প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস

প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে জানার কারণ হচ্ছে আধুনিক সভ্যতা বিজ্ঞানের ফসল। বিজ্ঞানের এই সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সৃজনশীল অবদান। বিজ্ঞানের কোনো জাতীয় বা রাজনৈতিক সীমা নেই। বিজ্ঞানের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সকল জাতির সকল মানুষের জন্য। বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীন গ্রিক ও রোম সম্রাজ্যে থেলিসের (Thales খ্রি:পূ: ৬২৪-৫৬৯) মতো বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি সূর্য গ্রহণ সম্পর্কিত ভবিষ্যতবাণীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া তিনি বলেছিলেন, বৃত্তের ব্যাস বৃত্তকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। তিনি লোডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কেও জানতেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে পিথাগোরাস (Pythagorus, খ্রি:পূ : ৫২৭-৪৯৭) একটি স্মরণীয় নাম। তিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, গণিত ও সংগীত, ভেষজ বিজ্ঞান ও বিশ্বতত্ত্ব, শরীর, মন ও আত্মা সব কিছুকেই গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তিনি আগুন, পানি, মাটি ও বায়ু এই চারটি মৌলের ধারণা দিয়েছিলেন। কম্পমান তারের ওপর তাঁর কাজ অধিক স্বায়ী অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমানে বাদ্যযন্ত্র ও সংগীত বিষয়ক যে স্কেল রয়েছে তা তারের কম্পন বিষয়ক তাঁর অনুসন্ধানের আংশিক অবদান।

খ্রিষ্টের জন্মের চারশ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (Democritus, খ্রি: পূ: ৪৬০-৩৭০) ধারণা দেন যে পদার্থের অবিভাজ্য একক রয়েছে। তিনি একে নাম দেন পরমাণু। পরমাণু সম্পর্কে তাঁর এ ধারণা বর্তমান ধারণার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

অ্যারিস্টার্কাস

প্রাচীন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ অ্যারিস্টার্কাস (Aristarchus, খ্রি: পূ: ৩১০-২৩০)। সূর্যই যে সৌর জগতের কেন্দ্র এবং পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো তার চার দিকে ঘুরে চলেছে – একথা বলেছেন তিনিই প্রথম। অ্যারিস্টার্কাসের এই মৌলিক ও বৈপ্লবিক মতামত কিন্তু মোটেও সেকালের মানুষের পছন্দ হয়নি। কারণ বিশ্বে তখন প্লেটো (Plato, খ্রি: পূ : ৪২৮–৩৪৮) ও অ্যারিস্টটলের (Aristotle খ্রি: পূ: ৩৮৪-৩২২) মতবাদের প্রচণ্ড প্রতাপ। তাঁদের মতে সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রগুলো নিশ্চল পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। বিভিন্ন বিষয়ে অ্যারিস্টটলের মতো অগাধ পাণ্ডিত্য তখনকার দিনে আর কারো ছিল না। ফলে তার ধারণাই ক্রমে সবার মনে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে গেল। তখনকার দিনের পন্ডিতরা বলতেন, অ্যারিস্টটল জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল বিষয় নিয়েই চিন্তা করেছেন। অ্যারিস্টটলেই সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। অ্যারিস্টটলে যা নেই তা নিয়ে মাথা ঘামানোরও প্রয়োজন নেই। অ্যারিস্টটলের মৃত্যুর বার বছর পরে জন্ম গ্রহণ করেও অ্যারিস্টার্কাস জনগণকে অ্যারিস্টটলের ধারণার জগতের বাইরে আনতে পারেননি।

বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস (Archimedes, খ্রি: পূ: ২৮৭-২১২) লিভারের নীতি ও তরলে নিমজ্জিত বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল ঊর্ধ্বমুখী বলের সূত্র আবিষ্কার করে ধাতুর ভেজাল নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তিনি গোলীয় দর্পণের সাহায্যে সূর্যের রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে আগুন ধরানোর কৌশলও জানতেন। বিজ্ঞানের ঊষালগ্নের এ সকল আবিষ্কারের তাৎপর্য গভীর। কোনো বিষয়ের অগ্রগতি নির্ভর করে ঐ বিষয়ে অবিরত নতুন ধারণা ও নতুন আবিষ্কার বা নতুন উদ্ভাবনের ওপর।

ভৌত বিজ্ঞান

প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশ

ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে কণাদ, আর্যত (জন্ম ৪৭৬), বরাহ মিহির (জন্ম ৫০৫) ও মহাবীরের নাম উল্লেখযোগ্য। মহাবীর ‘সিদ্ধান্ত’ নামক গ্রন্থে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক কাজ তুলে ধরেন। আর্যভট্ট গণিতে অবদান রাখেন, তিনি গাণিতিক প্রমাণের যোগফল পর্যালোচনা করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানের প্রচেষ্টা নেন। মহাবীর যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের কাজ এবং শূন্যের ব্যবহার আলোচনা করেন। উপমহাদেশের দার্শনিক কণাস পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু। ভাস্করাচার্য প্রাচীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ। তিনি নির্ভুলভাবে পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তাঁর গণনায় পৃথিবীর ব্যাস পাওয়া গিয়েছিল ৭১৮২ মাইল। বর্তমানকালের গণনায় তার মান ৭৯২৬ মাইল। পৃথিবীর ব্যাস থেকে পরিধি নির্ণয় করতে হলে π এর মান জানার প্রয়োজন। প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতের π এর মান ৩.১৬২৩ নির্ণয় করেন। ভাস্করাচার্য ২২/৭ কে π এর মান হিসেবে প্রচার করেন। বর্তমানকালের হিসাব থেকে এই মান পাওয়া যায় প্রায় ৩.১৪১৬ বা প্রায় ২২/৭। কাজেই এই ঘটনাগুলো হচ্ছে প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস।