বায়ুর তাপ
বায়ুমণ্ডলের মোট শক্তির ৯৯.৯৭% আসে সূর্য থেকে। সূর্য থেকে আগত এ শক্তি বায়ুমণ্ডল তাপীয় শক্তি বা গতিশক্তি আকারে ধারণ করে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা কমে যায়। সাধারণত প্রতি ১০০০ মি: উচ্চতায় ৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যায়। অর্থাৎ প্রতি ১৬৫ মি: উচ্চতায় ১° সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে।
বায়ুতে থাকা তাপ কয়েকটা প্রক্রিয়ায় চলাচল করতে পারে-
- পরিবহন – এই প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়।
- পরিচলন – এই প্রক্রিয়ায় পানি ও বায়ুমন্ডলের উত্তাপের বিনিময় হয়।
- বিকিরণ – এই প্রক্রিয়ায় সূর্যরশ্মি বায়ুমন্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে এবং এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবী তাপ হারিয়ে শীতল হয়।
বায়ুর চাপ
যে কোনো পদার্থের মত বায়ুর নিজস্ব ওজন আছে। বায়ুর এ ওজন জনিত কারণে যে চাপের সৃষ্টি হয় তাকে বায়ুর চাপ (Atmospheric Pressure) বলে।
বায়ুর চাপের নিয়ামক
- উচ্চতা – সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় তত বায়ুর চাপ কমতে থাকে।
- উষ্ণতা – তাপে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়, ফলে বায়ুর চাপ কমে। তাপ কমে গেলে বায়ুর চাপ বাড়ে।
- জলীয়বাষ্প – জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা হালকা। তাই বায়ু আর্দ্র হলে বায়ুর চাপ কম হয়, পক্ষান্তরে বায়ু শুষ্ক থাকলে বায়ুর চাপ বেশি হয়।
ব্যারোমিটার (Barometer)
যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর চাপ পরিমাপ করা হয়, তাকে ব্যারোমিটার বলে৷ ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের উচ্চতা হঠাৎ কমে গেলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা সূর্যতাপে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে বায়ুর চাপ কমে গেছে। এরূপ হলে ঝড়ের সম্ভাবনা বোঝায়।
বায়ুর স্বাভাবিক চাপ: ভূ-পৃষ্ঠে / সমুদ্র সমতলে / একজন মানুষের উপর স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় চাপ-
- ব্যারোমিটারে ৭৬ সে. মি. পারদ উচ্চতার সমান
- ১০.৩ মি. বা ৩৪ ফুট পানিস্তম্ভের সমান
- প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৪.৭২ পাউন্ড বা ৬.৭ কেজি
- প্রতি বর্গ সে. মি. ১ কেজি বা ১০ নিউটন
বায়ুমণ্ডলের চাপের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানি লিফ্ট পাম্পের সাহায্যে সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতা থেকে পানি উঠান যায়। সাধারণ পাম্পে পানিকে ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতায় উঠানো যায় না, কারণ সাধারণ পাম্প যেহেতু বায়ুমণ্ডলের চাপ দ্বারা পানিকে উপরে তোলে, তাই সাধারণ পাম্প পানিকে ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতায় উঠাতে পারে না।
বায়ুর আদ্রতা
জলীয়বাষ্প বায়ুর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করাকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে। বায়ুমন্ডলে জলীয়বাস্পের পরিমাণ শতকরা ১ ভাগেরও কম। বায়ুতে জলীয়বাষ্প যখন একদম থাকে না, তাকে শুষ্ক বায়ু বলে। যে বায়ুতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে, তাকে আর্দ্র বায়ু বলে। আর্দ্র বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ থাকে প্রায় শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ। বায়ুর আর্দ্রতা দুভাবে প্রকাশ করা যায়-
- পরম আর্দ্রতা (Absolute humidity)
- আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative humidity)
পরম আর্দ্রতা : কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণকে পরম আর্দ্রতা বলে। বায়ুর পরম আর্দ্রতা 10-2 Kgm-3 বলতে বুঝায়, এক ঘনমিটার বায়ুতে 10-2Kg জলীয়বাষ্প বিদ্যমান।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা : কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণ আর একই আয়তনের বায়ুকে একই উষ্ণতায় পরিপৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন, এ দুটির অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। একে শতকরায় প্রকাশ করা হয়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা = (বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ / একই উষ্ণতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা) x 100
আবহাওয়ার ৯০% আর্দ্রতা বলতে বুঝায়, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সম্পৃক্ত অবস্থার শতকরা ৯০ ভাগ আছে।
হাইগ্রোমিটার : বায়ুর আর্দ্রতা হাইগ্রোমিটার (Hygrometer) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বায়ুর তাপমাত্রা কমে গেলে জলীয়বাষ্পের ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। তখন বায়ুকে পরিপৃক্ত করতে পূর্বের চেয়ে কম জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন হয়। ফলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়।
পরিপৃক্ত বায়ু : কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয়বাষ্প বায়ুতে থাকলে বায়ু আর জলীয়বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না। তখন সেই বায়ুকে পরিপৃক্ত বায়ু বলে।
শীতকালে পমেট বা গ্লিসারিন ব্যবহারের কারণ : শীতকালে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম বলে বাতাস শরীরের অনাবৃত অংশ হতে জলীয় বাষ্প শোষণ করে নেয়। তাই শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যায়। ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফাটা বন্ধ করতে পমেট বা গ্লিসারিন লাগিয়ে চামড়াকে ভিজা রাখা হয়।
শীতকালে ভিজা কাপড় দ্রুত শুকানোর কারণ : বর্ষার দিনে বাতাস জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত থাকে। ফলে বাতাস অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না। শীতকালে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে বলে বাতাস ভিজা কাপড় হতে দ্রুত জলীয়বাষ্প শোষণ করে সম্পৃক্ত হতে চায়। ফলে শীতকালে ভিজা কাপড় দ্রুত শুকায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- চট্টগ্রাম ও বগুড়ার তাপমাত্রা সমান। কিন্তু আপেক্ষিক আর্দ্রতা যথাক্রমে ৭৫% ও ৫০% বলে বগুড়া তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক হবে।
- বায়ুর তাপমাত্রা কমলে জলীয়বাষ্পের ধারণ ক্ষমতাও কমে। তখন বায়ুকে পরিপৃক্ত করতে পূর্বের চেয়ে কম জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন হয়। ফলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে। পক্ষান্তরে, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আপেক্ষিক রোধ কাকে বলে
- গ্যাসের তরলীকরণ
- তাপধারণ ক্ষমতা ও আপেক্ষিক তাপ
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- পরিবাহিতা, আপেক্ষিক পরিবাহিতা ও অতিপরিবাহিতা
- পানিচক্র
- বায়ু প্রবাহ
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু
- বায়ুমণ্ডলীয় স্তর
- বায়ুমন্ডলের স্তর
- বারিমণ্ডল
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ
- রোধের সূত্র ও আপেক্ষিক রোধ
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