কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩) ছিলেন পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ। পোল্যান্ডের থর্ন শহরে তার জন্ম হয়। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তার বাবা মারা যান। তারপর তিনি চাচার বাসায় বড় হন। সেই বাসায় একটা বিশাল লাইব্রেরি ছিলো। তিনি সারাদিন বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়ে সেখানে সময় কাটিয়ে দিতেন। তিনি গ্রীক Astronomy পড়ার জন্য গ্রীক ভাষাও শিখেছিলেন।
ক্রাকাও ইউনিভার্সিটি তখন গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। তিনি ক্রাকাও ইউনিভার্সিটি থেকে ল্যাটিন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল এবং দর্শন নিয়ে পড়ালেখা করেছিলেন। তখনকার সময় এরিস্টটল এবং টলেমির মতবাদ অনুযায়ী Astronomy পড়ানো হতো। কারন জ্যোতির্বিদ্যার ছাত্রছাত্রীরা যাতে সহজে ক্যালেন্ডার বুঝতে পারে, পবিত্র দিন গুলো নিয়ে জানতে পারে, মানুষের জন্ম দেখে তার ভাগ্য গণনা করতে পারে সেজন্য। অর্থাৎ তখন Astronomy (জ্যোতির্বিদ্যা) এবং Astrology (জোতিষবিদ্যা) প্রায় পাশাপাশি ছিলো।
কোপার্নিকাস অনেক ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। গীর্জাগুলো ছিলো তখন সব ক্ষমতার উৎস। কোপার্নিকাসের চাচা গীর্জায় কাজ করতেন বলে তিনি কোপার্নিকাসকে গীর্জায় যোগ দিতে বলেন। তাই তিনি বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গীর্জা বিষয়ক আইন নিয়ে পড়ে গীর্জার পাদ্রী হয়ে যান। তবে পাদ্রীর কাজ চলার পাশাপাশি তার মহাকাশ নিয়েও গবেষণা চলে। তিনি একবার রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তখন ছাত্রদেরকে Astronomy পড়ানোর সময় টলেমি এবং এরিস্টটলের মতবাদ পড়াতেন। কিন্তু তার মনে তখন সন্দেহ জাগতো আসলেই পৃথিবী কি মহাবিশ্বের কেন্দ্র কিনা! এই কনফিউশনের জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত তার চাকুরি ছেড়ে দেন কারন প্রায়ই তিনি ভাবতেন তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের ভুল পড়াচ্ছেন কিনা।
১৫১৪ সালের দিকে তিনি তার বন্ধুদের মাঝে নিজের লেখা একটা বই বিতরণ করেন। তিনি বইতে লিখেন যে সূর্য হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি সূর্যকে স্থির ধরে তার চারপাশে পৃথিবীকে গতিশীল বলেন বইতে। এটা ছিলো এরিস্টটল এবং টলেমির মতবাদের বিরোধী কথা। তখনকার সময় এরিস্টটল এবং টলেমিকে ধর্মীয় গুরু মানা হতো। তাদের কথাই ছিলো সব। তাই তার বন্ধুরা এই বইয়ের বিরোধীতা করে। তবে কোপার্নিকাস প্রচন্ড খুঁতখুঁতে ছিলেন বলে তিনি তার বেশিরভাগ কাজ প্রকাশ করতেন না উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া ছাড়া। তবে তার এই বইটি শুধুমাত্র তার বন্ধুদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বেশ কিছু শিক্ষকেরাও এই বইয়ের বিরোধীতা করে তখন।
কোপার্নিকাস প্রথম আধুনিক ক্যালেন্ডার বানান। সেখানে তিনি সঠিকভাবে বছর এবং মাসের হিসাব তুলে ধরেন। তিনি অর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়েও কাজ করেছিলেন দেশের জন্য। তখনকার সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা চলতো। তাই এক অঞ্চলের লোক অন্য অঞ্চলের মুদ্রা দিয়ে কিছু করতে পারতো না। সেজন্য কোপার্নিকাস সারাদেশে একই ধরনের মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেন।
কোপার্নিকাসের মনে প্রশ্ন জাগে সূর্য যদি একই বৃত্তাকার পথে পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে তবে পৃথিবীর season বা ঋতু পরিবর্তিত হয় কিভাবে! তখনকার সময় দূরবীন ছিলো না বলে তিনি রাতের পর রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে তারাদের গতিবিধি লক্ষ করতেন। তিনি যেসব তথ্য পেতেন সেগুলো একটা খাতায় লিখে রাখতেন। অনেকদিন ধরে মহাকাশ নিয়ে রিসার্চ করার ফলে তিনি বুঝতে পারেন পৃথিবী না, সূর্যকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র ধরলে অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
কোপার্নিকাস তার জীবনের সব পর্যবেক্ষণ লিখে রাখেন একটা বইতে যার নাম ছিলো De revolutionibus. বইটিতে দুটো বড় বড় সিদ্ধান্ত ছিলো-
- পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তন করে
- সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং সূর্যের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথ ধরে অন্যান্য গ্রহরা অবস্থান করে। তবে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে।
তিনি তার এই বইটা বেঁচে থাকতে প্রকাশ করে যাননি। কিন্তু তার এই বইটাকে হাতে পাওয়ার পর মানুষ সেটাকে কৌতুক বলে ধরে নেয়।
জীবনের শেষভাগে কোপার্নিকাসের পরিচয় হয় এক জার্মান পন্ডিতের সাথে। তার নাম হচ্ছে রেটিকাস। রেটিকাস তার লেখা এই বইটি পড়ে অনেক মুগ্ধ হয় এবং বইটা ছাপাতে চায়। কোপার্নিকাস তখন রেটিকাসের উপর বই ছাপানোর সব কাজ তুলে দেন। বই যেখান থেকে ছাপানো হয় সেখানের লোকজনেরা ভয় পেয়ে যায় বইয়ের লেখা দেখে। তাই তারা বইয়ের উপর ক্যাপশন দেয় যে এই বইয়ের সব বিষয়বস্তু সত্য না, অনুমানের উপর ভিত্তি করে লিখা। বই প্রকাশের পর বই যখন কোপার্নিকাসের হাতে আসে তখন তিনি মৃত্যুশয্যা। তিনি তখন শুধু বইয়ের কয়েকটা পেইজ উল্টিয়ে দেখতে পেরেছিলো, তারপর মারা যান তিনি। তবে তার গবেষণার খাতাটির তথ্য ব্যবহার করে পরবর্তীতে রিসার্চ করে গিয়েছেন গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, আইনস্টাইনসহ আরো অনেকেই।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-