নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ ৪ ধরনের হয়-
১. পলল কোণ ও পলল পাখা
পার্বত্য কোনো এলাকা থেকে হঠাৎ করে কোনো নদীর স্রোত যখন পর্বতের নিচের দিকে নেমে আসে তখন সেই স্রোতের প্রভাবে সেই জায়গায় শিলাচূর্ণ, পলিমাটি ইত্যাদি জমা হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার মত ভূমি তৈরি করে। একে পলল পাখা বা পলল কোণ বলে। তবে পলল পাখা এবং পলল কোণের মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে।
যেসব জায়গায় মাটি বেশি পরিমাণ পানি শোষণ করতে পারে, সেসব জায়গায় পর্বত থেকে পতিত স্রোত প্রশস্ত না হয়ে কোণাকৃতি একটা ভূখন্ড বানিয়ে ফেলে। একে পলল কোণ বলে।
আবার যেসব জায়গায় মাটি বেশি পরিমাণ পানি শোষণ করতে পারে না, সেসব জায়গায় পর্বত থেকে পতিত স্রোত প্রশস্ত হয়ে হাতপাখার মত ভূখন্ড বানিয়ে ফেলে। একে পলল কোণ বলে।
২. পাদদেশীয় পলল সমভূমি
মাঝেমাঝে পাহাড় থেকে পতিত নদীর স্রোত পাহাড়ের নিচের দিকে পড়তে পড়তে সেই জায়গাটায় পলি সঞ্চয় করে বিশাল একটা সমভূমি বানিয়ে ফেলে। একে পাদদেশীয় পলল সমভূমি বলে। বাংলাদেশে তিস্তা, আত্রাই, করতোয়া নদী সংলগ্ন রংপুর, দিনাজপুর জেলার বেশিরভাগ জায়গা পলল সমভূমি নিয়ে গঠিত।
৩. প্লাবন সমভূমি
বর্ষাকালে যখন নদীতে পানির পরিমান বেড়ে যায়, তখন পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর উভয় কুল প্লাবিত হয়। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে নদীর দুপাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তরের কাদা, পলি দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে অনেক দিন পলি জমতে জমতে যে সমভূমির তৈরি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি নদীর কাছাকাছি অঞ্চলগুলো প্লাবন সমভূমি তৈরি করে। এসব সমভূমির মধ্যে অনেক ধরণের সঞ্চয়জাত ভূমি রূপ দেখা যায়, এগুলো হচ্ছে-
a. অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ
b. বালুচর
c. প্রাকৃতিক বাঁধ
৪. ব-দ্বীপ সমভূমি
নদী যখন মোহনার কাছে আসে, তখন স্রোতের বেগ একে বারেই কমে যায়। সেসময় নদীতে কাদা ও বালি তলানিরূপে সঞ্চিত হয়। এসবের পরিমান বাড়তে বাড়তে এক সময় সাগরে নামার পথে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদী তখন বিভিন্ন শাখা তৈরি করে তার পানি গুলোকে সাগরে নামানোর জন্য। এক্ষেত্রে নদীর শাখা এবং বালি সঞ্চিত মোহনার জায়গা একটা ত্রিকোণাকার ভূমি তৈরি করে, এই সমভূমিকে ব-দ্বীপ বলে কারণ এই ভূমিকে দেখতে বাংলা বর্ণ “ব” এর মত কিংবা গ্রিক বর্ণ Delta এর মত দেখায়। বাংলাদেশের সমস্থ দক্ষিণাংশ এই ব-দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।
মনে রাখতে হবে-
নদীর অধিক বিস্তৃত মোহনাকে খাঁড়ি বলে।
দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে দোয়াব বলে।
দুই নদীর মিলনস্থলকে নদী সংগম বলে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- জোয়ার ও ভাটা (High Tide & Low Tide)
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব (Types & Effects of Tides)
- দ্বিগু সমাস
- পদ প্রকরণ
- পানিচক্র (Water Cycle)
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : পর্বত (External Structure of the Earth : Mountains)
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : মালভূমি (External Structure of the Earth : Plateaus)
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : সমভূমি (External Structure of the Earth : Plains)
- প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : স্থানীয় বায়ু (Types of Airflow : Local Winds)
- বায়ুর তাপ, চাপ ও আদ্রতা (Air heat, Pressure & Humidity)
- বারিমণ্ডল (Hydrosphere)
- বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি
- ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন
- সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ (Landforms of the Seafloor)