ভূপৃষ্ঠ সর্বদা পরিবর্তনশীল। যে সমস্ত কার্যাবলীর কারণে প্রাকৃতিক ভাবে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয় তাকে ভূ-প্রক্রিয়া বলে।
ভূ-প্রক্রিয়া তিনভাবে হতে পারে-
১. ধীর পরিবর্তন : এই পরিবর্তনের মধ্যে নগ্নীভবন অগ্নুৎপাত এবং অবক্ষেপণ নামক দুটো ভাগ থাকে। নগ্নীভবন অগ্ন্যুৎপাতের মাঝে বিচূর্ণীভবন, ক্ষয়ীভবন, অপসারণ উল্লেখযোগ্য।
২. ধীর ও দ্রুত পরিবর্তন : এর মধ্যে ভূ-আলোড়ন উল্লেখযোগ্য।
৩. আকস্মিক পরিবর্তন : এর মধ্যে ভূমিকম্প উল্লেখযোগ্য।
ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়-
আকস্মিক পরিবর্তন : পৃথিবীর ভেতরটা এখনো উত্তপ্ত এবং গলিত অবস্থায় আছে। এসব উত্তপ্ত বস্তুর মাঝে তাপ ও চাপের পার্থক্য হলে ভূ-ত্বকে যে কম্পন বা আলোড়ন তৈরি হয় তাকে ভূ-আলোড়ন বলে। এই আলোড়নের ফলেই ভূপৃষ্ঠে বেশিরভাগ জায়গায় পরিবর্তন দেখা যায়। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূ-কম্পন, পৃথিবীর ভেতরে সংকোচন, ভূ-গর্ভের তাপ ও অন্যান্য শক্তির ফলে ভূপৃষ্ঠে হঠাৎ যে পরিবর্তন দেখা যায় তাকে আকস্মিক পরিবর্তন বলে। এই ধরনের পরিবর্তন খুব বেশি জায়গা জুড়ে হয় না। এই আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে ভূমিকম্প, সুনামি এবং আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে।
ধীর পরিবর্তন : আকস্মিক পরিবর্তনের বিপরীত অবস্থা হচ্ছে ধীর পরিবর্তন। অনেকগুলো প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সূর্যতাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, নদী, হিমবাহ ইত্যাদি দ্বারা যে পরিবর্তন ধীরে ধীরে গঠিত হয় তাকে ধীর পরিবর্তন বলে। এই ধরনের পরিবর্তন বিশাল এলাকা জুড়ে হয়। যেসব প্রাকৃতিক শক্তির কারণে ধীর পরিবর্তন হয় সেগুলো হচ্ছে- বৃষ্টিপাত, নদী, হিমবাহ, বাতাস ইত্যাদি। এদের ক্ষয়কার্য গুলো এবার আলোচনা করবো আমরা-
বায়ুর কাজ
বাতাসে থাকা অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয়বাষ্প এরা বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার বিচ্ছেদ এবং ক্ষয়সাধন করে। মরুভূমিতে সবচেয়ে বেশি বায়ুর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দেখা যায়।
বৃষ্টির কাজ
বৃষ্টির পানি যখন ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন এই পানি শিলাকে আংশিকভাবে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাকে স্থানচ্যুত করে সরিয়ে ফেলে।
হিমবাহের কাজ
হিমবাহ দ্বারা বিভিন্ন স্থানের শিল ক্ষয় হয়।
নদীর কাজ
নদী যখন পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন স্রোতের আঘাতে নুড়ি, কর্দম ইত্যাদির ঘর্ষণে নদীর নিচের অংশ বা নদীগর্ভ এবং নদীর পার্শ্ববর্তী স্থান ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবাহ নিচের দিকে পড়ে বলে সেখানে নদী দ্বারা ক্ষয় বেশি হয়। কিন্তু সমভূমিতে নদীর স্রোত কম থাকে বলে নদী দ্বারা ক্ষয়ের পরিমান কমে যায়।
নদীর গতিপথকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়-
a. উর্ধ্বগতি : নদীর প্রাথমিক অবস্থা হচ্ছে উর্ধ্বগতি। পর্বতের যে স্থান থেকে নদীর উৎপত্তি হয়েছে সেখানে নদীর উর্ধগতি থাকে।
b. মধ্যগতি : পার্বত্য অঞ্চল পার হয়ে নদী যখন সমভূমিতে আসে তখন নদীর এই প্রবাহকে মধ্যগতি বলে, যেখানে স্রোতের বেগ কমে যায়। এই অবস্থায় নদী সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে প্লাবন সমভূমি তৈরি করে।
