কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থ যখন নিজে নিজে, স্বতস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে যায় তখন তাকে ব্যাপন বলে। যেমন বাসায় যখন ভালো কোনো খাবার রান্না করা হয় তখন সেই রান্নার ঘ্রাণ পুরো বাসায় ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিংবা নর্দমা বা ডাস্টবিনে যখন দুর্গন্ধ যুক্ত কিছু ফেলা হয় তখন সেটার ঘ্রাণ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় আশেপাশের এলাকা গুলোতে ছড়িয়ে যায়।
যখন কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কিংবা খুব কম সময়ে ছড়িয়ে পড়ে তবে তার ব্যাপন হার বেশি থাকে৷ আবার বস্তু যদি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে কিংবা বেশি সময় লাগে ছড়িয়ে পড়তে তবে তার ব্যাপনের হার কম হয়।
ব্যাপনের হার r এবং সময় t হলে, এদের মাঝে সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক হয়-
r ∝ 1/t
কোনো বস্তুর আণবিক ভরের সাথেও ব্যাপনের ভালো সম্পর্ক আছে৷ যে বস্তুর আণবিক ভর বেশি তার ব্যাপনের হার কম হয়, আবার যে বস্তুর আণবিক ভর কম তার ব্যাপনের হার বেশি। অর্থাৎ আণবিক ভর M হলে-
r ∝ 1/M
তাপমাত্রার ওপর ব্যাপন নির্ভর করে। যখন কোনো কিছুর তাপমাত্রা বাড়ানো হয় তখন বস্তুর অণুগুলোর গতিশক্তি বাড়ে, ফলে ব্যাপনের হারও বাড়ে৷ তাই তাপকে H দিয়ে প্রকাশ করলে-
r ∝ H
দুটো গ্যাসের ব্যাপন
দুটো গ্যাসের মাঝে কিভাবে ব্যাপন হয় সেটা নিয়ে বিখ্যাত একটা পরিক্ষা আছে। এই পরিক্ষাটির জন্য দুটো রাসায়নিক বস্তু দরকার হয়- অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH) এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl)।
প্রথমে একটা কাঁচের নল নিতে হবে। এর দুই প্রান্তে তুলো দিয়ে ভেজানো NH4OH এবং HCl কে গুঁজে দিতে হবে। NH4OH থেকে তৈরি অ্যামোনিয়া গ্যাস NH3 এবং HCl থেকে তৈরি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl (g)) কাচনলের ভেতরে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে কাচনলের ভেতরে কোনো এক জায়গায় সাদা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এই জায়গাটা কাচনলের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে না, এটি HCl এসিডে ভেজানো তুলোর প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে এবং NH4OH-এ ভেজানো তুলোর প্রান্তের থেকে দূরে থাকবে। এখানে সাদা ধোঁয়া তৈরি হবার মূল কারণ HCl গ্যাস এবং NH3 গ্যাসের বিক্রিয়ায় তৈরি হওয়া NH4Cl গ্যাস।
HCl গ্যাসের আণবিক ভর = 36.5
NH3 গ্যাসের আণবিক ভর = 17
যেহেতু NH3 গ্যাস HCl গ্যাসের চেয়ে হালকা, তাই এর ব্যাপনের হার বেশি। সেজন্য NH3 গ্যাস বেশি দুরত্ব অতিক্রম করে HCl গ্যাসের সাথে মিলিত হয়ে NH4Cl এর সাদা ধোঁয়া তৈরি করে।
তাই বলা যায়, যেসব গ্যাসের আণবিক ভর বেশি, তাদের ব্যাপনের হার কম এবং এর উল্টো ঘটনাও সত্য।
H2, He, N2, O2, CO2 ইত্যাদি গ্যাস গুলোর মাঝে হাইড্রোজেনের আণবিক ভর সবচেয়ে কম (=2), তাই এটির ব্যাপন অনেক দ্রুত হয়৷ আবার এদের মাঝে কার্বন ডাই-অক্সাইডের আণবিক ভর সবচেয়ে বেশি (=44)। তাই এর ব্যাপন সবচেয়ে আস্তে আস্তে হবে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতির কারণ
- আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস
- আদর্শ গ্যাস সমীকরণের বিভিন্ন রূপ ও ব্যবহার
- কী প্রক্রিয়ায় গ্যাসের চাপের সৃষ্টি হয়
- গ্যাস আয়তন সূত্র
- গ্যাসের অণুর গতিবেগ হিসাবকরণ
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন
- গ্যাসের সূত্রসমূহ
- নিঃসরণ
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয়
- বাস্তব গ্যাসের প্রেষণ গুণাঙ্ক ও আদর্শ আচরণ
- ব্যাপন ও নিঃসরণ এর পার্থক্য
- মোলার গ্যাস ধ্রুবকের মাত্রা ও তাৎপর্য
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয়