খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী বা ২৫০০ বছর আগে গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস বলেন “সকল বস্তু অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত”, অর্থাৎ এসব কণাকে আর ভাগ করা যায় না। তিনি তাদের নাম দেন এটম (Atom)। A অর্থ না, tomos অর্থ ভাগ করা। আবার বাংলায় “পরম” শব্দটির অর্থ হচ্ছে অত্যন্ত এবং “অণু” শব্দটির অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র। তাই পরম + অণু = পরমাণু মানে অত্যন্ত ক্ষুদ্র কোনো বস্তু।
ডাল্টনের পরমাণুবাদ
১৮০৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এবং স্কুলশিক্ষক জন ডাল্টন ডেমোক্রিটাসের মতবাদ কে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ডাল্টনের পরমাণুবাদকে আধুনিক রসায়নের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। তাই ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। তবে তার পরমাণুবাদের কিছু ভুল ছিলো। এই ভুলগুলোর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য ভুল হচ্ছে-
“পরমাণুসমূহ অবিভাজ্য।”
কিন্তু বাস্তবে পরমাণুগুলো বিভাজ্য। তাদেরকে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন নামক মৌলিক কণিকা হিসেবে ভাগ করা হয়।
মৌলিক কণিকা
যেসব সূক্ষ্ম কণিকা দিয়ে পরমাণু গঠিত তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলে। পরমাণুতে তিন ধরনের মৌলিক কণিকা থাকে। এরা হলো- ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন।
অণু (Molecule)
যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম এককে অণু বা Molecule বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মৌলিক এবং যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী ক্ষুদ্রতম কণা এই হচ্ছে অণু। যেমন ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে (CaCO3) ভেঙ্গে ফেললে আমরা এর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পাবো যারা অক্সিজেন, ক্যালসিয়াম এবং কার্বন দিয়ে তৈরি। তাই এসব কণাগুলো হচ্ছে অণু। যেকোনো বস্তুর ধর্মকে ধারণ করে অণু।
পরমাণু
মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে পরমাণু বলে। অন্যভাবে বলা যায়, শুধুমাত্র মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী ক্ষুদ্রতম কণাকে পরমাণু বলে। যেমন আমরা যদি কার্বন মৌলকে অনেক ছোট ছোট কণায় পরিণত করি তবে সেই কনা গুলোতে কার্বন বাদে আর কিছুই থাকবে না। তাহলে সেই কণাগুলো হচ্ছে কার্বন পরমাণু।
পরমাণুর গঠন
পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস থাকে এবং নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট প্রোটন এবং চার্জবিহীন নিউট্রন দ্বারা গঠিত। এছাড়া পরমাণুর প্রায় সমস্ত অংশই ফাঁকা থাকে। পরমাণুর সকল ধনাত্মক আধান এবং ভর নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত থাকে। পরমাণুতে ইলেকট্রন নামক আরো এক ধরনের মৌলিক কণিকা থাকে যেটি পরমাণুর সবচেয়ে হালকা মৌলিক কণিকা। তবে এর চার্জ ঋণাত্মক।
নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড 1911 সালে আলফা কণা পরীক্ষার মাধ্যমে পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন। প্রতিটা পরমাণু বৈদ্যুতিকভাবে চার্জ নিরপেক্ষ থাকে কারণ পরমাণুতে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন এবং প্রোটন থাকে। তবে পরমাণু থেকে ইলেকট্রনকে সহজে বের করে আনা গেলেও প্রোটনকে সহজে বের করা যায় না। এছাড়া পরমাণুতে ইচ্ছা করলে ইলেকট্রনকে বাইরে থেকে এনে যুক্ত করা যায় আবার ইলেকট্রনকে পরমানু থেকে টেনে বাইরেও বের করে আনা যায়। পরমাণু থেকে ইলেকট্রনকে সরিয়ে ফেললে সেই পরমাণুটি পজেটিভ চার্জযুক্ত হয় এবং পরমাণুতে ইলেকট্রনকে বাইরে থেকে এনে যুক্ত করলে সেটি নেগেটিভ চার্জযুক্ত হয়।
পরমাণু থেকে ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার প্রধান কারনগুলো হল- ঘর্ষণ, তাপ, রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি। কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শুধুমাত্র পরমাণু অংশগ্রহণ করে, কখনো অণু অংশগ্রহণ করে না।
এবার আমরা পরমাণুর মৌলিক কণিকা গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানবো-
ইলেকট্রন
এটি পরমাণুর ক্ষুদ্রতম এবং ঋণাত্মক আধানযুক্ত মৌলিক কণিকা। এর প্রকৃত ভর- বা, এটির চার্জের মান= -1.6 * 10-11 C. ইলেকট্রনের প্রতীক e এবং এটি আবিষ্কার করেন স্যার জে জে থমসন 1897 সালে। ইলেকট্রনকে পরমাণুর অতি ক্ষুদ্র কণাও বলা হয়।
প্রোটন
একটা হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে একটা ইলেকট্রনকে সরিয়ে নিলে যা থাকে তাকে প্রোটন বলে। তাই প্রোটনের সংকেত হচ্ছে H+ বা p. প্রোটনের ভর- বা , প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক এবং এর মান = +1.6 * 10-19 C. প্রোটনের আবিষ্কারক হচ্ছে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, তিনি 1919 সালে এটিকে আবিষ্কার করেন।
নিউট্রন
নিউট্রনের আধান বা চার্জ নেই, অর্থাৎ এটি চার্জবিহীন। এর প্রতীক হচ্ছে n এবং ভর- বা. নিউট্রনের আবিষ্কারক জেমস চ্যাডউইক। তিনি ১৯৩২ সালে এটিকে আবিষ্কার করেন।
পরমাণুর অন্যান্য কণিকা
পরমাণুতে মৌলিক কণিকা ছাড়াও আরো কিছু ধরনের অস্থায়ী কণিকা থাকে যেমন- নিউট্রিনো, পজিট্রন, ডিউটেরন, এন্টি নিউট্রিনো ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একটা পরমাণুর শক্তি যুক্ত অবস্থায় থাকা পরমাণুর শক্তির চেয়েও বেশি হয়
পরমানুর ইলেকট্রন বিন্যাস (Electron Configuration of Atom)
একটা পরমাণুতে ইলেকট্রন গুলো যেভাবে সজ্জিত বা বিন্যস্ত থাকে তাকে ওই পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস বলে। একাধিক ইলেকট্রন যুক্ত পরমানুতে ইলেকট্রন গুলো কিভাবে সাজানো থাকে তা জানা যায় নীলস বোরের পরমানুবাদ থেকে। তার মতে একটা ইলেকট্রন একটা স্থির শক্তিস্তরে বা কক্ষপথে থেকে নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করে। এসব শক্তি স্তরকে প্রধান শক্তিস্তর বা shell (শেল) বা অরবিট বলা হয়। বোরের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ইলেকট্রন বিন্যাসের মূল বক্তব্য গুলো হচ্ছে-
1. প্রত্যেক পরমাণুতে একাধিক প্রধান শক্তিস্তর থাকে। প্রত্যেক প্রধান শক্তিস্তরকে ১টা সংখ্যা n দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। n এর মান 1, 2, 3… ইত্যাদি হয়ে থাকে।
2. প্রধান শক্তিস্তরগুলো shell নামে পরিচিত। শেল গুলোকে n এর মান কিংবা ইংরেজি বর্ণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যেমন ১ম প্রধান শক্তিস্তরকে (n=1) K শেল, ২য় প্রধান শক্তিস্তরকে (n=2) L শেল, এভাবে ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ প্রধান শক্তিস্তরকে যথাক্রমে M, N, O, P বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
