বিশেষণ পদ

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা এবং পরিমাণ প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে।

প্রকারভেদ

এই পদ দুই ধরনের-

১. নাম বিশেষণ (যাকে ইংরেজিতে Adjective বলে)

২. ভাব বিশেষণ (যাকে ইংরেজিতে Adverb বলে)

নাম বিশেষণ আবার দুই ধরনের-

a) বিশেষ্যের বিশেষণ

b) সর্বনামের বিশেষণ

ভাব বিশেষণ চার ধরনের-

a) ক্রিয়া বিশেষণ

b) বিশেষণের বিশেষণ

c) অব্যয়ের বিশেষণ

d) বাক্যের বিশেষণ

 

নাম বিশেষণ পদ

যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদকে মডিফাই করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। এর প্রকারভেদ গুলো হলো-

a) বিশেষ্যের বিশেষণ

যে পদ কোনো বিশেষ্য (Noun) পদকে মডিফাই করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে। যেমন-

নীল আকাশ।

এখানে নীল হচ্ছে বিশেষণ, আর আকাশ হচ্ছে বিশেষ্য পদ। বিশেষণ নীল এখানে বিশেষ্য পদ আকাশের অবস্থা বোঝাচ্ছে, তাই নীল হচ্ছে এখানে বিশেষ্যের বিশেষণ। আবার-

সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে?

এখানে সুস্থ-সবল হচ্ছে বিশেষণ, আর দেহ হচ্ছে বিশেষ্য পদ। সুস্থ-সবল বিশেষণটি দেহ বিশেষ্য পদের অবস্থা বোঝাচ্ছে, তাই সুস্থ-সবল পদটি হবে বিশেষ্যের বিশেষণ।

b) সর্বনামের বিশেষণ

যে পদ সর্বনাম পদকে মডিফাই করে তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে। যেমন-

সে ভালো। 

এখানে ভালো বিশেষণ, আর এটি সে সর্বনাম পদের অবস্থা বোঝাচ্ছে। তাই ভালো পদটি হবে সর্বনামের বিশেষণ। 

সে রূপবান ও গুণবান।

এখানে রূপবান ও গুণবান দুটি শব্দ হচ্ছে বিশেষণ, আর সে হচ্ছে সর্বনাম পদ। এই দুটি বিশেষণ পদ সর্বনাম পদের সে এর অবস্থা বোঝাচ্ছে। তাই রুপবান ও গুণবান পদটি হবে সর্বনামের বিশেষণ। 

নাম বিশেষণের প্রকারভেদ

আমাদের এখন কতগুলো নাম বিশেষণের প্রকারভেদ সম্পর্কে খুব ভাল আইডিয়া থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে –

১. রূপ বা বৈশিষ্ট্য : নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ, কালো পোশাক, সবুজ গাছ, হলুদ পাখি, লাল জামা।

২. দোষ ও গুণবাচক : চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হাওয়া, সৎ লোক, খারাপ বন্ধু, গরম জল, চালাক ছেলে, ঠান্ডা কফি।

৩. অবস্থান বাচক : তাজা মাছ, রোগা ছেলে, খোঁড়া পা, মুমূর্ষু রোগী।

৪. সংখ্যাবাচক : হাজার লোক, দশ দশা, শ টাকা, দুইজন লোক। 

৫. ক্রমবাচক : দশম শ্রেণী, প্রথমা কন্যা।

৬. পরিমাণবাচক : বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ, এক কেজি চাল, দুই কিলোমিটার রাস্তা, বিশাল মাঠ, অর্ধেক রুটি, এক কেজি চিড়া।

৭. অংশবাচক : অর্ধেক সম্পত্তি, ষোলো আনা দখল, সিকি পথ। 

৮. উপাদান বাচক : বেলে মাটি, মেটে কলসি, পাথুরে মূর্তি, স্বর্ণময় পাত্র।

৯. প্রশ্নবাচক : কত দূর পথ? কেমন অবস্থা? কেমন মানুষ?

