বর্ণমালা (Alphabet)
বর্ণ বলতে যেসব জিনিস বোঝায়-
ধ্বনির লিখিত রূপ যা চোখে দেখা যায়
ধ্বনির সাংকেতিক চিহ্ন + নির্দেশক চিহ্ন
প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় সাধারণভাবে দুটো বর্ণ থাকে-
a) স্বরবর্ণ : এদের মোট সংখ্যা ১১টি, যেমন- অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ, ঋ। এরা আবার দুই প্রকার-
মৌলিক স্বরবর্ণ – ৬টি, যেমন : অ, আ, ই, এ, উ, ও (কনফিউশন দূর করি : মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি, ধ্বনির প্রকারভেদটা আবার পড়ে দেখো)।
যৌগিক স্বরবর্ণ – ২টি, ঐ এবং ঔ। (কনফিউশন : যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টা, ধ্বনির প্রকারভেদটা আবার পড়ে দেখো)
কার
স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কার বলে। এর সংখ্যা ১০টি। এদের মধ্যে-
ব্যাঞ্জন বর্ণের পর যুক্ত হয় দুটি : আ-কার ও ঈ-কার। যেমন- সাইফা, নারী।
ব্যাঞ্জন বর্ণের আগে যুক্ত হয় তিনটি : ই-কার, এ-কার, ঐ-কার। যেমন- মিনা, বেলা, তৈল।
ব্যাঞ্জন বর্ণের নিচে যুক্ত হয় তিনটি : উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার। যেমন- বুড়ো, ভূমিকা, কৃষক।
ব্যাঞ্জন বর্ণের আগে ও পরে দুই জায়গায় একইসাথে যুক্ত হয় দুটি : ও-কার, ঔ-কার। যেমন- কোমল, যৌবন।
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে অ এর কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ নেই। এটি ব্যাঞ্জন বর্ণের শেষে মিশে যায় বলে একে লীন বা নিলীন বর্ণ বলে।
b) ব্যাঞ্জনবর্ণ : এদের মোট সংখ্যা ৩৯টি। চলো এদেরকে দেখে ফেলি-
উচ্চারণের রীতি অনুসারে ব্যাঞ্জনবর্ণ দুইভাবে দুই প্রকার। প্রকারগুলো হচ্ছে-
1) অঘোষ বর্ণ এবং 2) ঘোষ বর্ণ
এবং, 1) অল্প প্রাণ বর্ণ এবং 2) মহাপ্রাণ বর্ণ
আমরা ইতোমধ্যে এই চার প্রকারের বর্ণগুলোকে “ধ্বনি তত্ত্ব” লেখাতে ধ্বনি হিসেবে একটা চার্টে দেখেছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে এদেরকে যখন লিখা হয় তখন এদেরকে বর্ণ নামে ডাকি আমরা। তাই একই চার্ট থেকে এবার বর্ণ হিসেবে পরিচয়টা জেনে নাও-
|
অঘোষ |
ঘোষ |
||||
বর্ণের নাম |
উচ্চারণ স্থান |
অল্প প্রাণ |
মহা প্রাণ |
অল্প প্রাণ |
মহা প্রাণ |
নাসিক্য |
ক বর্গীয় চ বর্গীয় ট বর্গীয় ত বর্গীয় প বর্গীয় |
জিহ্বা মূল অগ্রতালু পশ্চাৎ দন্তমূল অগ্র দন্তমূল ওষ্ঠ |
ক চ ট ত প |
খ ছ ঠ থ ফ |
গ জ ড দ ব |
ঘ ঝ ঢ ধ ভ |
ঙ ঞ ণ ন ম |
তিন ধরনের ব্যাঞ্জনবর্ণ আছে, যাদের সাথে কখনোই স্বরবর্ণ যুক্ত হতে পারে না- ং, ঃ, ঁ। তবে বাকি ৩৬টি ব্যাঞ্জন বর্ণের সাথে স্বরবর্ণ যুক্ত হতে পারে। যেমন-
গ = গ্ + অ
কি = ক্ + ই
ফলা
ব্যাঞ্জন বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলে। এর সংখ্যা ৬টি। এদের মধ্যে-
