যেকোনো ধরনের পদার্থই অনেকগুলো ছোট ছোট কণা দিয়ে গঠিত। এরা একে অপরকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃকণা বল বলে। কঠিন পদার্থে এই বলের মান সবচেয়ে বেশি বলে কণা গুলো একে অপরের সাথে খুব শক্তভাবে জোট হয়ে থাকে। আবার গ্যাসীয় পদার্থে এই বলের মান খুব কম বলে গ্যাসীয় কণাগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়। কণা যেহেতু ঘুরে বেড়াতে পারে, তাই বলা যায় কণার নির্দিষ্ট গতিশক্তি আছে।
কোনো পদার্থের কণাগুলোর গতিশক্তি এবং তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বল দিয়ে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের অবস্থা ব্যাখ্যা করার পদ্ধতিকে কণার গতিতত্ত্ব বলে।
কঠিন বস্তুতে যখন তাপ দেওয়া হয়, তখন কঠিন পদার্থের কণাগুলো সেই তাপশক্তি শুষে নেয়। তোমরা জানো শক্তি এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই তাপশক্তি তখন কণাগুলোর সাথে মিশে গতিশক্তিতে রূপান্তর হয়, যে কারণে কণা গুলোতে গতিশক্তি কাজ করে এবং কণাগুলকে কম্পনশীল করে ফেলে।
আবার তাপ যদি আরো বাড়ানো হয় তবে কণার কম্পন আরো বেড়ে যাবে। ফলে কণাগুলোর নিজেদের মাঝে থাকা আকর্ষণ বল আরো দুর্বল হয়ে যাবে কিন্তু তখনো কণাগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত থেকে বিশেষ অবস্থা তৈরি করে, যাকে তরল অবস্থা বলে। তরল অবস্থায় কণাগুলো পুরোপুরিভাবে একে অপরকে ছেড়ে চলে যায় না।
সবশেষে তাপ যদি আরো বাড়ানো হয়, তখন সেই তাপশক্তি প্রতিটা কণার আন্তঃকণা বলকে পুরোপুরি দুর্বল করে দিবে। ফলে কণাগুলো মুক্তভাবে নিজেরা নিজেরা ছুটোছুটি করতে থাকবে। এই অবস্থাই হচ্ছে গ্যাসীয় অবস্থা।
একটা কঠিন পদার্থকে প্রচুর পরিমাণে তাপ দিলেই উপরের ঘটনা গুলো ঘটা সম্ভব। কিন্তু প্রকৃতিতে যারা গ্যাসীয় পদার্থ আছে, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ঘটনা ঘটে না। তারা এমন ধরণের গ্যাসীয় পদার্থ যারা খুব কম তাপেই তাদের কণা গুলো থেকে আন্তঃকণা বলকে পুরোপুরি দুর্বল করে দিতে পারে। তাই হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন সহ যেসব গ্যাসীয় পদার্থ আছে, তাদের সবার অণুগুলো কক্ষ তাপমাত্রায় (২৫° সেন্টিগ্রেড) পরস্পরের কাছ থেকে মুক্তভাবে থাকতে পারে।
আরো একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যখন কোনো পাত্রে গ্যাসীয় পদার্থকে রাখা হয় তখন তার মধ্যে থাকা স্বাধীন গ্যাসীয় অণু গুলো এলোমেলো পথ ধরে চলাচল করে। তাদের চলাচলের পথে কখনো কখনো তারা অন্য কোনো অণুর সাথে ধাক্কা খায়, কিংবা পাত্রের দেওয়ালের সাথেও ধাক্কা খায়। কোনো গ্যাসীয় অণু কখনোই স্থির অবস্থায় থাকে না, নির্দিষ্ট গতিশক্তি নিয়ে আবদ্ধ পাত্রের ভেতরে ভ্রমণ করতে থাকে। যদি সেই গ্যাসের তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, তবে সেই তাপশক্তি অণুগুলোর গতিশক্তিকে বাড়িয়ে দেয় এবং পাত্রের দেওয়ালে গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে দেয়।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে
- একই পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থা
- কেলাসের একক কোষ ও কেলাস জালি (Crystal Lattice & Unit Cells)
- গতিশক্তি (Kinetic Energy)
- গলন, স্ফুটন এবং ঘনীভবন
- গ্যাস আয়তন সূত্র
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন
- গ্যাসের বিভিন্ন প্রকারের আণবিক গতিবেগ
- তরল পদার্থের বাষ্পচাপ (Vapour Pressure of Liquid)
- তরল স্ফটিক ও প্লাজমা
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া