3. পরমানুর নিউক্লিয়াসের সবচেয়ে কাছের শেলটি সবচেয়ে কম শক্তি সম্পন্ন। নিউক্লিয়াস থেকে শেলের দুরত্ব যত বাড়ে শেল তত বেশি শক্তিশালী হয়। ইলেকট্রন সব সময় কম শক্তি সম্পন্ন শেলের মধ্যে থাকতে চায়। তবে ইলেকট্রন যদি শক্তি গ্রহন করে তবে সেটি বেশি শক্তি সম্পন্ন শেলের মধ্যে চলে যায়। আবার ইলেকট্রন থেকে যদি শক্তি বিকিরণ হয় তবে ইলেকট্রন বেশি শক্তি সম্পন্ন শেল থেকে কম শক্তি সম্পন্ন শেলে প্রবেশ করে।
অরবিট
নিউক্লিয়াসের বাইরে ইলেকট্রন যেসব কক্ষপথে ঘোরে তাদেরকে অরবিট বলে।
অরবিটাল
পরমানুর মধ্যে যেসব জায়গায় ইলেকট্রন থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাদেরকে অরবিটাল বলে।
মনে রাখতে হবে,
একটা কক্ষপথে সর্বোচ্চ 2n2 সংখ্যক ইলেকট্রন থাকতে পারে, যেখানে n হচ্ছে শক্তিস্তরের সংখ্যা। যেমন প্রথম শক্তিস্তরের জন্য n = 1, তাই এতে সর্বোচ্চ 2n2 = 2.12 = 2টি ইলেকট্রন থাকতে পারবে।
একইভাবে,
দ্বিতীয় শক্তিস্তরে – 2n2 = 2.22 = 8 টি ইলেকট্রন থাকে,
তৃতীয় শক্তিস্তরে – 2n2 = 2.32 = 18 টি ইলেকট্রন থাকে,
চতুর্থ শক্তিস্তরে – 2n2 = 2.42 = 32 টি ইলেকট্রন থাকে,
পারমাণবিক সংখ্যা (Atomic Number)
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যা কে পারমাণবিক সংখ্যা বলে। একে A দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেকোনো মৌলের বৈশিষ্ট্য এবং স্বতন্ত্রতা এই সংখ্যার উপর নির্ভর করে। যেকোনো মৌলের মৌলিক ধর্মই হচ্ছে পারমাণবিক সংখ্যা। পারমাণবিক সংখ্যা বাড়তে থাকলে নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানের পরিমাণও বাড়তে থাকে।
ভর সংখ্যা বা নিউক্লিয়ন সংখ্যা
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে। একে Z দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন সোডিয়াম পরমাণুতে প্রোটন ১১টি এবং নিউট্রন ১২টি, তাই এর ভর সংখ্যা হবে- ১১ + ১২ = ২৩
নিচে কয়েকটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা এবং ভর সংখ্যা দেখানো হলো-
পারমাণবিক ভর
পারমাণবিক ভর একটি সরল সংখ্যা। একটা পরমাণু একটা কার্বন-১২ পরমাণুর ভরের ১/১২ অংশের তুলনায় কতগুণ ভারী তাকে পারমাণবিক ভর বলে। বিজ্ঞানীরা বর্ণালিবীক্ষণ পদ্ধতিতে নিখুঁতভাবে পরমাণুর ভর নির্ণয় করে থাকেন। পারমাণবিক ভরের কোন একক নেই। জন ডাল্টন সর্বপ্রথম পারমাণবিক ভর এর ধারণা বের করেন।
আণবিক ভর
আণবিক ভর বলতে বোঝায় কোনো পদার্থের একটা অণুর ভর একটা কার্বন-১২ পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় কতগুণ ভারী সেটাকে। ভর বর্ণালিবীক্ষণ পদ্ধতিতে অনুর আনবিক ভর নির্ণয় করা হয়। যেমন পানির সংকেত H2O. অর্থাৎ পানির একটা অণুতে দুইটা হাইড্রোজেন এবং একটা অক্সিজেন পরমাণু থাকে। তাই পানির আণবিক ভর এর পারমাণবিক ভর এর পারমাণবিক ভর-
(হাইড্রোজেনের পারমানবিক ভর * ২) + (অক্সিজেনের পারমানবিক ভর * ১)
= ২ + ১৬
= ১৮
আবার অক্সিজেনের সংকেত হচ্ছে O2. তাই এর একটা অণুতে দুইটা অক্সিজেন পরমাণু আছে। তাই অক্সিজেনের আণবিক ভর হবে-
(অক্সিজেনের পারমানবিক ভর * ২)
= ১৬ * ২
= ৩২
প্রকৃতিতে সবচেয়ে বড় অণু হচ্ছে ফুলারিন বা বাকিবল, যার আণবিক ভর 720.
