ধ্বনিতত্ত্ব

ধ্বনিতত্ত্ব বা ধ্বনি প্রকরণে মূলত ধ্বনি, অক্ষর ও বর্ণ নিয়ে এখানে আলোচনা করবো। তাই শুরুতে ধ্বনি নিয়ে কিছু জিনিস জেনে নেই আমরা।

ধ্বনি মানে-

ভাষার মূল উপাদান,

ভাষার বাহন,

ভাষার মূল,

ভাষার মৌলিক ক্ষুদ্রতম একক,

ভাষার অঙ্গ,

ভাবের উৎস,

মানুষের মুখ নিঃসৃত আওয়াজ যা শোনা যায়

অক্ষর উচ্চারণের কাল পরিমান

শব্দের ক্ষুদ্রতম উপাদান + একক

শব্দকে বিশ্লেষণ করে পাওয়া অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ

 

ধ্বনির প্রকারভেদ

ধ্বনিকে কয়েকটা আঙ্গিকে ভাগ করা যায়। এখানে আমরা সেসব আঙ্গিকগুলোর প্রকারভেদ নিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বুঝবো। সাধারণভাবে ধ্বনি দুই প্রকার-

 

স্বরধ্বনি (Vowel Sound) : যেসব ধ্বনিকে উচ্চারণ করতে গেলে আমাদের বাকযন্ত্রে কোনো বাঁধা পায় না তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। সাধারণভাবে স্বরধ্বনি দুই প্রকার-

a) মৌলিক স্বরধ্বনি : বাংলাভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি থাকে ৭টা, এগুলো হলো-

অ, আ, ই, ঈ, এ, ও, অ্যা।

এদের মধ্যে অ্যা এর উচ্চারণ আছে কিন্তু লিখিত কোনো রূপ নেই। তাই বলা যায় লিখিত মৌলিক স্বরধ্বনি হচ্ছে ৬টা।

b) যৌগিক স্বরধ্বনি / সন্ধিস্বর / দ্বিস্বর / সান্ধ্যস্বর / Diphthong : যেসব স্বরধ্বনি দুটো স্বরধ্বনির সহকারে যুক্ত থাকে তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। দুটো স্বরধ্বনি একে অপরের সাথে ২৫টি উপায়ে যুক্ত হতে পারে, তাই যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টা। এদের মধ্যে ৪টা যৌগিক স্বরের লিখিত রূপ আছে, বাকি ২১টির কোনো লিখিত রূপ নেই।

ঐ এবং ঔ হচ্ছে দুই ধরনের যৌগিক স্বরধ্বনি যাদেরকে ভেঙ্গে ফেললে দুটো মৌলিক স্বরধ্বনি পাওয়া যাবে-

ঐ = অ + ই

ঔ = অ + উ

আরেকটু মনে রাখতে হবে,

মূল স্বরধ্বনি ৯টি – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ও

মূল স্বরধ্বনি না ২টি – ঐ, ঔ

উচ্চারণ কাল অনুসারে স্বরধ্বনি ২ প্রকার-

a) হ্রস্ব স্বর : অল্প সময়ে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা যায় তাদেরকে হ্রস্ব স্বর বলে। যেমন- অ, ই, উ, ঋ।

b) দীর্ঘ স্বর : যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার জন্য বেশি পরিমাণ সময় লাগে তাদেরকে দীর্ঘ স্বর বলে। যেমন- আ, ই, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।

এবার একটা চার্টের মাধ্যমে স্বরধ্বনির সংখ্যাগুলো নিয়ে কনফিউশান দূর করবো-

ধ্বনির নাম

সংখ্যা

ধ্বনি পরিচয়

মৌলিক স্বর

যৌগিক স্বর

হ্রস্ব স্বর

দীর্ঘ স্বর

২৫

অ, আ, ই, ঈ, এ, ও, অ্যা

২১টির লিখিত রূপ নেই

অ, ই, উ, ঋ

আ, ই, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ

 

ব্যাঞ্জন ধ্বনি (Consonant Sound) : যেসব ধ্বনিকে উচ্চারণ করতে গেলে আমাদের বাকযন্ত্রে বাঁধা পায় না তাদেরকে ব্যাঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক, খ, চ, ছ, ট, থ এরা সবাই ব্যাঞ্জন ধ্বনি।

মোট ব্যাঞ্জনধ্বনির সংখ্যা – ৩২টি। কারণ ং, ঃ, ৎ, ঁ, ণ, ষ, য এই ৬টা বর্ণকে ধ্বনি হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। এদের বদলে অন্য কোনো বর্ণকে ব্যবহার করা যায় এবং তাদের উচ্চারণও এদের মত হয়। যেমন কিছু উদাহরণ দেখি-

