রবার্ট বয়েল তাপমাত্রাকে স্থির রেখে বিভিন্ন গ্যাসের আয়তনের উপর চাপের প্রভাব সম্পর্কে বহু গবেষণা করেন। তার এ গবেষণার ফলাফল তিনি ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন, একে বয়েলের সূত্র বলা হয়। বয়েলের সূত্রটি হচ্ছে-
“স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের আয়তন ঐ গ্যাসের উপর প্রযুক্ত চাপের ব্যস্তানুপাতিক।”
অর্থাৎ, তাপমাত্রাকে স্থির রেখে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা ভর বিশিষ্ট কোন গ্যাসের উপর চাপ (P) প্রয়োগ করলে এবং তার আয়তন V হলে তখন বয়েলের সূত্র মতে-
V ∝ 1/P
or, V = K/P, এখানে K হলো সমানুপাতিক ধ্রুবক, যখন তাপমাত্রা স্থির থাকে।
or, PV = K
তাহলে বলা যায়, স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের ভিন্ন ভিন্ন চাপ (P) ও সেই চাপের জন্য হওয়া ভিন্ন ভিন্ন আয়তন (V) এর গুণফলের মান সবসময় একই থাকে।
এখন, নির্দিষ্ট ভরের ঐ একই গ্যাসের উপর নতুন চাপ P1 এবং সে চাপে আয়তন V1 হলে, স্থির তাপমাত্রায়-
P1V1 = K (ধ্রুবক)
অনুরূপভাবে ভিন্ন ভিন্ন চাপ P2, P3…..Pn এর জন্য যদি গ্যাসের আয়তন V2, V3…..Vn হয় তবে-
P2V2 = P3V3 =……..= PnVn = K
তাহলে, দুটো চাপের অবস্থার জন্য বয়েলের সূত্রের সমীকরণ হল P1V1 = P2V2
আবার, স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের জন্য বয়েলের সূত্রের সমীকরণের ধ্রুবকের নির্দিষ্ট একটা মান আছে। যেমন, 0°C বা 273 K তাপমাত্রায় 1 mol যেকোনো গ্যাসের জন্য K = PV = 1 x 22.414 L atm এবং 25°C বা 298 K তাপমাত্রায়-
K = PV = 1 x 24.789 L bar
= 1 x 24.4655 L atm
লেখচিত্রের সাহায্যে বয়েলের সূত্র
গ্যাসের চাপ (P) বনাম আয়তনের (V) লেখচিত্র
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের উপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন চাপে ঐ গ্যাসের আয়তন বের করে Y অক্ষকে চাপ (P) ও X অক্ষকে আয়তন (V) ধরে লেখচিত্র আঁকলে যেমন লেখচিত্র পাওয়া যাবে, X অক্ষকে চাপ (P) ও Y অক্ষকে আয়তন (V) ধরে লেখচিত্র আঁকলে ঠিক তেমন লেখচিত্র পাওয়া যাবে!
একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন মানের স্থির তাপমাত্রায় একই ভর ও একই ধরনের গ্যাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন লেখচিত্র পাওয়া যাবে। এ সকল লেখচিত্রের আকৃতি অধিবৃত্তীয় (hyperbolic) হয়।
স্থির তাপমাত্রায় যে প্রক্রিয়া কাজ করে, তাকে সমতাপীয় প্রক্রিয়া (isothermal process) বলা হয়। এ কারণে এই লেখচিত্র থেকে পাওয়া অধিবৃত্তীয় রেখা গুলোকে সমতাপরেখা বা সমোষ্ণলেখ বা আইসোথার্ম (isotherm) বলা হয়। গ্রিক ভাষায় iso শব্দের অর্থ হচ্ছে রকই বা সমান, therm শব্দের অর্থ তাপমাত্রা।
এবার, এই তিনটা তাপমাত্রায় T1, T2, T3 (যেখানে T3 > T2 > T1) এর আলাদা আলাদা সম্পর্ক দেখি, যেখানে প্রতিটা রেখা সরলরৈখিক বা সমতাপ রেখা বা আইসোথার্ম (isotherm)।
গ্যাসের P বনাম V-1 এর লেখচিত্র এবং PV বনাম P লেখচিত্র
গ্যাসের আয়তন P-কে Y অক্ষ বরাবর, গ্যাসের চাপের ব্যস্তানুপাত V-1 কে X-অক্ষ বরাবর বসিয়ে লেখচিত্র আঁকলে সরলরেখা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে P-কে X অক্ষ বরাবর, গ্যাসের চাপের ব্যস্তানুপাত V-1 কে Y-অক্ষ বরাবর বসিয়ে লেখচিত্র আঁকলে একইরকম সরলরেখা পাওয়া যাবে।
যেহেতু চাপ ও আয়তনের গুণফল ধ্রুবক থাকে, সেহেতু PV এর সাপেক্ষে চাপ P বা আয়তন V গ্রাফে স্থাপন করলে আনুভূমিক বরাবর সরলরেখা পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবে, বয়েলের সূত্র বেশি তাপমাত্রায় ও কম চাপে কাজ করে, কম তাপমাত্রায় ও বেশি চাপে এ সূত্র থেকে কিছুটা বিচ্যুতি দেখা যায়।
‘যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।’ (আল-কুরআন, সূরা : আল বাক্বারাহ্)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র (Avogadro’s Law)
- আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস (Ideal Gas and Real Gases)
- গে-লুস্যাকের গ্যাস আয়তন সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Gaseous Volumes)
- গে-লুস্যাকের গ্যাসের চাপের সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Pressure of Gases)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন (Deduction of Gas Laws From Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের ঘনত্বের উপর চাপের প্রভাব (Effect of Pressure on Gas Concentration)
- গ্যাসের সূত্রসমূহ (Laws of Gases)
- চার্লসের সূত্র (Charles’ Law)
- চার্লসের সূত্র বিবৃত করো
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র (Dalton’s Law of Partial Pressure)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ (Application of Dalton’s Law of Partial Pressure)
- পরম তাপমাত্রা স্কেল অনুসারে চার্লস সূত্র (Charles Formula According to the Absolute Temperature Scale)
- পরমশূন্য তাপমাত্রা (Absolute Zero Temperature)
- বয়েলের সূত্র ও চার্লসের সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s Law and Charles’ Law)
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s, Charles’ and Avogadro’s Laws)