ভেক্টর যোগ ও বিয়োগ সাধারণ কোনো বীজগাণিতিক নিয়মে হয় নাহ। সেজন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে যেগুলো আমরা এখানে জানার চেষ্টা করবো।
ভেক্টর যোগ
ভেক্টরের যোগ সাধারন বীজগাণিতিক যোগের মতন হয় না। দুটো বা তার বেশি ভেক্টরকে যোগ করা যায় ভেক্টরের কিছু নিয়মানুসারে। ভেক্টরের যোগ বের করার জন্য তিন ধরনের সূত্র রয়েছে-
- সাধারণ সূত্র
- ত্রিভুজ সূত্র এবং
- বহুভূজ সূত্র
A ও B দুটি ভেক্টর হলে, তাদের যোগ হবে- A + B
মনে রাখতে হবে, দুটি সমজাতীয় ভেক্টরকে শুধুমাত্র যোগ করা যায়, ভিন্নজাতীয় ভেক্টর গুলোকে কখনোই যোগ করা যায় না। যেমন বল (force) একটি ভেক্টর রাশি এবং ত্বরন (acceleration) আরেকটি ভেক্টর রাশি। কিন্তু বল এবং ত্বরণ দুজন সমজাতীয় নয়। তাই বল এবং ত্বরণ এই দুটো ভেক্টরকে কখনোই যোগ করা যাবে না। এখন ভেক্টর যোগের সূত্রগুলো নিয়ে জানবো-
সাধারণ সূত্র
ধরা যাক A এবং B দুটি ভেক্টরের দিক ভিন্ন, অর্থাৎ এরা একই দিকে কাজ করে না-
দুটো ভেক্টর যোগ করার নিয়ম হচ্ছে প্রথম ভেক্টরের শেষ বিন্দুর সাথে দ্বিতীয় ভেক্টরের আদি বিন্দুকে যুক্ত করা। যেহেতু ভেক্টরের মান এবং দিক নির্দিষ্ট বা ফিক্সড করা, তাই আমরা কোনো ভেক্টরের মান এবং দিক পরিবর্তন করতে পারবো না। সেজন্য A ভেক্টরের শেষ বিন্দুতে B ভেক্টরের আদি বিন্দুকে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই বসিয়ে দেবো-
এখন প্রথম ভেক্টর বা A ভেক্টরের আদি বিন্দুর সাথে দ্বিতীয় ভেক্টর বা B ভেক্টরের শেষ বিন্দু যদি যুক্ত করে দেই তবে যে নতুন ভেক্টর পাবো সেটাই হবে A ও B এই দুটি ভেক্টরের যোগফল। এবং এর দিক হবে প্রথম ভেক্টর অর্থাৎ A এর আদি বিন্দু থেকে দ্বিতীয় ভেক্টর অর্থাৎ B এর শেষ বিন্দু পর্যন্ত।
ত্রিভুজ সূত্র
যদি কোনো ত্রিভুজের দুটি বাহু দুটো ভেক্টরকে একই ক্রমে প্রকাশ করে তবে ত্রিভুজের তৃতীয় বাহু ওই ভেক্টর দুটির লব্ধিকে বিপরীতক্রমে প্রকাশ করবে।
ধরে নাও, OAB ত্রিভুজের OA বাহু দ্বারা a ভেক্টর, OB বাহু দ্বারা b ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে a ভেক্টরের দিক O থেকে A এর দিকে এবং b ভেক্টরের দিক A থেকে B এর দিকে। এখন ত্রিভুজের তৃতীয় বাহু OB হচ্ছে এই ভেক্টর দুটোর লব্ধি, অর্থাৎ লব্ধি c হলে-
c = a + b
or, OB = a + b
একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে, a এবং b ভেক্টর এরা দুজন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে কাজ করছে, কিন্তু c ভেক্টর বা লব্ধি ভেক্টরটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে কাজ করছে। এটি হচ্ছে ত্রিভুজ সূত্রের মূল কথা-
বহুভুজ সূত্র
ভেক্টরের বহুভুজ সূত্র পাওয়া যায় ভেক্টরের ত্রিভুজ সূত্র থেকেই।
OABCD নামক একটা বহুভুজকে দেখো-
আমরা যদি এই বহুভুজটির OA এবং AB বাহুকে কোনো ত্রিভুজের দুটি বাহু হিসেবে ধরি, তবে O এবং B বিন্দুকে যুক্ত করলে আমরা OAB নামক একটি ত্রিভুজ পাবো।
এখানে OA এবং AB ভেক্টর যেদিকে কাজ করছে, ত্রিভুজ সূত্রানুসারে তাদের লব্ধি হিসেবে OB ভেক্টর ঠিক তাদের বিপরীত দিকে কাজ করছে। তাই OA এবং AB এর বদলে আমরা OB কে এখানে লব্ধি ভেক্টর হিসেবে রাখতে পারি-
আবার OB এবং BC এরা দুজন ভেক্টর মিলে OC নামক লব্ধি ভেক্টর তৈরি করে, যার দিক হচ্ছে এদের দুজনের বিপরীত দিকে-
তাহলে OB এবং BC ভেক্টরের বদলে তাদের লব্ধি ভেক্টর OC কে আমরা এখানে রাখতে পারি-
আবার OC এবং CD এরা দুজন মিলে OD লব্ধি তৈরি করে, ত্রিভুজ সূত্রানুসাতে যার দিক তাদের দুজনের বিপরীত দিকে। এখানে OD হচ্ছে এই বহুভূজটার শেষ বাহু। আর এর মান আমরা বের করেছি বিভিন্ন বাহুদের যোগ করে করে-
OD = OA + AB + BC + CD
এভাবে বহুভূজ সুত্রানুসারে আমরা অসংখ্য বাহু তৈরি করে তাদের আগের বাহুগুলোকে ভেক্টরের ত্রিভুজ সূত্রাকারে যোগ করার মাধ্যমে লব্ধি ভেক্টরের মান পেতে পারি। তাই আমরা যেকোনো সংখ্যক বাহুর জন্য এই বহুভূজ সুত্রটি apply করতে পারি।
ভেক্টর রাশি বিয়োগ
ভেক্টরের বিয়োগ সাধারন বীজগাণিতিক বিয়োগের মতন হয় না। দুটো বা তার বেশি ভেক্টরকে বিয়োগ করা যায় ভেক্টরের কিছু নিয়মানুসারে।
মনে রাখতে হবে, দুটি সমজাতীয় ভেক্টরকে শুধুমাত্র বিয়োগ করা যায়, ভিন্নজাতীয় ভেক্টর গুলোকে কখনোই বিয়োগ করা যায় না। যেমন বল (force) একটি ভেক্টর রাশি এবং ত্বরন (acceleration) আরেকটি ভেক্টর রাশি। কিন্তু বল এবং ত্বরণ দুজন সমজাতীয় নয়। তাই বল এবং ত্বরণ এই দুটো ভেক্টরকে কখনোই বিয়োগ করা যাবে না।
যদি দুটি সমজাতীয় ভেক্টর A এবং B হয়, তবে এদের বিয়োগফল হবে A – B. এখন এই বিয়োগফলের মান কত হবে সেটা বের করব আমরা।
তার আগে আমাদের একটু জানতে হবে, কোনো ভেক্টরের নেগেটিভ মান হচ্ছে সেই ভেক্টরটি আগে যে দিক বরাবর কাজ করতো তার বিপরীত দিক বরাবর। যদি B ভেক্টরটি নিচের ছবি অনুসারে একদিকে কাজ করে, তবে -B ভেক্টরটি তার ঠিক উল্টো দিক বরাবর কাজ করবে-
তাই, A ভেক্টরের শেষ বিন্দুতে আমরা -B ভেক্টরের আদি বিন্দু যুক্ত করলে সেটাই হবে দুটো ভেক্টরের বিয়োগফলের মান। তাহলে দুটো ভেক্টরের বিয়োগ বলতে বোঝায় প্রথম ভেক্টরের সাথে দ্বিতীয় ভেক্টরের নেগেটিভ মান যোগ করা, অর্থাৎ-
= A + (-B)
তাহলে বলা যায়, কোনো ভেক্টরের আগে মাইনাস চিহ্ন বসানোর মানে হলো সেই ভেক্টরের দিক 180 ডিগ্রি উল্টো করে দেওয়া। এখন (A – B) ভেক্টরের ছবি হবে ঠিক এমন-
এখানে A ভেক্টরের আদি বিন্দু থেকে B ভেক্টরের শেষ বিন্দু পর্যন্ত যে ভেক্টরটি পাওয়া যাবে সেটিই হচ্ছে A – B. এর মান ও দিক হবে A ভেক্টরের আদি বিন্দু থেকে -B ভেক্টরের শেষ বিন্দু পর্যন্ত।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিক্ষেপ ও উপাংশের মধ্যে পার্থক্য
- কুলম্বের সূত্র
- তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি
- ভেক্টর অভিক্ষেপ
- ভেক্টর গুনন
- ভেক্টর বিভাজন
- ভেক্টর রাশির বিয়োগফল
- ভেক্টর লব্ধির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান
- ভেক্টর সম্পর্কিত কিছু সংজ্ঞা
- ভেক্টর সামান্তরিক সূত্র
- ভেক্টরের বন্টন সূত্র
- ভেক্টরের বিনিময় সূত্র
- ভেক্টরের সংযোগ সূত্র
- লব্ধি ভেক্টর কাকে বলে
- স্কেলার ও ভেক্টর রাশি