প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মানবসমাজ ও সভ্যতার বিকাশকে ৪টি ধাপে বা যুগে বিভক্ত করেছেন, যথা-
- প্রাচীন প্রস্তরযুগ,
- নব্য প্রস্তরযুগ,
- ব্রোঞ্জযুগ এবং
- লৌহযুগ।
প্রাচীন প্রস্তরযুগ
প্রস্তরযুগ বলতে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারের সংস্কৃতিকালকে বোঝায়। আর প্রাচীন প্রস্তরযুগ বলতে সে যুগ বা কালকে বোঝায় যখন আদিম মানুষ ভোঁতা ও অমসৃণ পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। প্রাচীন প্রস্তরযুগ আজ থেকে ৬ লক্ষ বছর পূর্বে আরম্ভ হয়েছিল এবং তা ১০ হাজার বছর পূর্বে শেষ হয়েছিল। প্রাচীন প্রস্তরযুগকে ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা- (ক) নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগ (খ) মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ এবং (গ) উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগ।
নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগ (৬০০০০০-১০০০০০) : নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ পানি সরবরাহের উৎস, শিকার করার উপযোগী খোলা স্থানে বসবাস করত। তারা পাথরের গায়ে নদীর গতিপথ খোদাই করে রাখত। নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগের প্রথম দিকে মানুষ কাঁচা মাংস ভক্ষণ করত, কিন্তু কালক্রমে তারা আগুন জ্বালাবার কৌশল আয়ত্তে এনে মাংস আগুনের তাপে ঝলসে খেতে অভ্যাস করে। এ যুগের মানুষ হল জার্মানীতে প্রাপ্ত হাইডেলবার্গ, ইন্দোনেশিয়ার জাভা মানব এবং চীনের পিকিং মানব।
মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ (১০০০০০-৩০০০০) : মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ ১ লক্ষ বছর আগে শুরু হয় এবং ৩০ হাজার বছর পূর্বে শেষ হয়। পূর্বের তুলনায় এ যুগের মানুষ যেসব হাতিয়ার তৈরি করত তা ছিল অধিকতর সরু ও ধারালো। মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত। তারা গুহায় বসবাস করত এবং মানুষের মৃত্যু হলে হলুদ ও লাল রং মেখে মৃতদেহ কবর দিত। এ যুগের মানুষ আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিল। মৃত্যুর পরে আত্মা দেহে পুনরায় ফিরে আসে বলে তারা বিশ্বাস করত। এ বিশ্বাস থেকেই এ যুগের মানুষ কবরের মধ্যে খাদ্য, পানীয়, মৃতের ব্যবহার্য হাতিয়ার প্রভৃতি রেখে নানা রকম আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কবর দিত। রুগূণ ও বয়স্কদের প্রতি যত্ন নেওয়ার রীতি এ সময় হতে চালু হয়েছিল।
উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগ (৩০০০০-১০০০০) : উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগের যাত্রা শুরু হয় প্রায় ৩০০০০ বছর পূর্বে এবং তা খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ যুগের মানুষেরা আরও উন্নত ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়। আল নামক ছিদ্রকারী সুচ ক্ষেপণাস্ত্র ও কাঁটাবিশিষ্ট হারপুন প্রভৃতি এ সময়ের উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ হল ক্রোম্যাগনন। এরা ছিল শিকারি। তারা গুহার দেয়ালে ছবি অঙ্কন করত। এসব ছবির মধ্যে ধাবমান অবস্থায় বাইসন, ঘোড়া, হরিণ, প্রভৃতি জীবজন্তুর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। তারা নানারকম অলংকার যেমন- হাতির দাঁত, পুঁতিজাতীয় গুটকা, হাড়, শামুক ও ঝিনুকের মালা ব্যবহার করত। এ যুগের মানুষ মৃত্যু, আত্মা, নিদ্রা প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিল। মৃত্যু হলে আত্মা দেহ হতে চলে যায় বলে তাদের বিশ্বাস ছিল।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- অভিস্রবণ বলতে কী বোঝ?
- উচ্চ রক্তচাপকে কেন নীরব ঘাতক বলা হয়?
- জৈব রসায়নের ইতিহাস (History of Organic Chemistry)
- পদার্থের প্লাজমা অবস্থা কাকে বলে?
- প্রত্নতাত্ত্বিক যুগবিভাগ : নব্য প্রস্তরযুগ
- প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়নচর্চা কী নামে পরিচিত?
- প্রাচীন জ্যোতির্বিদ – Ancient Astronomer
- প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা – Ancient Astronomy
- ভাইরাসের উপকারীতা ও অপকারীতা (Advantages & Disadvantages of the Virus)
- ভাষা
- ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমদের অবদান (The Contribution of Muslims in the Development of Physics)
- রক্ত সংযোজন (Blood Transfusion) বলতে কি বোঝ?
- সমরূপতা কি?
- সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ (Different stages of Society & Civilization)
- স্ট্রোক বলতে কী বুঝ?