তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার নিয়ে জানতে হলে আগে জানতে হবে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কি। যেসব মৌলের আইসোটোপের নিউক্লিয়াস নিজে নিজে ভেঙে গিয়ে আলফা, বিটা, গামা রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ টির বেশি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কিছু আইসোটোপ প্রকৃতিতে এবং কিছু আইসোটোপকে পরিক্ষাগারে বানানো হয়েছে। এবার আমরা কিছু তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার নিয়ে জানবো-
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার
১. রোগ নির্ণয়ে
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার হয় বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে। আইসোটোপের মাধ্যমে শরীরের যে স্থানে রোগ হয়েছে সেই স্থানের ছবি তোলা যায়, এক্ষেত্রে টেকনিশিয়াম – 99 (99Tc) নামক তেজস্ক্রিয় আইসোটোপকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হলে সেটি গামা রশ্মি বিকিরণ করে। তখন বাইরের থেকে গামা রশ্মি শনাক্তকরণ ক্যামেরা দিয়ে ওসব স্থানের ছবি তোলা হয়।
4399 Tc = 4399 Tc + 00γ
টেকনিশিয়াম-99 এর Life Time বা স্থায়ীকাল অনেক কম, মাত্র ৬ ঘন্টা। তাই এর তেজস্ক্রিয়তা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় বলে এটি অনেক নিরাপদ।
২. রোগ নিরাময়ে
- সর্বপ্রথম থাইরয়েডে হওয়া ক্যান্সার নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে আয়োডিনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ 131I যুক্ত দ্রবণ পান করানো হয়। এটি যখন থাইরয়েডে পৌঁছায় তখন এই আইসোটোপ থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হয় এবং এই রশ্মি থাইরয়েডের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে।
- ব্রেইন ক্যান্সার নিরাময়ে ইরিডিয়াম আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
- টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময়ে কোবাল্টের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ 60Co ব্যবহার করা হয়। এই আইসোটোপ থেকে নির্গত রশ্মি ক্যান্সারের কোষকলাকে ধ্বংস করে।
- রক্তের লিউকোমিয়া রোগের চিকিৎসায় ফসফরাসের আইসোটোপ 32P ফসফেটকে ব্যবহার করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার
১. ফসলের পুষ্টিতে
- তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করার মাধ্যমে একটা জমিতে কি পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস আছে সেটা জানা যায়। এতে করে সেই জমিতে আর কতটুকু পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে সেটাও বের করা যায়।
- উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন ও তেজস্ক্রিয় ফসফরাস মূলের মাধ্যমে শোষণ করে বিভিন্ন অংশে দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারে। এসব অংশ থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় যাকে গাইগার মূলার কাউন্টার ব্যবহার করে শনাক্ত ও পরিমাপ করা যায়। এর ফলে বোঝা যায় উদ্ভিদের শরীরের ভেতরে খাদ্য ও পানি পরিবহণের মেকানিজম কতটা ভালো কাজ করছে।
২. ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে
- তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার করে কীটনাশক বানিয়ে তার ব্যবহারের মাধ্যমে জানা যায় সর্বনিম্ন কতটুকু পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হলে সেটা ফসল এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে না।
৩. ফসলের মান উন্নয়নে
- তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল এবং উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন ঘটানো হয়৷ এতে ফসলের জাত উন্নত মানের হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ
যখন তেজস্ক্রিয় পরমাণুকে ভেঙে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুতে পরিণত করা হয় তখন নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া ঘটে এবং প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি তৈরি হয়। এই তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। সেই বাষ্পকে যখন প্রচন্ড গতিতে নির্গত করা হয় তখন বাষ্প বের হবার গতির মাধ্যমে জেনারেটরের সাথে যুক্ত টার্বাইন ঘুরতে থাকে। ফলে জেনারেটর বিদ্যুৎ তৈরি করে। এভাবে সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ভাঙ্গনের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। যেসব পাওয়ার প্ল্যান্টে এই ধরনের পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় তাদেরকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র বলে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আইসোটোপ কাকে বলে
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ
- একমুখী ও উভমুখী বিক্রিয়ার পার্থক্য
- কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ
- তড়িচ্চালক বল (Electromotive Force)
- পদার্থবিজ্ঞানে ক্ষমতা
- পদার্থের শ্রেণীবিভাগ
- পরমাণুর মূল কণিকা
- বিদ্যুৎ প্রবাহ
- বোর পরমাণু মডেল
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- রকেটের গতি (Motion of Rocket)
- রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল
- শক্তি ও শক্তির বিভিন্ন রূপ
- সবুজ রসায়ন কাকে বলে
হেব্বি মজা