1932 সালে স্ট্যাম ফ্লেমিং এবং আর্নেস্ট ওয়ালটন পরমাণুকে কৃত্রিম উপায়ে ভাগ করেছিলেন।
কয়েকটা যৌগের অণুতে পরমাণুর সংখ্যা-
HCl – ২টা পরমাণু
H2SO4 – ৭টা পরমাণু
CaCO3 – ৫টা পরমাণু
KMnO4 – ৬টা পরমাণু
O3 – ৩টা পরমাণু
HClO4 – ৬টা পরমাণু
অ্যাভোগেড্রোর সূত্র
একই তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তন বিশিষ্ট সকল গ্যাসে (মৌলিক এবং যৌগিক গ্যাস) সমান সংখ্যক অনু থাকে। কোনো বস্তুর এক মৌলে সমান সংখ্যক অণু থাকে, যার মান- 6.023 * 1023 টি। এই সংখ্যাকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলে এবং একে NA দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
আইসোটোপ
যেসব পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা বা প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলেন। অথবা বলা যায়, পারমাণবিক সংখ্যা একই হবার সত্বেও পরমাণুর নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন হবার ফলে যেসব পরমাণুর ভর কমবেশি হয় তাদেরকে আইসোটোপ বলে। যেমন হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ রয়েছে- প্রোটিয়াম, ডিউটেরিয়াম এবং ট্রিটিয়াম। এদের সবার পারমাণবিক সংখ্যা একই, অর্থাৎ ১ কিন্তু এদের পারমাণবিক ভর যথাক্রমে ১, ২, ৩। যেহেতু এদের ভর ভিন্ন কিন্তু প্রোটন সংখ্যা সমান তাই এরা পরস্পরের আইসোটোপ।
মনে রাখতে হবে প্রোটিয়াম বা হাইড্রোজেন পরমাণুতে কোন নিউট্রন থাকে না, শুধুমাত্র একটা প্রোটন থাকে। তাই এর প্রোটন সংখ্যা 1 এবং ভর সংখ্যা 1.
পারমাণবিক চুল্লিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আইসোটোপ হচ্ছে ইউরেনিয়াম 235.
ডিউটেরিয়াম এর আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় ভারী পানি বানানোর জন্য যার সংকেত D2O. বিজ্ঞানী উড়ে 1966 সালে এটিকে আবিস্কার করেন। পারমাণবিক চুল্লিতে ভারী পানি ব্যবহার করা হয়।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় গামা রশ্মির উৎস হিসেবে আইসোটোপকে ব্যবহার করা হয়।
রেডিও আইসোটোপ
যেসব আইসোটোপ সামান্য সময়ের জন্য কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে তাদেরকে রেডিও আইসোটোপ বলে। কৃষি ক্ষেত্রে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যান্সার, টিউমার নিরাময়ের জন্য এই ধরনের আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে তৈরি আইসোটপের পরিমাণ ১৩০০ এর বেশি।
যে আইসোটোপ আলফা , বিটা , গামা রশ্মি বিকিরণ করে অন্য মৌলের আইসোটোপে পরিণত হয় তাকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার
১. দেহের হাড় বেড়ে যাওয়া ও কোথায় কেন ব্যথা হচ্ছে তা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় – Tc-99m
২. হাড়ের ব্যথার চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয় – 152Sn , 89Sr.
