বায়ুমন্ডল যে সমস্ত উপাদানে গঠিত তাদের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও উষ্ণতার পার্থক্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়-
- ট্রপোমন্ডল (Troposphere)
- স্ট্রাটোমন্ডল (Stratosphere)
- মেসোমন্ডল (Mesosphere)
এরা তিনজন সমমন্ডল (Homosphere) এর অন্তর্ভুক্ত।
- তাপমন্ডল (Thermosphere)
- এক্সোমন্ডল (Exosphere)
এরা তিনজন বিষমমন্ডল (Heterosphere) এর অন্তর্ভুক্ত।
ট্রপোমন্ডল (Troposphere)
- ভূ-পৃষ্ঠের নিকটমত বায়ু স্তরকে ট্রপোমন্ডল বলে।
- এ স্তরের গভীরতা মেরু এলাকায় ৮ কিলোমিটার এবং নিরক্ষীয় এলাকায় ১৬ থেকে ১৯ কিলোমিটার।
- আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত যাবতীয় প্রক্রিয়ার বেশির ভাগ বায়ুমন্ডলের এই স্তরে ঘটে।
- মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই এই স্তরে সৃষ্টি হয়।
- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব কমতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে উষ্ণতা। সাধারণভাবে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় ৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
- উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়।
- নিচের দিকের বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে।
- ধূলিকণা অবস্থানের কারণে সমগ্র বায়ুমন্ডলের ওজনের ৭৫ ভাগ এ স্তরে থাকে।
ট্রপোবিরতি (Tropopause)
ট্রপোমন্ডলের সীমানা উপরের দিকে হঠাৎ করে শেষ না হয়ে ধীরে ধীরে এর গুণাবলি পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তী স্তর স্ট্রাটোমন্ডলের গুণাবলির সঙ্গে মিশে গেছে। ট্রপোমন্ডলের শেষ প্রান্তের অংশের নাম ট্রপোবিরতি (Tropopause)। এখানকার তাপমাত্রা -৫৪° সেলসিয়াস।
স্ট্রাটোমন্ডল (Stratosphere)
- বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্রাটোমন্ডল যা ট্রপোবিরতির উপরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এ স্তরেই ওজন (O3) গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে আছে। এ ওজোন স্তর সূর্যের আলোর বেশিরভাগ অতিবেগুনী রশ্মি শুষে নেয়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ৪º ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
- এ স্তরের ওপরেই অবস্থান করে স্ট্রাটোবিরতি।
- এ স্তরের বায়ুতে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোন জলীয় বাষ্প থাকে না। ফলে আবহাওয়া থাকে শান্ত ও শুষ্ক। ঝড় বৃষ্টি থাকে না বলেই এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত জেট বিমানগুলো চলাচল করে।
- ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা পুনরায় কমতে থাকে এবং এটি স্ট্রাটোবিরতি (stratopause)। স্ট্রাটোমন্ডল ও মেসোমন্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থির অবস্থাকে স্ট্রাটোবিরতি বলে।
মেসোমন্ডল (Mesosphere)
- স্ট্রাটোবিরতির উপরে অবস্থিত বায়ুমন্ডলের তৃতীয় স্তর।
- স্ট্রাটোবিরতির উপরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে মেসোমন্ডল বলে।
- বায়ুমন্ডলের শীতলতম স্তর এটি।
- তাপমাত্রা ৮৩° সেলসিয়াস।
- মহাকাশের উল্কা গুলো এখানে এসেই পুড়ে যায়।
- এই স্তরের উপরে তাপমাত্রা কমে যাওয়া থেমে যায়। এই স্তরকে মেসোবিরতি (Mesopause) বলে।
তাপমন্ডল (Thermosphere)
- মেসোবিরতির উপরের অংশ থেকে তাপমন্ডল শুরু হয়।
- মেসোপজের উপরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে তাপমন্ডল বলে।
- এই মন্ডলে বায়ুস্তর অত্যন্ত হালকা ও চাপ ক্ষীণ।
- এই স্তরের তাপমাত্রা ১৪৮০° সেলসিয়াস।
তাপমন্ডল মেসোমন্ডল হতে উপরের দিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত-
- আয়নোস্ফিয়ার,
- এক্সোস্ফিয়ার ও
- ম্যাগনিটোস্ফিয়ার
তাপমন্ডলের নিম্ন অংশকে আয়নমন্ডল (ionosphere) বলে। রঞ্জন রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মির সংঘাতে এ অংশের বায়ু আয়ন যুক্ত হয় এবং বেতার তরঙ্গ এ আয়নমন্ডলেই বাধাগ্রস্ত হয়।
বায়ুমন্ডলের আয়নমন্ডলের উপরের স্তরে উল্কা ও কসমিক কণার সন্ধান পাওয়া গেছে।
এক্সোমন্ডল (Exosphere)
- তাপমন্ডলের উপরে প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে তাকে এক্সোমন্ডল বলে।
- এর তাপমাত্রা ৩০০ থেকে ১৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- এই স্তরের উপাদান হিসেবে খুব সামান্য পরিমাণ গ্যাস যেমন: অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, আর্গন, হিলিয়াম থাকে। এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাচুর্যতা বেশি দেখা যায়।
- মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘাটতির কারণে গ্যাসের কণাগুলো এই স্তরে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
মেরুজ্যোতি বা অরোরা : মেরু এলাকায় রাতের আকাশে উজ্জ্বল রঙিন আলো দৃশ্যমান হয়, এই বিস্ময়কর প্রাকৃতিক দৃশ্যকে মেরুজ্যোতি বলে। মেরুজ্যোতির কারণ আবহাওয়া মন্ডলের উচ্চতম স্তরে বৈদ্যুতিক বিচ্যূতি।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- গ্যাসের তরলীকরণ
- চার্লসের সূত্র
- তাপমাত্রা কাকে বলে
- পরম তাপমাত্রা স্কেল
- পানিচক্র
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : মালভূমি
- প্রোগ্রামিং ভাষার স্তর
- বায়ুমন্ডলের স্তর
- বায়ুর তাপ, চাপ ও আদ্রতা
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ
- রোধের তাপমাত্রা বা উষ্ণতা গুণাঙ্ক
- সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সৌরজগৎ কাকে বলে
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