কৃৎ প্রত্যয় বলতে বোঝায়, সব ধ্বনি ক্রিয়া মূলের সাথে যা যুক্ত থাকে তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন-
সেলাই (বিশেষ্য) = সেল্ (ক্রিয়ার মূল) + আই (প্রত্যয়)
এবার ক্রিয়ার মূল অংশ বুঝতে হলে তিনটি শব্দ দেখতে হবে আমাদের-
আমি চলি
তুমি চলো
সাইফা চলেছে
এখানে “চলা” ক্রিয়াটি তিনটা রূপে বসেছে, যেখানে এর মূল অংশ হচ্ছে- “চল্”। যখন কোনো ক্রিয়ার মূল (যার আরেক নাম ধাতু) লিখবো, তখন তার আগে সবসময় √ চিহ্ন দিবো।
তারমানে,
চলি = √চল্ + ই
চলো = √চল্ + ও
চলেছে = √চল্ + এছে
এখানে এই তিনটি রূপের সবগুলো ক্রিয়া বোঝাচ্ছে, যাদের মূল শব্দ হচ্ছে চল্, তাই চল্ হচ্ছে ক্রিয়ার মূল অংশ বা ধাতু। সেইসাথে চলি, চলো ও চলছে এরা কেউই বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ নয়, এরা হচ্ছে ক্রিয়াপদ।
কৃৎ প্রত্যয় কিভাবে গঠিত হয়
এবার একই ক্রিয়ার মূল অংশ ব্যবহার করে আরো কিছু শব্দ তৈরি করা যায়-
সাইফার চলন ধীর গতির
এনি চলন্ত ট্রেনে উঠেছে
এখানে “চলা” শব্দটি দুটো রূপে বসেছে, যেখানে এর মূল অংশ হচ্ছে আগের মতই-“চল্”
তারমানে,
চলন = চল্ + অন
চলন্ত = চল্ + অন্ত
কিন্তু এখানে “চল্” ক্রিয়ামূল যুক্ত দুটো শব্দ- “চলন” একটা বিশেষ্য পদ বোঝাচ্ছে, “চলন্ত” একটা বিশেষণ পদ বোঝাচ্ছে। তাই এখানে “চলন” এবং “চলন্ত” ক্রিয়াপদ হবে না।
তাই ভালো করে মনে রাখতে হবে, ক্রিয়ার মূল অংশ ব্যবহার করার পর পুরো শব্দটি যদি ক্রিয়াপদ হয় (যেমন- চলি, চলো, চলেছে) তবে সেখানে প্রকৃতি-প্রত্যয়ের কোনো কথা আসবে না। কিন্তু পুরো শব্দটা যদি বিশেষ্য বা বিশেষণ হয় (যেমন- চলন, চলন্ত) তবে সেই ক্রিয়ার মূল অংশকে প্রকৃতি বলে।
অর্থাৎ, “চলি”, “চলো”, “চলেছে” শব্দে থাকা “চল্” একটা সাধারণ ধাতু হিসেবে কাজ করে, “চলন”, “চলন্ত” শব্দে থাকা “চল্” একই সাথে ধাতু এবং প্রকৃতি হিসেবে কাজ করে।
তাই বলা যায়, বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে থাকা ক্রিয়ার মূলকে প্রকৃতি বলে। কিন্তু সব শব্দে থাকা ক্রিয়ার মূলকে প্রকৃতি বলে না। সেজন্য “চল্” ক্রিয়ামূল কিংবা ধাতুটি সবসময় যে প্রকৃতি হিসেবে কাজ করবে এমন কোনো কথা নেই।
প্রকৃতির সাথে যখন কোনো ধ্বনি যুক্ত হবে তখন সেই ধ্বনিকে প্রত্যয় বলে। কিন্তু সেই প্রকৃতি যদি কোনো ক্রিয়ার মূল অংশ বা ধাতু হয় তবে তার সাথে যুক্ত প্রত্যয়টি হবে কৃৎ প্রত্যয়। যেমন উপরের উদাহরণ গুলোতে আরেকবার তাকালে দেখতে পাবে অন, অন্ত এরা সবাই কৃৎ প্রত্যয়। এবার বিষয়টা আরেকটু ক্লিয়ার হই-
বিশেষ্য = ধাতু (ক্রিয়ার মূল অংশ) + কৃৎ প্রত্যয়
উদাহরণ : ডুবন (বিশেষ্য) = ডুব্ + অন (কৃৎ প্রত্যয়)
বিশেষণ = ধাতু (ক্রিয়ার মূল অংশ) + কৃৎ প্রত্যয়
উদাহরণ : ডুবন্ত (বিশেষণ) = ডুব্ + অন্ত (কৃৎ প্রত্যয়)
কিন্তু ক্রিয়াপদ শব্দে ক্রিয়ার মূল অংশ বা ধাতুর সাথে যেটা যুক্ত থাকে, তাকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে। যেমন-
ক্রিয়াপদ = ধাতু (ক্রিয়ার মূল অংশ) + ক্রিয়া বিভক্তি
উদাহরণ : পড়েছে (ক্রিয়াপদ) = √পড়্ (ধাতু) + এছে (ক্রিয়া বিভক্তি)
তাই মূল কথা হচ্ছে, কৃৎ প্রত্যয় হবার শর্ত দুটো-
- ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি কোনো না কোনো ধাতুর সাথে যুক্ত থাকতে হবে,
- যুক্ত হবার পর সেটা বিশেষ্যপদ বা বিশেষণপদ তৈরি করবে, কখনোই ক্রিয়াপদ তৈরি করবে না।
মনে রাখতে হবে, কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত পুরো বিশেষ্য বা বিশেষণ পদটিকে কৃদন্ত পদ বলে। যেমন-
চলন্ত (কৃদন্ত পদ) = চল্ (ক্রিয়ামূল) + অন্ত (কৃৎ প্রত্যয়)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-