সম্প্রদান অর্থ শর্ত ছাড়া দান করা। কাউকে স্বার্থ ছাড়া বা বিনামূল্যে কিছু দান করলে সেটাকে সম্প্রদান কারক বলে। অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে যখন কাউকে কিছু দান করা হয় তখন সেই ব্যাক্তিকে সম্প্রদান কারক বলে।
সম্প্রদান কারক নিয়ে জানার আগে আমরা একটু কর্ম কারক নিয়ে আলোচনা করবো, কেননা কর্মকারকের সাথে সম্প্রদান কারকের খুব ভালো সম্পর্ক আছে। কর্মকারক মানে হচ্ছে কোনো বাক্যের ক্রিয়াপদকে কি বা কাকে দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা।
সাইফা ভাত খায়।
কে ভাত খায়? – সাইফা
আবার সম্প্রদান কারক মানে হচ্ছে বাক্যে থাকা ক্রিয়াপদকে কাকে দ্বারা প্রশ্ন করলে যদি সেই ব্যাক্তি দানকৃত বা নিঃস্বার্থভাবে কোনো বস্তুকে পাওয়াটা উত্তর হিসেবে বোঝায় তবে সেটা সম্প্রদান কারক।
মসজিদে টাকা দাও।
কাকে টাকা দাও? – মসজিদে
অর্থাৎ দুটো কারক নির্ণয়ে আমরা “কাকে” দ্বারা প্রশ্ন করি। সেজন্য অনেক বৈয়াকরণ বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারকের উপস্থিতির কথা বিশ্বাস করেন না, তারা কর্ম কারক হিসেবে এটিকে দেখে থাকেন। এবার জানার চেষ্টা করবো দুটো কারকের মাঝে মূল পার্থক্য কি!
ধোপাকে কাপড় দাও।
এই বাক্যে ধোপাকে কাপড় দান করা বোঝানো হয় নি, কাপড় কাচতে দেওয়া বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আমরা ধোপাকে যখন কাপড় দিব, তখন এই কাপড়টা একবারে সারা জীবনের জন্য তাকে দিয়ে দিব না, কিংবা শর্তা ছাড়া তাকে কাপড়টা দিবো না, এই কাপড় দেওয়ার বিনিময় তাকে টাকা দিতে হবে যেনো সে কাপড়টা ধুঁয়ে দেয়। আবার কোনো না কোনো সময় তার কাছ থেকে আমরা এই কাপড় ফিরিয়ে আনব, সারাজীবন তার কাছে রাখবো না। তাই আমরা যদি প্রশ্ন করি ধোপাকে কি দেওয়া হয়, তবে উত্তর হবে এমন একটা জিনিস যা সারা জীবনের জন্য কিংবা শর্ত ছাড়া ধোপাকে দিয়ে দেওয়া হয়নি, এটাকে আবার ফিরিয়ে আনা হবে। এই ধরনের কারক গুলো হচ্ছে কর্মকারক।
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (সম্প্রদানে ৪র্থী)
কাকে ভিক্ষা দাও? – ভিক্ষুককে
এখানে ভিক্ষুককে দেওয়া ভিক্ষাটা আমরা নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য দেই না, কোনো শর্তের সাপেক্ষে দেই না এবং এটা কখনো আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করি না। তাই যাকে কোনো কিছু বিনামূল্যে, শর্তহীনভাবে দেওয়া হয়, সেটাই সম্প্রদান কারক।
আবার আমরা যখন কাউকে সম্মান, ভক্তি, পূজা, অর্চনা, আদর, যত্ন, ভালোবাসা, সহযোগিতা, অবজ্ঞা, স্নেহ, ঘৃণা, শ্রদ্ধা করি তখন সেগুলো ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই এগুলোও আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিতে হয়। তাই এরাও সম্প্রদান কারক। যেমন-
গুরুজনে ভক্তি করো। (সম্প্রদানে ৭মী)
তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলে থাকি। (সম্প্রদানে ৭মী)
কাউকে আশ্রয় দিলে, খাবার দিলে, উপহার দিলে সেগুলোও শর্তহীন ভাবে দেওয়া হয়, ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই এরাও সম্প্রদান কারক। যেমন-
সাইফাকে ঘড়ি উপহার দিয়েছিলাম (সম্প্রদানে ৪র্থী)
অন্নহীনে অন্ন দাও (সম্প্রদানে ৭মী)
আমায় একটু আশ্রয় দিন (সম্প্রদানে ৭মী)
গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে (সম্প্রদানে ৭মী)
এনিকে ভাত দিয়েছিলাম (সম্প্রদানে ৪র্থী)
কিন্তু এর মধ্যে আবার কিছু কনফিউশান থাকে। যেমন ছিনতাই করে কিছু নিয়ে যাওয়া, কর দেওয়া, ছাত্রকে শিক্ষা দান করা, বেতন দেওয়া এগুলো কিন্তু সারাজীবনের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়, তারপরেও এরা সম্প্রদান কারকের অন্তর্ভুক্ত না। কয়েকটা উদাহরণ দেখি-
সাইফা ডাকাতকে তার গয়না গুলো দিয়ে দিয়েছিলো।
প্রজা রাজাকে কর দেয়।
এনি জীবনে অনেক ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দান করেছে।
সাফা তার চাকরকে বেতন দিয়েছে।
এখানে এরা কেউই সম্প্রদান কারক নয়, তবে এরা কর্ম কারক হিসেবে কাজ করে।
এবার একটা মজার জিনিস দেখবো! সম্প্রদান কারকের উদাহরণ গুলোতে একইসাথে সম্প্রদান কারক থাকে, কর্ম কারকও থাকে। যেমন-
সাইফাকে ঘড়ি উপহার দিয়েছি
কাকে উপহার দিয়েছি? – সাইফাকে (সম্প্রদানে ৭মী)
সাইফাকে কি উপহার দিয়েছি? – ঘড়ি (কর্মে শুন্য)
গরীবকে বস্ত্র দাও
কাকে বস্ত্র দাও? – গরীবকে (সম্প্রদানে ৭মী)
গরীবকে কি দাও? – বস্ত্র (কর্মে শুন্য)
খুব গুরুত্বপূর্ণ ৪ টা বাক্য মনে রাখতে হবে-
সমিতিতে চাঁদা দাও (সম্প্রদানে ৭মী, কর্মে শুন্য)
মৃতজনে দেহ প্রাণ (সম্প্রদানে ৭মী, কর্মে শুন্য)
অন্ধজনে দেহ আলো (সম্প্রদানে ৭মী, কর্মে শুন্য)
সৎপাত্রে কন্যা দান করো (সম্প্রদানে ৭মী, কর্মে শুন্য)
পলাতক দাসে দাও স্বাধীনতা (সম্প্রদানে ৭মী, কর্মে শুন্য)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-