c. নিন্মগতি : নদীর জীবনচক্রের শেষ পর্যায় হচ্ছে নদীর নিন্মগতি। এই অবস্থায় স্রোত একেবারেই কমে যায়, নদীর তলদেশ ও প্বার্শদেশ ক্ষয় কমে যায়, নদী বাহিত পলি, বালুকণা ইত্যাদি মোহনায় সঞ্চিত হয়।
নদী দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
নদী দুইভাবে ভূমিরূপের তৈরি করে-
১. নদীর ক্ষয়কার্য : এর মাধ্যমে নদী ক্ষয়জাত ভূমিরূপ তৈরি করে। ক্ষয়জাত ভূমিরূপ বলতে বোঝায়, নদীর পানি যখন প্রবাহিত হয় তখন প্রবাহিত পানির জন্য যে ক্ষয় হয়, সেই ক্ষয় হওয়া স্থান।
২. নদীর সঞ্চয়কার্য : এর মাধ্যমে নদী সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ তৈরি করে। সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ বলতে বোঝায়, নদীর পানি যখন কোনো জায়গায় পড়ে কিংবা সাগরে নিমজ্জিত হয়, তখন সেই জায়গাগুলোকে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ বলে।
নদীর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ
নদী ৪ ধরনের ক্ষয়জাত ভূমিরূপ তৈরি করে। এগুলো হচ্ছে-
A. “V” আকৃতির উপত্যকা : পর্বত থেকে উৎপত্তি হওয়া নদী যখন উর্ধ্বগতি থাকা অবস্থায় প্রবাহিত হয়, তখন পর্বতের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় পর্বতের শিলাগুলোকে ক্ষয় করতে করতে স্রোত এগিয়ে চলে। এক্ষেত্রে নদীর প্বার্শক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়। সেই ক্ষয়ের আকৃতি তখন V এর মতন দেখায়। তাই একে V আকৃতির উপত্যকা বলে।
B. “U” আকৃতির উপত্যকা : উর্ধ্বগতি অবস্থা শেষ নদী যখন সমভূমিতে আসে তখন নদীর স্রোতের বেগ কমে যায়। ফলে নদীর নিম্নক্ষয়ের চেয়ে প্বার্শক্ষয়ের পরিমান বেশি হয়। তখন নদীর স্রোত উপত্যকাকে U আকৃতির বানিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে। তাই এই ধরনের উপত্যকাকে U আকৃতির উপত্যকা বলে।
C. গিরিখাত ও ক্যানিয়ন : যখন নদীর দুপাশের ভূমি ক্ষয় খুব কম হয় কিংবা না হয়, তখন নদীর প্রবাহ খুব সংকীর্ণ এবং সরু পথ ধরে আগাতে থাকে। সেইসাথে নদীর প্রবাহ খুব গভীর অবস্থায় পৌঁছায়। একে গিরিখাত বলে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গিরিখাতের নাম হচ্ছে সিন্ধু নদীর গিরিখাত, এটি প্রায় ৫১৮ মিটার গভীর।
যখন নদীর প্রবাহ খুব শুষ্ক স্থান দিয়ে গমন করে, তখন গিরিখাতের গভীরতা আরো বাড়ে। একে ক্যানিয়ন বলে। যেমন উত্তর আমেরিকার কলোরাডো নদীর গিরিখাত গ্যান্ড ক্যানিয়ন এর উদাহরণ।
D. জলপ্রপাত (Waterfall) : উর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর পানি যদি পর্যায়ক্রমে কঠিন ও নরম শিলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তবে কোমল শিলাটিকে নদী বেশি পরিমাণ ক্ষয় করে ফেলে। ফলে নরম শিলাস্তরের তুলনায় কঠিন শিলাস্তর অনেক উপরে অবস্থান করে এবং নরম শিলাস্তর ভেঙে নদীর স্রোতের সাথে বাহিত হয়। এভাবে কঠিন শিলাস্তরকে কাজে লাগিয়ে নদীর পানি অনেক উপর থেকে পড়তে থাকে। পানির এরকম পতনকে জলপ্রপাত বলে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- ঋতু পরিবর্তনের কারণ
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব
- ধ্বনি পরিবর্তন
- নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ
- নিয়ত বায়ু
- পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
- পদার্থের পরিবর্তন
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : সমভূমি
- বায়ু প্রবাহ
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু
- বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ও গুরুত্ব
- স্থানীয় বায়ু