পৃথিবীর গতি কত প্রকার

পৃথিবীর গতি কত প্রকার ও আহ্নিক গতি

তোমাকে জানতে হবে পৃথিবীর গতি কত প্রকার এর সহজ উত্তর হচ্ছে দুই প্রকার। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার ওপর পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। পৃথিবীর এই গতিকে আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি বলে। নিজ মেরু রেখার উপর চারদিকে একবার সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময়, অর্থাৎ প্রায় ২৪ ঘণ্টা। এই ২৪ ঘন্টাকে একদিন হিসেবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর একটি পূর্ণ আবর্তনের সময়কে এক সৌর দিন (Solar Day) বলে।

নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ সবচেয়ে বেশি, ঘন্টায় ১৬১০ কিলোমিটারের বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে এই গতিবেগ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে গতিবেগ শূন্যের কাছাকাছি হয়। পৃথিবীর মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত এবং মেরু অঞ্চল কিছুটা চাপা। কোনো নমনীয় বস্তু তার অক্ষের চারদিকে ঘুরতে থাকলে এমনটা হয়। বিজ্ঞানী নিউটন বলেছিলেন, পৃথিবীর আবর্তনের ফলে এর আকৃতি এমন হয়েছে।

আহ্নিক গতির ফল

a. দিন এবং রাত সংগঠন : পর্যায়ক্রমে দিন এবং রাত সংঘটিত হওয়া আহ্নিক গতির একটি ফল। আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর অর্ধেক অংশে চিরকাল দিন থাকত এবং বিপরীত অংশে চিরকাল রাত থাকতো। অর্থাৎ পৃথিবীর কোনো একটা নির্দিষ্ট স্থানে সবসময় দিন থাকতো এবং অপর একটি স্থানে সবসময় রাত থাকতো। পৃথিবীর এই আলোকিত অংশ ও অন্ধকার অংশের সীমারেখাকে ছায়াবৃত্ত (The Shadow Circle) বলে।

আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর যে অংশ অন্ধকার থেকে ছায়াবৃত্ত পার হয়ে সবেমাত্র আলোকিত অংশে পৌঁছায় সে অংশকে বলা হয় প্রভাত। আর যে অংশ আলোকিত অংশ থেকে ছায়াবৃত্ত অতিক্রম করে সবেমাত্র অন্ধকার অংশে পৌঁছায় সে অংশকে বলা হয় সন্ধ্যা। প্রভাতের কিছুক্ষণ পূর্বে যে অল্প আলো দেখতে পাওয়া যায় তাকে বলা হয় ঊষা (Dawn), আর সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বে যে অল্প আলো থাকে সেই সময়কে বলা হয় গোধূলি (Twilight)। গোধূলি এবং রাতের মধ্যবর্তী সময়কে Dusk বলে।

b. সমুদ্রস্রোত, জোয়ার ভাটা ও বায়ুপ্রবাহ : পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। আহ্নিক গতি সমুদ্রস্রোত ও বায়ুপ্রবাহকে উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে দেয়।

পৃথিবীর গতি কত প্রকার

পৃথিবীর গতি কত প্রকার ও বার্ষিক গতি

পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে যে সময় ধরে এটি সূর্যকে পুরো একবার অতিক্রম করে তাকে বার্ষিক গতি বলে। এর আরেক নাম পরিক্রমণ গতি। পৃথিবীর গতি কত প্রকার এর এক প্রকার হচ্ছে এই বার্ষিক গতি। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। নিজ কক্ষপথে একবার সূর্যকে ঘুরে আসতে পৃথিবীর মোট সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। যে সময়ে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসে সেই সময়কে বলা হয় এক সৌর বছর (Solar Year)। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গড় গতিবেগ ১৮.৫ মেইল প্রতি সেকেন্ড।

অনুসূর (Perihelion)

পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে ঘুরে আসতে গিয়ে জানুয়ারির ১ থেকে ৩ তারিখে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছায় যখন সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে। একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে।

অপসূর (Aphelion)

পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে ঘুরে আসতে ১ থেকে ৩ বা ৪ জুলাই তারিখে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছায় যেখানে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে।

বার্ষিক গতির ফল

১. ঋতু পরিবর্তন : তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে সারা বছরকে চারটা ভাগে ভাগ করা হয়। এই প্রতিটা ভাগকে একেকটি ঋতু বলা হয়। এগুলো হচ্ছে-

গ্রীষ্ম কাল, শরৎকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।

২. দিন-রাতের দৈর্ঘ্যের বাড়া-কমা : নিরক্ষরেখায় সারাবছর দিন-রাত সমান থাকে, কিন্তু বার্ষিক গতির কারণে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন-রাতের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।

উত্তর গোলার্ধের ক্ষেত্রে –

২১ জুন : দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত থাকে

২২ ডিসেম্বর : ক্ষুদ্রতম দিন এবং দীর্ঘতম রাত থাকে

দক্ষিণ গোলার্ধের ক্ষেত্রে –

২১ জুন : ক্ষুদ্রতম দিন এবং দীর্ঘতম রাত থাকে

২২ ডিসেম্বর : দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত থাকে

২১ মার্চ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সব জায়গায় দিন রাত সমান থাকে। তাহলে এসব আলোচনা থেকে বোঝা গেলো পৃথিবীর গতি কত প্রকার।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool