন্যাস
- ধারকের সমান্তরাল বিন্যাস
- পরমাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন সংখ্যার সম্পর্ক
- পরমাণুর উপশক্তিস্তর
- পরমাণুর মূল কণিকা
- বোর পরমাণু মডেল
- রসায়ন কাকে বলে
- সবুজ রসায়ন কাকে বলে