AIDS বা এইডস এমনই একটি ঘাতক ব্যাধি যা মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দেয় এবং মানুষের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে প্রথম এই রোগ আবিষ্কার হয় এবং ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়।
এইডস কি?
AIDS এর পূর্ণ অভিব্যক্তি হলো Acquired immune deficiency syndrome। এইডস হলো এক ধরণের ব্যধি, যাকে মরণব্যধিও বলা হয়।
Human Immune Deficiency Virus বা HIV নামক ভাইরাস এই AIDS রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। HIV এমনই ভয়ংকর জাতের ভাইরাস যে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে অনুপ্রবেশ করার পর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে HIV আক্রান্ত রোগী যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং যা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
HIV সংক্রমণ
এইচআইভি একটি অতি ক্ষুদ্র বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা কোন মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপায়ে প্রবেশ করে রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংসের মাধ্যমে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রোগ যেমন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া প্রভৃতিতে ঘন ঘন আক্রান্ত হয়। কোন চিকিৎসায় এ সমস্ত রোগ ভালো হয় না। এইচআইভি কোন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করার পর সাথে সাথে কোন লক্ষ্মণ দেখা দেয় না। এইডস হিসেবে প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। সাধারণত এটা মনে করা হয়ে থাকে যে এইচআইভি সংক্রমনের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বছর হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় পরে এইডস ধরা পড়ে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।
এইডস এর কারণ
১.সাধারণত বিভিন্ন বডি ফ্লুইড বা শারীরিক তরলের মাধ্যমে এক জন থেকে আরেক জনের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত, সিমেন, ভ্যাজাইনাল ও রেকটাল ফ্লুইড এবং মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি মাত্রায় থাকে।
২. অসুরক্ষিত বা অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সূচ ব্যবহার করলে।
৩. কোনও সম্ভাব্য মা যদি এইচ আই ভি পজিটিভ হয় তাহলে জন্মের পর তার সন্তানের রক্তেও এই ভাইরাস থাকতে পারে।
৪. স্তন্যপানের সময়।
৫. এইচ আই ভি পজিটিভ আছে এমন কেউ যদি রক্ত দেয় তাহলেও এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এইডস এর লক্ষণ
এইডস এর নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্মণ নেই। তবে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে কোন রোগে আক্রান্ত হর সে রোগের লক্ষ্মণ দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষ্মণ আছে। যেমনঃ
১) এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা কাশি, জ্বর থাকতে পারে।
২) সারা দেহে চুলকানিজনিত চর্মরোগ
৩) মুখ ও গলায় ফেনাযুক্ত এক ধরনের ঘা
৪) লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
এইডস এর প্রধান লক্ষণ গুলো হলো-
- শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া
- এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা বা থেমে থেমে পাতলা পায়খানা হওয়া
- বারবার জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্তি অবসাদ অনুভব করা
- শুকনা কাশি হওয়া ইত্যাদি।
এইডস প্রতিরোধে করনীয়
১. এইচআইভির প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
২. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। একাধিক যৌন সঙ্গী পরিহার করতে হবে।
৩. নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রামিত মানুষ এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
৪. এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সুচ, সিরিঞ্জ, ব্লেড বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার পরিহার করতে হবে। একবার ব্যবহার করা যায় এমন জীবাণুমুক্ত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
৫. শরীরে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে এইচআইভি রয়েছে কি না।
৬. এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকখানি। তবে যেসব মায়েরা প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ৮৫ ভাগ।
৭. জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
UNIAIDS এর পরিসংখ্যান মতে সারাবিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ এইডস দ্বারা আক্রান্ত তার ৪০ শতাংশ হলো নারী। এখন পর্যন্ত এইডস এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তাই কেবল সচেতনতাই পারে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com

Sadia Munmun Tumpa
I am just a girl chasing her dreams, owning all the colors of life, giving you a big smile though dealing with silly problems.
Related posts:
- ঔষধ চলাচল পথের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Route of Drug Administration)
- ঔষধ চলাচলের রাস্তা (Route of Drug Administration)
- জাংক ফুড (Junk Food)
- টিকা কিংবা ভ্যাক্সিন যেভাবে কাজ করে (How Vaccine works)
- প্রোটিন – Protein
- ফার্মাকোডাইনামিক্স ও ফার্মাকোকাইনেটিক্স (Pharmacodynamics & Pharmacokinetics)
- বাতজ্বর কী?
- বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু (Bird Flu & Swine flu)
- বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস (Different types of Viruses)
- ভাইরাস কি (What is Virus)
- ভাইরাসের উপকারীতা ও অপকারীতা (Advantages & Disadvantages of the Virus)
- ভাইরাসের গঠন (The Structure of the Virus)
- ভাইরাসের প্রকারভেদ (Types of Viruses)
- ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি (Reproduction of the Virus)
- রক্তচাপ (Blood Pressure)