য ফলা (্য) : সহ্য, দাহ্য
ব ফলা : ক্বাবা, হজ্ব
ল ফলা : অম্ল, ব্লক
ম ফলা : মহাত্মা, পদ্ম
ন ও ণ ফলা : অপরাহ্ণ (ণ), মধ্যাহ্ন (ন), তৃষ্ণা (ণ)
বর্ণের মাত্রা
বাংলা বর্ণমালায় কোনো কোনো বর্ণের উপরে রেখা টানা হয়, একে মাত্রা বলে। তিন ধরনের মাত্রা দেখা যায় বর্ণমালাতে। এরা হচ্ছে-
পূর্নমাত্রা : ই, উ, ক, চ, ট
অর্ধমাত্রা : ঋ, গ, ণ, প, ধ
মাত্রাহীন : এ, ও, ঞ, ঙ, ং
এবার একটা চার্ট দেখে ফেলি যেখান থেকে জানতে পারবো বাংলা বর্ণমালায় কয়টা করে পূর্ণমাত্রা, অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণ রয়েছে।
বর্ণ |
সংখ্যা |
স্বরবর্ণ |
ব্যাঞ্জন বর্ণ |
পূর্ণ মাত্রা অর্ধ মাত্রা মাত্রাহীন |
৩২ ৮ ১০ |
৬ ১ ৪ |
২৭ ৭ ৬ |
এখানে, অর্ধমাত্রা ও পূর্ণমাত্রা নিয়ে মোট মাত্রা যুক্ত বর্ণ : ৩২ + ৮ = ৪০ টি।
এবার বর্ণকে নিয়ে নতুন কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে-
পরাশ্রয়ী বর্ণ / অধীন বর্ণ : ৩টি- ং, ঃ, ঁ। এদেরকে কখনোই স্বাধীন বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
অযোগবাহ বর্ণ : ২টা- ং, ঃ।
বাংলা বর্ণমালা গুলো সংস্কৃত ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
বাংলা ভাষায় ৪৫টা বর্ণকে পূর্ণরূপে ব্যবহার করা হয়।
বাংলা ভাষায় স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারিত হয় না- খন্ড ত বা ৎ। এটির মানে হচ্ছে ত + হসন্ত চিহ্ন বা ত্।
উচ্চারণে পার্থক্য নেই দুটো বর্ণে – ঙ এবং ং এর।
৪টা বর্ণ কখনোই শব্দের প্রথমে আসে না, শব্দের মাঝে কিংবা শেষে আসে। এরা হচ্ছে ণ, ং, ঞ, ঃ।
অক্ষর (Syllable)
কোনো শব্দের একটা অংশ উচ্চারণ করতে বাকযন্ত্রের মাত্র একবার ব্যবহার হয় তাকে অক্ষর বলে। যেমন কতগুলো শব্দকে দেখি আমরা-
লবণ = উচ্চারণের সময় লব + অন এই দুটো অক্ষর ব্যবহার করে উচ্চারণ করা হয়। তাই এতে অক্ষর সংখ্যা দুটি।
রবীন্দ্রনাথ = উচ্চারণের সময় র + বীন + দ্র + নাথ এই ৪টা অক্ষর ব্যবহার করে উচ্চারণ করা হয়। তাই এতে অক্ষর সংখ্যা ৪টা।
নজরুল = উচ্চারণের সময় নজ + রুল এই দুটো অক্ষর ব্যবহার করে উচ্চারণ করা হয়। তাই এতে অক্ষর সংখ্যা দুটি।
মনে রাখতে হবে-
বাংলা অক্ষরের প্রথম নকশা তৈরি করেন- চার্লস উইলকিন্স
বাংলা অক্ষরের আধুনিক রূপ দেন- পঞ্চানন কর্মকার
প্রকারভেদ
অক্ষর দুই প্রকার-
a) স্বরান্ত / মুক্তাক্ষর : এসব অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। যেমন- চলো (ও উচ্চারিত), আশা (আ উচ্চারিত), বাড়ি (ই উচ্চারিত)।
b) ব্যাঞ্জনান্ত / বদ্ধাক্ষর : এসব অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না। যেমন- চল, বল, কর, নাচ, শীতল।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com