শিলা ও খনিজ

শিলা ও খনিজ এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যখন কতগুলো মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থ তৈরি করে তাকে খনিজ বলে। খনিজ দুটো বা তার চেয়ে বেশি মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। তবে কিছু কিছু খনিজ একটি মাত্র মৌল দিয়ে গঠিত হয়। এরকম একটা মৌল দিয়ে গঠিত খনিজ হচ্ছে হীরা, সোনা, তামা, রূপা, পারদ এবং গন্ধক। সবচেয়ে কঠিন খনিজ হচ্ছে হীরা, সবচেয়ে নরম খনিজ হচ্ছে টেলক।

এক বা একাধিক খনিজের মিশ্রণকে শিলা বলে। শিলা গঠনকারী প্রতিটা খনিজের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। যদিও বেশিরভাগ শিলা একাধিক খনিজ দিয়ে গঠিত। সেক্ষেত্রে খনিজ এবং শিলা একই পদার্থ। যেমন- ক্যালাসাইট একটা খনিজ এবং শিলা হিসেবে এটি চুনাপাথর নামে পরিচিত।

শিলা ও খনিজ এর প্রকারভেদ

উৎপত্তি অনুসারে ভূত্বকের শিলা ও খনিজ দুই ধরনের-

  1. আগ্নেয় শিলা
  2. পাললিক শিলা
  3. রূপান্তরিত শিলা

এবার আমরা এসব শিলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো-

আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock)

পৃথিবীর শুরু থেকে যেসব শিলা উত্তপ্ত এবং গলিত অবস্থা থেকে শীতল এবং ঘনীভূত হয়ে কঠিন হয়েছে, তাদেরকে আগ্নেয় শিলা বলে। Igneous শব্দের অর্থ আগুন। অগ্নিময় অবস্থা থেকে এসব শিলার উৎপত্তি হয়েছে বলে এদেরকে আগ্নেয় শিলা বলে। আগ্নেয় শিলার আরেক নাম প্রাথমিক শিলা, অস্তরীভূত শিলা। আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য-

স্ফটিকার, অস্তরীভূত, কঠিন এবং কম ভঙ্গুর, জীবাশ্ম দেখা যায় না।

আগ্নেয় শিলাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-

বহিঃজ আগ্নেয় শিলা

অন্তঃজ আগ্নেয় শিলা

আগ্নেয় শিলার উদাহরণ- 

বহিঃজ আগ্নেয় শিলা : ব্যাসল্ট, রায়োলাইট, অ্যান্ডিসাইট

অন্তঃজ আগ্নেয় শিলা : গ্রানাইট, ডলোরাইট, ল্যাকোলিথ, ব্যাথোলিথ

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)

পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। এ শিলায় পলি সাধারণত স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত শিলা বলে। এটি ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৫% জায়গা জুড়ে আছে।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য

স্তরীভূত, নরম ও হালকা, সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, জীবাশ্ম দেখা যায়, ছিদ্র দেখা যায়।

পাললিক শিলার উদাহরণ

চুনাপাথর, কয়লা, নুড়িপাথর, বেলেপাথর, পলিপাথর, কর্দমপাথর, চক, লবণ, জিপসাম, ডায়াটম।

শিলা ও খনিজ

জীবাশ্ম (Fossil)

পাললিক শিলার মাঝে নানা রকম সামুদ্রিক জীবজন্তু, কংকাল এবং উদ্ভিদের ধ্বংসাবশেষ প্রস্তরীভূত অবস্থায় থাকতে পারে। এসব উদ্ভিদ ও প্রাণিদের দেহগুলোকে জীবন্ত জীবাষ্ম বলে। জীবাষ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে ফসিওলজি বলে।

তবে, কয়লা ও খনিজ তেলকে জৈব শিলা বলে।

 

রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)

শিলা ও খনিজ নিয়ে জানার ক্ষেত্রে আরেক ধরনের শিলা দেখা যায়। যেসব শিলা তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এর খনিজ উপাদানের পরিবর্তন হয়ে যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। আগ্নেয় বা পাললিক শিলা থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। স্ফটিক যুক্ত কঠিন শিলা গুলো রূপান্তরিত শিলা। ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই ধরনের শিলা তৈরি হয়।

কতগুলো রূপান্তরিত শিলা হচ্ছে-

নিস – গ্রানাইট থেকে রূপান্তরিত

শ্লেট – শেল, কাদা থেকে রূপান্তরিত

মার্বেল – চুনাপাথর থেকে রূপান্তরিত

কায়ার্টাজাইট – কোয়ার্টজ, বেলেপাথর থেকে রূপান্তরিত

গ্রাফাইট – কয়লা থেকে রূপান্তরিত

মনে রাখতে হবে,

খনিজের ধর্ম এর গঠনকারী মৌলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার শিলার ধর্ম এর গঠনকারী খনিজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ছিলো শিলা ও খনিজ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য।

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com