পারমাণবিক ভর বলতে বোঝায় কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটন এবং নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে। যেহেতু প্রোটন এবং নিউট্রন সংখ্যা পূর্ণ সংখ্যা হয়, তাই বলা যায় পরমাণুর ভর সংখ্যাও একটি পূর্ণ সংখ্যা হবে। কিন্তু তার পরেও কিছু কিছু পরমাণুর ভর যেমন ক্লোরিনের পারমাণবিক ভর ৩৫.৫, কপারের পারমাণবিক ভর ৬৩.৫ হয়। এটি কেনো হয় তার একটা কারণ আছে!
তোমরা যদি একদম সুক্ষ্ণভাবে কোনো পরমাণুর ভর মেপে বের করতে যাও, তবে তার মান অনেক অনেক কম হয়। কোনো মৌলের একটা পরমাণুর ভর অনেক ছোট বলে একে পরিমাপ করা হয় ভর বর্ণালীবিক্ষণ পদ্ধতিতে। যেমন-
ফ্লোরিনের একটা পরমাণুর ভর – 3.16 x 10-23 gm
অ্যালুমিনিয়ামের একটা পরমাণুর ভর – 4.482 x 10-23 gm
কিন্তু খেয়াল করো, এত কম ভরকে ব্যবহার করলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। কেননা তুমি কিন্তু চাইলেও এত এত মৌলের পরমাণুর ভরকে মুখস্ত করতে পারবে না। তাই একদম শুরুতে হাইড্রোজেন স্কেল ব্যবহার করে পরমাণুর ভরকে বের করা হতো। এক্ষেত্রে-
হাইড্রোজেনের একটা পরমাণুর ভর = 0.1673 x 10-23 gm
হাইড্রোজেন স্কেলের সিস্টেম ছিলো এমন, একটা পরমাণুর ভরের তুলনার অন্য কোনো পরমাণুর ভর কতগুন বেশি সেটা বের করা হতো। যেমন, কার্বনের একটা পরমাণুর ভর = 1.9924 x 10^-23 gm, এখন যদি এটাকে হাইড্রোজেন পরমাণুর ভরের সাপেক্ষে বের করতে যাই তবে তার মান হবে-
1.9924 x 10-23 gm / 0.1673 x 10-23 gm
= 11.909
~ 12
অর্থাৎ, কার্বনের একটা পরমাণুর ভর হাইড্রোজেনের একটা পরমাণুর ভরের তুলনায় ১২ গুণ বেশি। এভাবে হাইড্রোজেন স্কেলকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন পরমাণুর পারমাণবিক ভরকে বের করা হতো।
হাইড্রোজেন স্কেলের পর ব্যবহার করা হতো অক্সিজেন স্কেল, যেখানে অক্সিজেনের একটা পরমাণুর ভরের তুলনায় অন্য কোনো মৌলের পরমাণুর ভর কতগুণ বেশি সেটা বের করা হতো। এক্ষেত্রে অক্সিজেনের একটা পরমাণুর ভর = 2.6560 x 10-23 gm
কিন্তু তারপরে ১৯৬১ সালে IUPAC একটা সম্মেলন করে যেখানে পারমাণবিক ভর নির্ণয়ের একটা স্কেল এবং একক তৈরি করা হয়। তাই আমরা যদি এরকম কোনো একটা মৌলের পরমাণুর ভরকে রেফারেন্স ধরে বাকিদের ভরকে বের করতে পারি, তবে তাদের মান মনে রাখা আমাদের জন্য সুবিধার হবে।
সেজন্য গবেষকরা কার্বনের দুটো আইসোটোপ C-12 ও C-13 এর মধ্যে C-12 এর পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভরকে রেফারেন্স হিসেবে ধরেছেন। এক্ষেত্রে কার্বনের একটা পরমাণুর ভর = 1.9924 x 10-23 gm এবং কার্বন পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভর = 1.6605 x 10-24 gm। এই ভরকে 1 Atomic Mass Unit বা 1 amu বলে। অর্থাৎ-
1 amu = 1.6605 x 10-24 gm
তাই,
যেকোনো মৌলের পরমাণবিক ভর বা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর হচ্ছে = ঐ মৌলের একটা পরমাণুর ভর / কার্বন পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভর
এখন কথা হচ্ছে, যখন কোনো মৌলের পারমাণবিক ভর বা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বের করা হয় তখন দুটো ভরকে ভাগ করা হয় বলে তাদের যে একক থাকে যেমন gm, kg এগুলো কাটাকাটি যায়। ফলে পারমাণবিক ভর বা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরের কোনো একক থাকে না।
যেমন আমরা হাইড্রোজেনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বের করতে গেলে সেটার মান হবে-
হাইড্রোজেনের একটা পরমাণুর ভর / কার্বন পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভর
= 0.1673 x 10-23 gm / 1.6605 x 10-24 gm
= 1
আবার অক্সিজেনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর-
অক্সিজেনের একটা পরমাণুর ভর / কার্বন পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভর
= 2.6560 x 10-23 gm / 1.6605 x 10-24 gm
= 8
ফ্লোরিনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর-
ফ্লোরিনের একটা পরমাণুর ভর / কার্বন পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের ১ ভাগ অংশের ভর
= 3.16 x 10-23 gm / 1.6605 x 10-24 gm
= 19
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- আইসোটোপের পারমাণবিক ভর
- আপেক্ষিক রোধ কাকে বলে
- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে
- গ্রাম পারমাণবিক ভর, গ্রাম আণবিক ভর ও মোল
- ডালটনের পারমাণবিক মতবাদ
- তাপধারণ ক্ষমতা ও আপেক্ষিক তাপ
- পরমাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন সংখ্যার সম্পর্ক
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- পরিবাহিতা, আপেক্ষিক পরিবাহিতা ও অতিপরিবাহিতা
- পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য
- বর্ণালী কি
- যৌগের আণবিক সংকেত হতে শতকরা সংযুতি গণনা
- রাসায়নিক ক্রিয়া বা বিক্রিয়া
- রাসায়নিক সংযোগ সূত্রসমূহ
- রোধের সূত্র ও আপেক্ষিক রোধ
Such great website
Amazing blog thanks for sharing today on this blog