পৃথিবীর বাইরের দিকে গ্যাসের একটা আবরণ থাকে যেটা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের জন্য পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের দিকে চলে যায় না। একে পৃথিবীর Atmosphere বা বায়ুমন্ডলের স্তর বলে। পৃথিবীর Atmosphere হচ্ছে অনেক জটিল একটা গতিশীল বা dynamic সিস্টেম যেখানে বিভিন্ন ধরনের chemical compound এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পৃথিবী পৃষ্ট থেকে প্রায় ১০০০০ কিমি উপর পর্যন্ত এই atmosphere এর অবস্থান।
আমাদের পৃথিবী বেশি কয়েকবার সম্পূর্ণ বায়ুমন্ডল হারিয়ে ফেলেছিলো। প্রথমবার হারিয়েছিলো যখন পুরো পৃথিবীর উপরিভাগে মাটির বদলে ম্যাগমা বা লাভা দ্বারা আবৃত ছিলো তখন। আবার যখন ছোট একটা গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিলো তখন পুরো বায়ুমন্ডল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। এই ধরনের একটা ঘটনায় চাঁদের সৃস্টি হয়েছিলো।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্তর এর মধ্যে evaporation (বাষ্পীভবন), condensation (ঘনীভবন), cloud formation (মেঘ তৈরিকরণ), Humidity (আদ্রতা), বায়ুপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, হ্যারিকেন, কুয়াশা, তুষারপাত, বৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়া পৃথিবীর atmosphere সূর্য থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষতিকর রেডিয়েশনকে ধরে ফেলে যাতে আমাদের শরীরে সেসব রেডিয়েশন ক্ষতি না করে। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে atmosphere এর ওজোন গ্যাস আমাদেরকে রক্ষা করে। রাসায়নিকভাবে আমাদের atmosphere এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস থাকে যেমন N2, O2, Ar, CO2 ইত্যাদি।
বায়ুমন্ডলের স্তর এর প্রকারভেদ
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্তর এর মধ্যে কয়েকটা ধাপ বা layer দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এই ধাপ গুলোকে দুটি ভাগ করেছেন-
- সমমণ্ডল (Homo-sphere)
- বিষমমন্ডল (Hetero-sphere)
এই দুটো Atmospheric Layer কে আবার উচ্চতা, তাপ ও চাপের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে আরো ৫টা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- Troposphere, Stratosphere, Mesosphere, Thermosphere এবং Exosphere.
বায়ুমন্ডলের স্তর সমমণ্ডল (Homo-sphere)
বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে প্রায় ৮০ কিমি পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। Troposphere, Stratosphere এবং Mesosphere নিয়ে এই স্তরটি গঠিত।
বায়ুমন্ডলের স্তর Troposphere (ট্রপোমণ্ডল বা ঘনমন্ডল)
পৃথিবীর একদম surface এর দিকে থাকে Troposphere যেটি পৃথিবীর ভূমি থেকে প্রায় ১৪ কিমি উপরে অবস্থিত। এই স্তরে বায়ুর বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প থাকে। এই স্তরে মানুষ ও অন্যান্য জীবের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই ট্রপোমন্ডল বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। আমাদের পৃথিবীর সমস্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাদি এই স্তরেই ঘটে যেমন টাইফুন, ঘুর্নিঝড়, টর্নেডো, বৃস্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি সব কিছু। সাধারনত ট্রপোস্ফিয়ারের নিচের অংশ (বা পৃথিবীর ভূমির কাছের অংশ) গরম থাকে এবং উচ্চতা বৃদ্বির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে ঠান্ডা হতে থাকে। প্রতি কিমি উপরের দিকে ৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে এই স্তরে। ট্রপোস্ফিয়ার সমস্ত বায়ুমন্ডলের প্রায় ভরের ৮০% ধারন করে।
Stratosphere (স্ট্রাটোমন্ডল বা শান্তমন্ডল)
