আলো এক প্রকার বিকীর্ণ শক্তি তরঙ্গ। এ বিকীর্ণ শক্তি তরঙ্গ সৃষ্টি করে এবং স্পন্দন সহকারে উৎস থেকে সর্বদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আলোর গতিবেগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। শূন্যে আলোর বেগ সেকেন্ডে প্রায় 2.9979 × 108 m (সংক্ষেপে 3 × 108 m বা, 3 x 1010 cm)। আলোক শক্তি তরঙ্গ হওয়ায় আলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও স্পন্দন সংখ্যা বা কম্পাঙ্ক বা ফ্রিক্যুয়েন্সি (frequency) রয়েছে, যা নিম্নরূপে পরস্পরের সাথে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে থাকে।
nλ = v (শব্দের বেগ), এখানে λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
vλ= c (আলোর বেগ)
স্পন্দন সংখ্যা বা কম্পাঙ্ককে আলোর বেলায় v (‘নিউ’ উচ্চারণ) দ্বারা ও শব্দের বেলায় n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অবশ্য আলোর বেলায় v এর মান খুব বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তাকে c দ্বারা ভাগ করে v (‘নিউ-বার’) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
V = v ÷ c
= v ÷ v λ
= 1 ÷ λ
v প্রকৃতপক্ষে প্রতি সেন্টিমিটারে তরঙ্গ-সংখ্যা প্রকাশ করে। এ কারণে v কে তরঙ্গ-সংখ্যা (wave number) বলা হয়।
আলোক শক্তি তরঙ্গ নিজে অদৃশ্য, কিন্তু যে আলোক অন্য বস্তুকে দৃশ্যমান করে, তাকে দৃশ্যমান আলো বলে। এ দৃশ্যমান আলো ছাড়াও আরো অনেক অদৃশ্য আলো আছে। যেমন, গামা রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, অবলোহিত রশ্মি, রেডিও ও টেলিভিশনের তরঙ্গ প্রভৃতি। এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এদের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও ফ্রিক্যুয়েন্সি বা স্পন্দন সংখ্যায়।
বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল (Maxwell) প্রমাণ করেন যে, সব ধরনের দৃশ্য ও অদৃশ্য আলোর উৎপত্তি বিদ্যুৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে হয়। এজন্য সব ধরনের আলোককে একত্রে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ রশ্মি বলা হয়। দৃশ্যমান আলো হল বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ রশ্মির সামান্য অংশ মাত্র। সমগ্র বিকিরণ শক্তির অধিকাংশই অদৃশ্য। বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য (একক ন্যানোমিটারে nm = 10-9m) নিচে দেয়া হল-
মহাজাগতিক রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য : < 0.00005 nm
গামা রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য : 0.0005 – 0.15 nm
রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য : 0.01 – 10 nm
অতিবেগুনি রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য : < 380 nm
দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য অবলোহিত আলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য : 380 – 700 nm
অবলোহিত আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য : >700 nm
রেডিও ও টেলিভিশন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য : > 2.2 x 105 nm
দৃশ্যমান আলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গুলো জেনে নেই এবার-
বেগুনি : 380 – 424 nm
নীল : 424 – 450 nm
আসমানী : 450 – 500 nm
সবুজ : 500 – 575 nm
হলুদ : 575 – 590 nm
কমলা : 590 – 647 nm
লাল : 647 – 700 nm
বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও স্পন্দন সংখ্যা নিচের ছবিতে স্কেল আকারে দেয়া হল-
আমরা মহাজাগতিক রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দেখেছি যা অনেক কম। এই রশ্মি প্রধানত H ও He এর নিউক্লিয়াস যা অত্যন্ত শক্তিশালী। নক্ষত্রের বিস্ফোরণ (সুপারনোভা) থেকে এদের সৃষ্টি। উল্লেখ্য নক্ষত্রের অভ্যন্তরে নিউক্লীয় বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন শক্তিই নক্ষত্রের সাম্যাবস্থার সংরক্ষক। নিউক্লীয় বিক্রিয়া বন্ধ হলে মহাকর্ষ বলের প্রবল চাপে নক্ষত্রের কেন্দ্রস্থল আকস্মিক সঙ্কুচিত হয়ে এর তাপমাত্রা 109K এর অনেক বেশি হয়। তখন প্রচণ্ড শক্ তরঙ্গ (Shock-wave) সৃষ্টির ফলে নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয়, তাকে সুপারনোভা বলা হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আদর্শ গ্যাস সমীকরণের বিভিন্ন রূপ ও ব্যবহার
- কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ
- কোয়ান্টাম তত্ত্ব কি
- গ্যাসের বিভিন্ন প্রকারের আণবিক গতিবেগ
- তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ
- তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- বর্ণালী কি
- বিভিন্ন এককে মোলার গ্যাস ধ্রুবক R এর মান গণনা
- বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- বোর পরমাণু মডেল
- মোলার গ্যাস ধ্রুবকের মাত্রা ও তাৎপর্য
- শক্তি ও শক্তির বিভিন্ন রূপ