উচ্চারণ যেমন

উচ্চারণ তেমন

তাবৎ

অহংকার

আঃ

জাই

চাঁদ

ভাষণ

কণা

তাবত

অহঙ্কার

আহ

যাই

চাদ

ভাশন

কনা

৩২ টা ব্যাঞ্জন ধ্বনির মাঝে প্রথম ২৫টা ধ্বনিকে বর্গীয় ধ্বনি / স্পর্শ ধ্বনি / স্পৃষ্ট ধ্বনি / Plosive বলে। তবে আরো কিছু ব্যাঞ্জন ধ্বনি আছে যাদেরকেও এসব বর্গীয় ধ্বনিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম, উচ্চারণের স্থান এবং সাংকেতিক চিহ্ন (বা বর্ণ) আছে। একটা চার্টের মাধ্যমে সেগুলো দেখি-

 

অঘোষ

ঘোষ

ধ্বনির নাম

উচ্চারণ স্থান

অল্প প্রাণ

মহা প্রাণ

অল্প প্রাণ

মহা প্রাণ

নাসিক্য

কন্ঠ

তালব্য

মূর্ধন্য

দন্ত

ওষ্ঠ

জিহ্বা মূল

অগ্রতালু

পশ্চাৎ দন্তমূল

অগ্র দন্তমূল

ওষ্ঠ

এবার কিছু মজার জিনিস লক্ষ করি!

ক এবং খ কে উচ্চারণ করলে যেমন আওয়াজ পাওয়া যায়, হ কে উচ্চারণ করলেও একই আওয়াজ পাওয়া যায়। তাই ক, খ এর মত হ কে কণ্ঠধ্বনি বলে।

জ এর উচ্চারণ যেমন, য এর উচ্চারণ তেমন। আবার য ও য় দেখতেও প্রায় একই রকম। সেজন্য জ এর মত য, য় এরাও তালব্য বর্ণ। ওদিকে শ কে আমরা তালব্য স বলে ডাকি। তাই শ এটিও তালব্যবর্ণ।

ড এবং ঢ এদের মত দেখতে ড় এবং ঢ়। আবার ড় ও ঢ় এর মত উচ্চারণ র এর। সেজন্য ড়, ঢ়, র এরা তিনজন মূর্ধন্যধ্বনি। ওদিকে ষ কে আমরা মূর্ধন্য স বলি। তাই এটিও মূর্ধন্যধ্বনি।

ত এবং ৎ এর উচ্চারণ একই, ন এবং ল এর উচ্চারণও প্রায় একই। তাই ৎ এবং ল এরা দুজনেই ওষ্ঠ্যধ্বনি। মনে রাখতে হবে- শিশুরা প্রথম ওষ্ঠ্যধ্বনি উচ্চারণ করা শেখে।

এখন, বাকি জিনিসগুলো নিয়ে জানি-

অল্পপ্রাণ ধ্বনি : এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর বাতাসের চাপ কম থাকে।

মহাপ্রাণ ধ্বনি : এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর বাতাসের চাপ বেশি থাকে।

নাসিক্য ধ্বনি : এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় নাকের সাহায্য নিতে হয়। আবার, নাসিক্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় যে গুনগুন শব্দ হয় তাকে অনুনাসিক বলে।

অঘোষ ধ্বনি : এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় শব্দটা হালকা শোনায়।

ঘোষ / অনুরনন ধ্বনি : এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় শব্দটা ভারী শোনায়।

এছাড়া আরো কিছু ধ্বনি আছে, সেগুলো নিয়ে জেনে ফেলি-

ঘর্ষণজাত ধ্বনি : ৩টি- শ, ষ, স

ঘৃষ্ট ধ্বনি : ৪টা- চ, ছ, জ, ঝ

উষ্মধ্বনি / শিশ ধ্বনি : ৪টা- শ, ষ, স, হ

অন্তঃস্থ ধ্বনি : বর্গীয় ধ্বনি ও শিশ ধ্বনির মাঝে ব্যবহার করা হয়। এদের সংখ্যা ৪টা- য ব র ল। (মনে রাখবে এভাবে, হ-য-ব-র-ল অবস্থা থেকে হ বাদে বাকি যারা থাকে)

তাড়নজাত ধ্বনি : ২টা- ড়, ঢ়। মনে রাখার সিস্টেম, তাড়ন কথাটাতে ড় আছে।

কম্পনজাত ধ্বনি ও প্বার্শীয় ধ্বনি : মনে রাখার সিস্টেম- করপাল! ক তে কম্পনজাত ধ্বনি = র, পা তে প্বার্শীয় ধ্বনি = ল।

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে-

ং এবং ঙ এর উচ্চারণ একই,

বিসর্গের উচ্চারণ অঘোষ হ এর মতন,

ঋ ধ্বনিকে স্বর ধ্বনি বলা হয় না।

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com

Emtiaz Khan

A person who believes in simplicity. He encourages the people for smart education. He loves to write, design, teach & research about unknown information.