ট্রপোমন্ডলের ঠিক উপরেই শুরু হয়েছে স্ট্রাটোমন্ডল। এই স্তর পৃথিবীর ভূমির উপর ১৩ কিমি থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরে রয়েছে ওজন নামের একটি গ্যাস। অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু একসাথে মিলিত হবার ফলে এই ওজোন স্তর গঠিত হয়। এই মিলিত তিন পরমাণুর অক্সিজেন অথবা ওজোন গ্যাস অথবা ওজোন স্তর সূর্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মি অথবা সৌর বিকিরন শোষণ করে তা থেকে আমাদের রক্ষা করে। ওজোন স্তর হচ্ছে সেই বায়ুমন্ডলের স্তর যেখানে তুলনামুলকভাবে বেশী মাত্রায় ওজোন গ্যাস সমুহ থাকে এবং এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশী হয়। এই স্তর এবং এর উপরের দিকে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাস খুব কম পরিমাণে থাকে।
Atmosphere এর এই স্তরে সবচেয়ে বেশী জেট প্লেন এবং আবহাওয়া বেলুন উড়ে। আমাদের যাত্রীবাহী প্লেন গুলো তখনই খুব দ্রুত উড়তে পারে যখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বল বা আকর্ষণ বলের জোর কমে যায় এবং বাতাসের সাথে ঘর্ষণ কমে যায়। এই দুটো ঘটনাই এই স্তরে ঘটে। এই স্তরের তাপমাত্রা মেরু অঞ্চলের চেয়ে প্রায় ৪০ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড নিচে। তাই সূর্যের ভয়ানক সব রশ্মি ওজোন স্তরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলেও আমাদের জীবনযাত্রায় কোনো প্রভাব পরে না।
Mesosphere (মেসোমন্ডল)
Stratosphere শেষ হলে Mesosphere স্তরের শুরু হয়। এই স্তরের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুর তাপমাত্রা কমতে থাকে। Mesosphere সমুদ্রপৃষ্টের ৫০ কিমি থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। উল্কাপিন্ড সাধারণত ৭৬ কিমি থেকে ১০০ কিমি এর মধ্যে উচ্চতায় মেসোস্ফিয়ার পর্যন্ত এসে ধ্বংস হয়ে যায়। মূলত মহাকাশ থেকে আগত বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উল্কাপিন্ড এখানে এসে ধ্বংস হয়ে যায়।
মেসোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আবার কমে যায়। মেসোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত মেসোপজে তাপমাত্রা এত কমে যায় যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান এবং ঐ স্থানের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫° সেলসিয়াস (-১২০° ফাঃ, ১৯০ কেলভিন)। এই উচ্চতায় তাপমাত্রা -১০০° সেলসিয়াস (-১৫০° ফাঃ; ১৭০ কেলভিন) পর্যন্ত কমতে পারে। এই স্তরের ঠান্ডা তাপমাত্রার কারনে এখানে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে।
বিষমমন্ডল (Hetero-sphere)
বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে প্রায় ৮০ কিমি থেকে ১০০০০ কিমি পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত। Thermosphere এবং Exosphere হচ্ছে এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
বায়ুমন্ডলের স্তর Thermosphere (তাপমন্ডল)
Thermosphere এর অবস্থান হচ্ছে পৃথিবীর ভূমির ৮০ কিমি থেকে ৭০০ কিমি উপরে। এই স্তর প্রায় বায়ুশুন্য। এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ে তাই এর নাম তাপমন্ডল। এই স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এই স্তরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১,৫০০° সেলসিয়াস (২,৭০০° ফারেনহাইড) পর্যন্ত হয়। এই স্তরের সবচেয়ে উপরের বাতাসের তাপমাত্রা স্থির থাকে। তাপমাত্রার এই স্থির অংশকে সমতাপ অঞ্চল বা Equal Heat Zone বলে।
আমাদের পৃথিবীর সমস্ত স্যাটেলাইট এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর কক্ষপথ এই স্তরের ৩২০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটারের (২০০ এবং ২৪০ মাইল) মধ্যে অবস্থিত।
আয়নোস্ফিয়ার (Ionsphere)
থার্মোস্ফিয়ারের নিম্নভাগকে আয়নোস্ফিয়ার (Ionsphere) বলা হয়। বিজ্ঞানী কেনেলি ও হেভিসাইড সর্বপ্রথম আয়নোস্ফিয়ারের উপস্থিতি প্রমাণ করেন। থার্মোস্ফিয়ারের নিম্নভাগে এই স্তরটি (৮০-১২০ কিমি) অবস্থিত। এটি আবার দুটি উপস্তরে ভাগ করা থাকে-
