পৃথিবীতে যা কিছু আছে যদি তার নাম দেওয়া হয় তবে কেবল ওই নামটি বিশেষ্য পদ হবে। অর্থাৎ কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে। বিস্তারিত বললে, বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি, জাতি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা কোনো কিছুর দোষ বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদেরকে বিশেষ্য পদ বলে।
বিশেষ্য পদ এর প্রকারভেদ
মোট ৬ ধরনের বিশেষ্য পদ রয়েছে –
১. সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য
২. জাতিবাচক বিশেষ্য
৩. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য
৪. বস্তুবাচক বিশেষ্য
৫. ভাববাচক বিশেষ্য
৬. গুণবাচক বিশেষ্য
নাম বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য পদ
যে পদের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান এবং বিভিন্ন গ্রন্থের নামকে বোঝানো হয় তাকে সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য বলে। এদের মধ্যে-
ব্যক্তির নাম : পৃথিবীতে যত ব্যক্তির নাম আছে তা ছোট কিংবা বড় হোক না কেন, সেটা বিশেষণ পদ। যেমন- সাইফা, পিংকি, মিম, সায়মন, সালমান, আফরিন ইত্যাদি।
স্থানের নাম : পৃথিবীতে যত ধরনের স্থান আছে তাদের সবাই নামবাচক বিশেষ্য। অর্থাৎ যত ধরনের দেশের নাম, রাজধানীর নাম, শহরের নাম, জেলার নাম, উপজেলার নাম, থানার নাম, এলাকার নাম বা কোনো বিশেষ জায়গার নাম হচ্ছে আমাদের নামবাচক বিশেষ্য। যেমন- ঢাকা, উগান্ডা, কানাডা, লন্ডন, প্রশান্ত মহাসাগর, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ইত্যাদি।
জাতিবাচক বিশেষ্য পদ
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। এবার একটু অন্যভাবে জাতিবাচক বিশেষ্যকে বোঝার চেষ্টা করি।
জাতিবাচক বিশেষ্যকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করবো-
১. জাতির নাম : পৃথিবীতে সকল জাতি বা উপজাতির সব নাম জাতিবাচক বিশেষ্য। যেমন – বাঙালি, চাকমা, মারমা, মুসলমান, খাসিয়া, বৌদ্ধ ও সাঁওতাল।
২. একক নাম : যার একটা কমন নাম আছে বা যার অনেকগুলো নাম আছে কিন্তু আমরা তাকে সাধারণ একটা নামে ডাকি, তখন সেই সাধারণ নামকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। জাতিবাচক বিশেষ্যের অনেকগুলো নাম থাকে যারা একেকটা নামবাচক বিশেষ্য। যেমন-
তানিয়া, সাইফা, ইফতি এরা সবাই মানুষ, কিন্তু এদের মধ্যে তানিয়া, সাইফা, ইফতি এই তিনটা নাম হচ্ছে সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য। আবার এরা যে মানুষ, এই মানুষ শব্দটি হচ্ছে জাতিবাচক বিশেষ্য।
একইভাবে টিয়া একটা পাখির নাম, এরকম আরো অনেকগুলো পাখি হচ্ছে টুনটুনি, ময়না, মুরগি, কাক কোকিল, দোয়েল ইত্যাদি। এখানে এদের প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা নাম হচ্ছে সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য, কিন্তু পাখি শব্দটা জাতিবাচক বিশেষ্য। যেমন-
টিয়া, ময়না, টুনটুনি, কোকিল, কাক, ময়ূর, মুরগি ইত্যাদি কিন্তু এরা সবাই একই জাতের, অর্থাৎ এরা সবাই পাখি। তাই পাখি এখানে জাতিবাচক বিশেষ্য।
৩. ইংলিশ নাম : জাতিবাচক বিশেষ্যের ইংরেজি নাম Common Noun। Common অর্থ হচ্ছে যা সব জায়গাতেই সমানভাবে অবস্থান করে। যেমন-
নামবাচক বিশেষ্য হচ্ছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নামগুলো। এরা সবাই নদী, আর নদী হচ্ছে জাতিবাচক বিশেষ্য।