৩. টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয়, ও তা নিরাময়ে এবং ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ব্যবহার করা , এবং খাদ্যের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে খাদ্য সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় 60Co (কোবাল্ট-৬০) আইসোটোপ
৪. থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ -কলা বৃদ্ধি প্রতিহত করে 131I (আয়োডিন-১৩১) আইসোটোপ
৫. রক্তের লিউকোমিয়া রোগের চিকিত্সায় এং উন্নত মানের কৃষি বীজ বা বীজের মানোন্নয়ন ব্যবহৃত হয় 32P (ফসফরাস-৩২) আইসোটোপ
৬. হার্টের পেইসমেকার বসাতে ব্যবহৃত হয় 238Pt (প্লুটোনিয়াম-২৩৮) আইসোটোপ
৭. বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়- 131Cs, 192Ir, 125I, 103Pd, 106Ru আইসোটোপ
৮. পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহার করা হয় কার্বন-১২ (C-14) আইসোটোপ
আইসোবার
কিছু পরমাণুর ভর সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন হলে তাদেরকে আইসোবার বলে। যেমন কপার এবং জিংক এরা পরস্পরের আইসোবার কারণ তাদের দুইজনের ভর 64, কিন্তু তাদের প্রোটন সংখ্যা যথাক্রমে 29 এবং 30, অর্থাৎ ভিন্ন প্রোটন সংখ্যা।
আইসোটোন
যেসব পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর ও প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের আইসোটোন বলে। যেমন সিলিকন, ফসফরাস, সালফার এরা একে অপরের আইসোটোন, কারণ এদের প্রত্যেকের নিউট্রন সংখ্যা হচ্ছে ১৬।
আইসোমার
যেসব পরমাণুর প্রোটন এবং ভর সংখ্যা সমান কিন্তু অভ্যন্তরীণ গঠন ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের আইসোমার বলে।
মনে রাখতে হবে, iso শব্দটির মানে হচ্ছে একই।
মনে রাখার টেকনিক-
আইসোটোপ শব্দের শেষে “প” আছে, তাই এতে প্রোটন সংখ্যা সমান। আইসোবার শব্দের শেষে “ব” আছে, তাই এতে ভর সংখ্যা সমান। আইসোটোন শব্দের শেষে “ন” আছে, তাই এতে প্রোটন সংখ্যা সমান।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অণু ও পরমাণু (Molecules and Atoms)
- আইসোটোপ (Isotope)
- আইসোটোপের পারমাণবিক ভর (Atomic Mass of Isotope)
- আয়নিক বন্ধন (Ionic bond)
- গ্রাম পারমাণবিক ভর, গ্রাম আণবিক ভর ও মোল (Gram Atomic Mass, Gram Molecular Mass and Mole)
- ডালটনের পারমাণবিক মতবাদ (Dalton’s Atomic Theory)
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ (Electron theory Relating Electricity)
- থমসন পরমাণু মডেল (Thomson Atomic Model)
- পরমাণুতে ইলেকট্রনের অবস্থান (The position of Electrons in Atoms)
- পরমাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন সংখ্যার সম্পর্ক (Relation of number of Protons, Electrons and Neutrons in an Atom)
- পরমাণুর উপশক্তিস্তর (Atomic Substratum)
- পরমাণুর গঠন (Structure of Atom)
- পরমাণুর শক্তির পাল্লা (Energy Band of Atom)
- পরমাণুর শক্তিস্তর (Energy Shell of Atom)
- পারমাণবিক ভর ও আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Atomic Mass and Relative Atomic Mass)