- D-স্তর (বিস্তার ৮০-৯০ কিমি) ও
- E-স্তর বা কেনেলি-হেভিসাইড স্তর (বিস্তার ৯০-১২০ কিমি)
এই স্তরের বাতাস আয়নিত অবস্থায় থাকে, অর্থাৎ এই বিরাট অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে থাকে। এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে। তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে এখানে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে। ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিওর মাহ্যমে বাড়িতে বসে শুনতে পাই। বিপজ্জনক X-রশ্মির থেকে আয়নোস্ফিয়ার জীবজগতকে রক্ষা করে।
Exosphere (এক্সোমন্ডল)
Exosphere হচ্ছে পৃথিবীর ভূমি থেকে ৭০০ কিমি উপরে অবস্থিত। অর্থাৎ Exosphere এর অবস্থান হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের মহাকাশের দিকে। এই স্তরে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কিছু ভারী অণু যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে।
বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক গঠন
পৃথিবীর atmosphere বা বায়ুমন্ডলের স্তর হচ্ছে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক গ্যাসের জটিল মিশ্রণ। আমাদের atmosphere এর সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে আছে N2 gas, প্রায় 78%। এটি প্রকৃতিতে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে বলে কারো সাথে বিক্রিয়া করে না। অক্সিজেন হচ্ছে Atmosphere এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি গুরুপ্তপূর্ণ গ্যাস যেটির পরিমান শতকরা 21%। প্রাণি এবং কিছু ব্যাকটেরিয়ার শ্বাসকার্য চালানোর জন্য এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়। নাইট্রোজেনের চেয়ে অক্সিজেনের সক্রিয়তা বেশি থাকে বলে এটি লোহার উপর মরিচা তৈরি করে এবং আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে। Atmosphere এর মধ্যে 0.9% হচ্ছে Ar gas (আর্গন গ্যাস) যেটা এক ধরনের নিষ্ক্রিয় গ্যাস। তাই এটি প্রকৃতিতে কারো সাথে সাধারন অবস্থায় বিক্রিয়া করেনা। আবার atmosphere এর 0-4% Water Vapor এবং খুবই কম পরিমান N2O, O2, CH4 ও CO2 থাকে। CO2 এর উপস্থিতি অন্যান্য গ্যাসগুলোর চেয়ে কম হলেও এটির গুরুপ্ত অনেক।
বায়ুমন্ডলের আরো কিছু ঘটনা
উদ্ভিদ Atmosphere এর CO2 কে কাজে লাগিয়ে photosynthesis প্রক্রিয়াতে নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে, তাই CO2 এর পরিমান বেশি কমে গেলে উদ্ভিদ মারা যাবে। আবার CO2 gas গ্রীনহাউজ গ্যাস হিসেবে পরিচিত। কারন এই গ্যাস সূর্য থেকে আসা বিকিরণকে আটকে রাখতে পারে এবং পৃথিবীর পরিবেশকে গরম রাখতে পারে। তাই পরিবেশে যত বেশি CO2 gas থাকবে তত বেশি পরিবেশ গরম হওয়া শুরু করবে।
Atmosphere এর 15-60 km উপরে এক ধরনের গ্যাসের স্তর দেখা যায় যাকে ওজোন গ্যাস বলে। এটি তিনটি অক্সিজেন পরমানু নিয়ে গঠিত একটি গ্যাস যার সংকেত O3. সূর্য short wavelength এর অতিবেগুনি রশ্মি তৈরি করতে পারে। এটি সরাসরি যদি আমাদের শরীরে আসে তবে আমাদের স্কিন ক্যান্সার হতে পারে, চামড়া পুড়ে যেতে পারে। O3 gas এসব ক্ষতিকর রশ্মিগুলোকে শোষণ করে নিতে পারে এবং আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে।
তবে আমাদের Atmosphere থেকে এসব গ্যাসের সঠিকমাত্রার উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের পরিবেশ সেসব কারনে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Troposphere অঞ্চলের প্রায় পুরোটা জুড়ে O2, N2, CO2 গ্যাস এবং জলীয় বাষ্প থাকে। Stratosphere অঞ্চলে ওজোন গ্যাস বেশি দেখা যায় যেটি সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর রেডিয়েশনকে বাধা দিতে পারে।
নিচে আমাদের Atmosphere এর গ্যাসগুলোর পরিমান দেখে ফেলি-
ক্রাশ স্কুলের Youtube চ্যানেলের জয়েন করুন-
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com