নব্য প্রস্তর যুগ এর সূচনা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ অব্দের পূর্বেই মধ্যপ্রাচ্যে, পরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এবং সর্বশেষে ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে ব্রিটেনে। সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিহাসে নব্য প্রস্তরযুগ একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য আবিষ্কারের দিক দিয়ে এ যুগের মানুষ অনেক উন্নতি সাধন করেছিল।
নব্য প্রস্তর যুগ এর উৎপাদন ব্যবস্থা
এ যুগের মানুষ উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রাচীন প্রস্তরযুগ অপেক্ষা অনেক উন্নতি সাধন করেছিল। তারা খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির স্থলে খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতির প্রবর্তন করে। ভূমি চাষ করে, গবাদিপশু পালন করে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি খাদ্যসম্পদে নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এ যুগে স্থানীয় প্রয়োজন মেটাবার পরও বাড়তি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। সর্ব প্রথম এশিয়া মাইনর বা ইরাক, ইরানের কোনো স্থানে কৃষি আবাদ শুরু হয়। এ অঞ্চলের মানুষ সর্বপ্রথম গম, বার্লি, যব, কুমড়া, গোলআলু প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করত। কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল ফলায় সমাজে অনেকেই হস্তশিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি কাজে যোগ দেয়। ফলে এ সময়ে বাজার ও শহর গড়ে ওঠে। এজন্য ভি. গর্ডন চাইল্ড (Gordon Child) নব্য প্রস্তর যুগ কে নবপলীয় বিপ্লব নামে আখ্যা দেন।
নব্য প্রস্তর যুগ এর আবিষ্কার
এ যুগের মানুষ মসৃণ, ধারালো ও উন্নত ধরনের পাথরের হাতিয়ার তৈরি করে। তারা উন্নত ধরনের চাকু, কুঠার, গীতি প্রভৃতি তারা ব্যবহার করত। মানুষ নব্য প্রস্তর যুগ এর সময় কুঠারের সঙ্গে হাতল লাগানোর কৌশল আয়ত্ত করেছিল। তখন কোদাল তৈরি করা হত। হরিণের শিং দিয়ে তৈরী গাঁইতি মাটি আলগা করার কাজে লাগাত। বর্শা ও তীরের সাহায্যে এ যুগের মানুষ দূরের পশুপাখি শিকার করত। এ যুগে নিড়ানি ও গর্তকারীর উপকরণ (লাঠির) ব্যবহার ছিল আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এ যুগের সর্বাপেক্ষা বড় আবিষ্কার হল চাকা। মাটির পাত্র তৈরি করার কাজে চাকা ব্যবহারের সাথে সাথে যন্ত্রশিল্পের সূত্রপাত হয়। তাছাড়া এ যুগের শেষের দিকে মানুষ লাঙল আবিষ্কার করে কৃষিকাজ শুরু করে। তাঁত এ যুগের আরও একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
নব্য প্রস্তরযুগের ধর্মীয় জীবন
মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগের ধর্মীয় রীতিনীতি তখনও লোপ পায় নি। তখনকার মানুষ বিশ্বাস করত যে আত্মা, প্রেতাত্মা, ঝড়-বজ্রপাত মানুষের অকল্যাণ করতে পারে। তারা অপদেবতা, আত্মা-প্রেতাত্মা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নানা রকম আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করত। এছাড়া তখনকার মানুষ রোগ, শোক, মৃত্যু বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে এসব হতে পরিত্রাণ লাভের আশায় জাদুকরের শরণাপন্ন হত।
মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ ও উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষের ন্যায় নব্য প্রস্তর যুগ এর মানুষেরা বিশ্বাস করত যে মানুষের মৃত্যুর পরে আত্মা দেহে পুনরায় ফিরে আসে। সেজন্য তারা মৃতদেহের সৎকার করার সময় কবরের মধ্যে খাদ্য, পানীয়, মৃতের ব্যবহার্য হাতিয়ার প্রভৃতি রেখে দিয়ে নানা প্রকার আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কবর দিত। এছাড়া নব্য প্রস্তর যুগ এর মানুষ প্রকৃতিপূজা যেমন- গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা ইত্যাদির পূজা করত। কালক্রমে এ যুগে মানুষেরা ঈশ্বরপূজা করতে শুরু করে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-