‘ধারক’ শব্দের অর্থ ‘ধারণকারী’। যে বস্তু চার্জ বা আধান ধরে রাখতে পারে তাকে ধারক বলে। ধারকের নামকরণের এটিই মূল কারণ। কিন্তু একটি পরিবাহীর চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা অসীম না। কেননা কোনো পরিবাহীতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত চার্জ সাপ্লাই দিলে সেই পরিবাহী চার্জ হারাতে থাকে। কিন্তু কোনো উপায়ে পরিবাহীর বিভব কমিয়ে দিলে সেটা অতিরিক্ত কিছু চার্জ ধরে রাখতে পারে। এই কারণে ধারক বলতে কোনো বস্তুর ধারকত্ব বাড়ানোর একটি কৃত্রিম বাবস্থা বুঝায়। সাধারণত দুটো পরিবাহী পদার্থের মাঝখানের জায়গায় বাতাস বা অন্য কোনো পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমকে বসিয়ে পরিবাহীর ধারকত্ব বা চার্জ ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
তাই বলা যায়, কোনো পরিবাহীতে চার্জ ধরে রাখার যান্ত্রিক পদ্ধতিকে ধারক বলে। আরেকভাবে বলা যায়, যে যান্ত্রিক সিস্টেম ব্যবহার করে তড়িৎ বা চার্জ সংরক্ষণ করে রাখা হয় তাকে ধারক বলে। এক্ষেত্রে কাছাকাছি অবস্থানে দুটি পরিবাহীকে বসিয়ে ধারক তৈরি করতে হয়। পরিবাহী দুটোর মাঝে অন্তরক বা অপরিবাহী পদার্থ যেমন বাতাস, পোর্সেলিন ইত্যাদি পদার্থ বসিয়ে ধারকের ধারকত্ব বাড়ানো হয়।
ধারক যেভাবে কাজ করে
ধরি A একটি পরিবাহী পদার্থ। একে একটি তড়িৎ উৎপাদক যন্ত্র যেমন ব্যাটারির সাথে লাগিয়ে একে ধনাত্নক চার্জে চার্জিত করলাম। আবার ধরি, B অন্য আরেকটা চার্জশূন্য বা অচার্জিত ভূমির সাথে যুক্ত পরিবাহী। একে A-এর কাছে এনে বসালাম। ফলে আবেশ পদ্ধতিতে B-এর কাছের প্রান্তে ঋণাত্নক চার্জ এবং দূরের প্রান্তে ধনাত্নক চার্জ অবস্থান করবে। B এখানে ভূ-সংযুক্ত অবস্থায় থাকায় পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন এসে এর ধনাত্নক চার্জকে নিষ্ক্রিয় করে দিবে। B-এর ঋণাত্নক চার্জ A-এর মধ্যে থাকা ঋণাত্নক চার্জকে বিকর্ষণ করে A-এর ঋণাত্নক বিভব কমিয়ে দিবে।
এখন B-কে যতই A-এর কাছে আনা হবে, A-এর বিভব V ততই কমবে। যেহেতু, C = Q / V, ফলে V কমে যাওয়াতে A-এর ধারকত্ব বাড়বে এবং এটি বেশি চার্জ গ্রহণ করতে পারবে। তাই বলা যায়, ভূ-সংযুক্ত অচার্জিত পাত B কে A-এর কাছে বসালে A-এর ধারকত্ব বেড়ে যায়। এই ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থার নাম ধারক। তবে এখানে, B পাতকে ভূ-সংযুক্ত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে ভূ-সংযুক্ত হলে ধারকের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে-
কোনো একটি ধারকের মধ্যবর্তী মাধ্যম বাতাস হলে তাকে বায়ু মাধ্যম ধারক বা সংক্ষেপে বায়ু ধারক এবং কাচ হলে তাকে কাচ মাধ্যম ধারক সংক্ষেপে কাচ ধারক বলে।
ধারকত্ব (Capacitance)
সাধারণত একটি পরিবাহী ও একটি ভূ-সংযুক্ত পরিবাহীর মধ্যে অন্তরক বা অপরিবাহী পদার্থ রেখে একটা ধারক তৈরি করা হয়। এজন্য একটি ধারকের ধারকত্ব বলতে এর পরিবাহীর ধারকত্বকে বুঝায়।
কোনো ধারকের একপাশে থাকা পরিবাহী এবং অপরপাশে থাকা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহীর মধ্যে একক বিভব (যেমন 1V) পার্থক্য তৈরি করতে এই পরিবাহীতে যে পরিমাণ চার্জ দিতে হবে, তাকে সেই ধারকের ধারকত্ব বলে।
কোনো ধারকের ধারকত্ব = অন্তরক দিয়ে পৃথক দুটো পরিবাহীর চার্জ / দুটো পরিবাহীর মধ্যে বিভব পার্থক্য
মনে রাখতে হবে, কোনো ধারকের ধারকত্ব নির্ভর করে তার মধ্যে থাকা দুটো পরিবাহীর আকার, আকৃতি এবং পরিবাহী দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব ও মাধ্যমের উপর।
এখন, কোনো ধারকের ধারকত্ব 5F বলতে বুঝায়-
ধারকের মাঝে থাকা পাত দুটির মাঝে 1 V বিভব পার্থক্য তৈরি করতে অন্তরক দিয়ে পৃথক করা দুটো পরিবাহীতে 5 C চার্জ দিতে হবে।
গঠন অনুসারে কয়েক রকমের ধারক আছে। যেমন-
সমান্তাল পাত ধারক, গোলকীয় পাত ধারক, চোঙাকৃতি ধারক ইত্যাদি।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আপেক্ষিক রোধ কাকে বলে
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ
- ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)
- চার্জের তল ঘনত্ব
- তড়িৎ আবেশ
- তড়িৎ বলরেখা
- তড়িৎ বিভব
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- বিদ্যুৎ প্রবাহ
- বিভব পার্থক্য
- রোধের তাপমাত্রা বা উষ্ণতা গুণাঙ্ক
- রোধের সূত্র ও আপেক্ষিক রোধ
- সমবিভব তল
- সমান্তরাল পাত ধারক
- স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে চার্জিতকরণ