ইলিশ, রুই, কাতল ইত্যাদি সবাই মাছের নাম, তাই এরা নামবাচক বিশেষ্য। কিন্তু এদের সবার Common বিষয় হচ্ছে এরা মাছ, তাই মাছ হচ্ছে জাতিবাচক বিশেষ্য।
একইভাবে আম, কাঁঠাল, বট ইত্যাদি নামবাচক বিশেষ্য, সেইসাথে গাছ জাতিবাচক বিশেষ্য। আবার, হিমালয়, কেওক্রাডং, গারো ইত্যাদি নামবাচক বিশেষ্য এবং পর্বত হচ্ছে জাতিবাচক বিশেষ্য।
কতগুলো জাতিবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ দেখে ফেলি-
মানুষ, বাঙালি, গরু, মাছ, পশু, পাখি, গাছ, বৃক্ষ, পর্বত, পাহাড়, ফুল, নদী ইত্যাদি।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য
যে পদের মাধ্যমে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণির সমষ্টি বোঝানো হয় তখন তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-
জনতা, সভা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, পরিবার, বাহিনী, শ্রেণী, সংসদ।
জাতিবাচক বিশেষ্যের সাথে সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের পার্থক্য
জাতিবাচক বিশেষ্য পদ বা শব্দটি দ্বারা একটি জিনিস বোঝাতে পারে আবার অনেকগুলো জিনিসও বোঝাতে পারে। যেমন-
মানুষ শব্দটি দিয়ে একজনকে বোঝায়, আবার অনেক জনকেও বোঝায়। তাই এটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
কিন্তু সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ্য পদ বা শব্দটি কখনো একটি বোঝাবে না, অনেকগুলো বোঝাবে। যেমন-
জনতা শব্দটি দ্বারা কখনোই একটি মানুষকে বোঝায় না, অনেকগুলো মানুষকে বোঝায়।
বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য পদ
যে পদের মাধ্যমে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যেমন-
বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।
ভাববাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। ভাববাচক বিশেষ্য হয় দু’ভাবে-
১. যাবতীয় কাজ করাকে ক্রিয়াপদ বলে। আর ঐ ক্রিয়াপদের যদি কোনো নাম দেওয়া হয় তবে ক্রিয়ার ঐ নামটিকে ভাববাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-
আসা (ক্রিয়াপদ) – আগমন (বিশেষ্য)
যাওয়া (ক্রিয়াপদ) – গমন (বিশেষ্য)
শোয়া (ক্রিয়াপদ) – শয়ন (বিশেষ্য)
দেখা (ক্রিয়াপদ) – দর্শন (বিশেষ্য)
খাওয়া (ক্রিয়াপদ) – ভোজন / আহার (বিশেষ্য)
শোনা (ক্রিয়াপদ) – শ্রবণ (বিশেষ্য)
২. মৌলিক ধাতু + আ = ভাববাচক বিশেষ্য হয়
√খা + আ = খাওয়া
√দেখ্ + আ = দেখা
এভাবে আরো কিছু ভাববাচক বিশেষ্য পদ হচ্ছে-
বলা, চলা, করা, পড়া, যাওয়া, পাওয়া, যাওয়া, খাওয়া।
আবার ধাতু বা প্রাতিপদিকের পর আই প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ভাববাচক বিশেষ্য গঠিত হয়। যেমন –
চড়্ + আই = চড়াই
বড়্ + আই = বড়াই
গুণবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায়, তাই গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন-
বীর এর গুণের নাম = বীরত্ব
তরুণের গুণের নাম = তারুণ্য
সুন্দর এর গুণের নাম = সৌন্দর্য
মধুর মিষ্টিত্ব এর গুণের নাম = মধুরতা
তরল দ্রব্যের গুণের নাম = তারল্য
তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণের নাম = তিক্ততা
যুবক এর গুণের নাম = যৌবন
এরকম আরো কিছু গুণবাচক বিশেষ্য হচ্ছে-
সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ, সততা, উৎকর্ষ ইত্যাদি।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-