১০. নির্দিষ্টতা : এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ, সেই সময়।

ভাব বিশেষণ পদ

a) ক্রিয়া বিশেষণ

যে পদ ক্রিয়া সংগঠনের ভাব, কাল বা রূপকে নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। এক কথায় যে সকল বিশেষণ বাক্যে থাকা ক্রিয়াকে মডিফাই করে তাদেরকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন-

রকেট দ্রুত চলে।

এখানে দ্রুত বিশেষণ পদ এবং চলে ক্রিয়াপদ। দ্রুত বিশেষণ পদটি দ্বারা চলে ক্রিয়াপদের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে। তাই দ্রুত পদটি হচ্ছে ক্রিয়া বিশেষণ। এরকম আরো কিছু উদাহরণ হচ্ছে-

ধীরে ধীরে বায়ু বয়।

সেদিন তোমার দেখা পাইনি। 

সাইফা ধীরে ধীরে আসে। 

পরে একবার এসো। 

আমার সামনে দাঁড়াও।

হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে।

b) বিশেষণের বিশেষণ বা বিশেষণীয় বিশেষণ

যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে মডিফাই করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন-

রকেট অতি দ্রুত চলে। 

এখানে অতি বিশেষণ পদ, আবার দ্রুত বিশেষণ পদ। যেখানে অতি বিশেষণ পদটি দ্রুত বিশেষণ পদের অবস্থা বোঝাচ্ছে। তাই অতি পদটি হবে বিশেষণের বিশেষণ। এরকম আরও উদাহরণ হচ্ছে-

সামান্য একটু দুধ দাও। 

এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত। 

c) অব্যয়ের বিশেষণ

যে বিশেষণ অব্যয় পদ কিংবা অব্যয় পদের অর্থকে মডিফাই করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন-

ধিক্ তারে, শতধিক্ নির্লজ্জ যে জন।

d) বাক্যের বিশেষণ

কখনো কখনো কোনো পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে মডিফাই করতে পারে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলে। সহজ কথায়, বাক্যের শুরুতে যদি-

বাস্তবিকই, দুর্ভাগ্যক্রমে, সৌভাগ্যক্রমে, ঘটনাক্রমে, ক্রমে ক্রমে, দুর্ভাগ্যবশত, সৌভাগ্যবশত

-ইত্যাদি শব্দগুলো থাকে, তবে এই শব্দগুলো বাক্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সেজন্য এই শব্দগুলো হচ্ছে বাক্যের বিশেষণ। যেমন-

দুর্ভাগ্যক্রমে, দেশ আবার বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে,

বাস্তবিকই, আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রম করা প্রয়োজন।

একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণ

বাংলা ভাষায় একই পদে বিশেষ্য এবং বিশেষণ দুটো একসাথে ব্যবহার হতে পারে। এগুলোর কতগুলো উদাহরণ দেখি-

ভালো

বিশেষণ রূপ : ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন, সাইফা ভালো মেয়ে।

বিশেষ্য রূপে : আপন ভালো সবাই চায়।

মন্দ

বিশেষণ রূপে : মন্দ কথা বলতে নেই

বিশেষ্য রূপে : এখানে কী মন্দটা তুমি দেখলে?

পুণ্য

বিশেষণ রূপে : তোমার এই পুণ্য প্রচেষ্টা সফল হোক।

বিশেষ্য রূপে : পুণ্যে মতি হোক।

নিশীথ

বিশেষণ রূপে : নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি।

বিশেষ্য রূপে : গভীর নিশীথে প্রকৃতি থাকে নীরব।

শীত

বিশেষণ রূপে : শীতকালে কুয়াশা পড়ে।

বিশেষ্য রূপে : শীতের সকালে চারদিকে কুয়াশার অন্ধকার থাকে।

সত্য

বিশেষণ রূপে : সত্য পথে থেকে সত্য কথা বলে।

বিশেষ্য রূপে : এ এক বিরাট সত্য!

ঠান্ডা

বিশেষণ রূপে : ঠান্ডা দুধ টুকু খেয়ে নিও। 

বিশেষ্য রূপে : সে বেশি ঠান্ডা সইতে পারে না। 

নির্ধারক বিশেষণ পদ

দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তখন তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন-

রাশি রাশি ভারা ভারা ধান, 

লাল লাল কৃষ্ণচূড়া গাছে ভরে গেছে, 

নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে গেছে,

এত ছোট ছোট উত্তর লিখলে হবে না।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool