সন্ধি কাকে বলে এর উত্তর হচ্ছে সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন, অর্থাৎ দুটো ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। যখন আমরা পাশাপাশি থাকা দুটো ধ্বনিকে দ্রুত উচ্চারণ করতে যাই, তখন দুটো ধ্বনি মিলিত হয়ে নতুন উচ্চারণ তৈরি করে / একটা ধ্বনির প্রভাবে আরেকটা ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। যেমন-
বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
এখানে আমরা আলাদা আলাদা করে বিদ্যা তারপর আলয় উচ্চারণ করি না, এদেরকে একসাথে উচ্চারণ করতে গিয়ে বিদ্যালয় উচ্চারণ করি। উচ্চারণের এই নিয়মটাই হচ্ছে সন্ধি।
সন্ধি কাকে বলে ও সন্ধির উদ্দেশ্য
স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা আনা
ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন
এর মাধ্যমে ভাষার আকার সংকুচিত হয়
সন্ধি দীর্ঘ শব্দকে ছোট করে
এর ফলে ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়
সন্ধির মাধ্যমে উচ্চারণ সহজ হয়
ধ্বনি পরিবর্তনের সময় সন্ধি বিশেষ ভূমিকা পালন করে
সন্ধি ভাষার সৌন্দর্যতা বাড়ায়
সন্ধি নিয়ে অজানা কিছু তথ্য
আমরা সন্ধি কাকে বলে সেটা নিয়ে তো জানলাম। এবার সন্ধি নিয়ে কিছু তথ্য জানবো-
এই শব্দটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ
সন্ধি শব্দটি বিশেষ্য পদ
এই শব্দটি পারিভাষিক শব্দ
সন্ধি শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ, সন্ধি = সম্ + ধি
এই শব্দটি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত শব্দ, সন্ধি = সম্ + √ধা + ই
সন্ধি শব্দটির অর্থ মিলন, ঐক্য, চুক্তি
এই শব্দটির বিপরীত শব্দ : বিচ্ছেদ বা বিগ্রহ
ক্রিয়াপদের সাথে কোনো সন্ধি হয় না
ধ্বনির মিলনে সন্ধি হয় (কখনোই বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় না) কিন্তু পদের মিলনে সমাস হয়
সন্ধিকে ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে আলোচনা করা হয়।
সন্ধির প্রকারভেদ
মনে রাখতে হবে সন্ধি ২ প্রকার
a) বাংলা শব্দের সন্ধি : এটি আবার ২ প্রকার-
স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন সন্ধি
b) তৎসম শব্দের সন্ধি : এটি আবার ৩ প্রকার
স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন সন্ধি
বিসর্গ সন্ধি
এছাড়াও আরো এক ধরনের সন্ধি আছে যারা কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মানে না, এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। এরা আবার তিন প্রকার-
a) নিপাতনে সিদ্ধ স্বর সন্ধি
b) নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জন সন্ধি
c) নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গ সন্ধি
এবার আমরা প্রতিটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির উদাহরণ দেখবো, যেগুলো এক কথায় মুখস্থ করে ফেলতে হবে। তাহলে আমরা জানতে পারলাম সন্ধি কাকে বলে।
নিপাতনে সিদ্ধ স্বর সন্ধি
অন্যান্য = অন্য + অন্য
প্রৌঢ় = প্র + ঊঢ়
গবাক্ষ = গো + অক্ষ (গবাক্ষ শব্দের অর্থ জানালা)
শুদ্ধোদন = শুদ্ধ + ওদন (ওদন মানে ভাত)
স্বৈর = স্ব + ঈর
মার্তণ্ড = মার্ত + অন্ড (মার্তণ্ড শব্দের অর্থ সূর্য)
স্বৈরিণী = স্ব + ঈরিণী
প্রেষণ = প্র + এষণ
গবেন্দ্র = গো + ইন্দ্র
রক্তোষ্ঠ = রক্ত + ওষ্ঠ
গবেশ্বর = গো + ঈশ্বর
বিম্বোষ্ঠ = বিম্ব + ওষ্ঠ
নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জন সন্ধি
বৃহস্পতি = বৃহৎ + পতি
পরস্পর = পর + পর
গোষ্পদ = গো + পদ
আশ্চর্য = আ + চর্য
পতঞ্জলি = পতৎ + অঞ্জলি
বনস্পতি = বন + পতি
তস্কর = তৎ + কর
একাদশ = এক + দশ
ষোড়শ = ষট্ + দশ
মনীষা = মনস + ঈষা
হরিশ্চন্দ্র = হরি + চন্দ্র
দ্যুলোক = দিব্ + লোক
হিংস্র = হিনস্ + অ
বাগেশ্বরী = বাক্ + ঈশ্বরী
প্রায়শ্চিত্ত = প্রায় + চিত্ত
নাব্য = নৌ + য
পশ্চার্থ = পশ্চাৎ + অর্থ
নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গ সন্ধি
অহর্নিশ = অহঃ + নিশা
অহরহ = অহঃ + অহ
বাচস্পতি = বাচঃ + পতি (বক্তৃতা দানে পটু যে)
ভাস্কর = ভাঃ + কর
আস্পদ = আঃ + পদ
প্রাতঃকাল = প্রাতঃ + কাল
শিরঃপীড়া = শিরঃ + পীড়া
মনঃকষ্ট = মনঃ + কষ্ট
বিশেষ নিয়মে সাধিত কিছু ব্যঞ্জন সন্ধি
উত্থান = উৎ + স্থান
উত্থাপিত = উৎ + স্থাপিত
সংস্কৃত = সম্ + কৃত
পরিষ্কার = পরি + কার
উত্থাপন = উৎ + স্থাপন
সংস্কার = সম্ + কার
পরিস্কৃত = পরি + কৃত
গণ্য = গণ্ + য
ভক্ত = ভজ্ + ত
সন্নিহিত = সম্ + নিহিত
তাৎক্ষণিক = তৎ + ক্ষণিক
সিংহ = সিন্ + হ
মোড়ক = মুড় + অক
সদাশয় = সৎ + আশয়
নিরবধি = নির্ + অবধি
রান্না = রাঁধ্ + না
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com