কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাকে অনেক সময় Sugar বা চিনিও বলা হয়। আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেট থাকে তবে সব ধরনের কার্বোহাইড্রেট এর মধ্যে গ্লুকোজ হচ্ছে অন্যতম। প্রায় সব ধরনের Carbohydrate তৈরি হয় কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন দিয়ে।
আমাদের শরীরে গ্লুকোজের প্রায় সবটাই আসে উদ্ভিদ থেকে। উদ্ভিদ সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করে। সূর্যের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে। এই বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তি তৈরি হয় সেটিকে সূর্য তার চারপাশে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে দেয়। উদ্ভিদ এই তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের কিছু অংশকে ধারণ করে এবং বাতাসের কার্বন-ডাইঅক্সাইড, উদ্ভিদের মূল দিয়ে যাওয়া পানির উপস্থিতিতে পাতার ক্লোরোফিলকে কাজে লাগিয়ে গ্লুকোজ তৈরি করে। এর পাশাপাশি উদ্ভিদ এই সিস্টেমে অক্সিজেন তৈরি করে, যেটি আমাদের শ্বাস নিতে সহায়তা করে। কাজেই আমাদের শরীরের গ্লুকোজ এর মূল উৎস হচ্ছে উদ্ভিদ এবং উদ্ভিদের বিভিন্ন সবুজ অংশ।
আমাদের শরীরে উদ্ভিদ থেকে যে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা আসে সেটি পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয় এবং কার্বোহাইড্রেট এর ছোট ছোট মনোমার তৈরি করে যেগুলোকে monomer sugar বলে। গ্লুকোজ হচ্ছে তেমনি একটি মনোমার সুগার। আমাদের শরীরে গ্লুকোজের গ্লাইকোলাইসিস বা গ্লুকোজ এর বিশ্লেষণ ঘটে যার ফলে আমাদের শরীরে ATP নামক একটি শক্তি তৈরি হয়।
সূর্যের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে সেই শক্তির কিছু অংশ উদ্ভিদ তার গ্লুকোজ তৈরীর মাধ্যমে গ্রহণ করে। গ্লুকোজ এর রাসায়নিক বন্ধন এই শক্তিটি রাসায়নিক শক্তি হিসেবে আবদ্ধ করে এবং এই ATP সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবদেহে শক্তি প্রদান করে। তার মানে আমাদের শরীরে গ্লুকোজ প্রায় সমস্থ শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ATP হচ্ছে আমাদের শরীরের শক্তির একক। যখন গ্লুকোজ ভেঙ্গে ATP তৈরি হয় তখন সেই শক্তিটি কাজে লাগে আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ করার সময়। আবার গ্লুকোজ নিজেই গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে আমাদের শরীরের মধ্যে। যখন আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমান কমে যায় তখন এই গ্লাইকোজেন গুলো ভেঙ্গে গ্লুকোজ তৈরি হয়।
এছাড়া আমাদের শরীরে নিউক্লিক এসিড এর মধ্যেও গ্লুকোজ জমা থাকে। যেমন আমাদের RNA এবং DNA তে গ্লুকোজের উপস্থিতি দেখা যায়। RNA এবং DNA হচ্ছে জেনেটিক ইনফরমেশনের মূল ভিত্তি। RNA তে রাইবোজ বা পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট এক ধরনের সুগার থাকে এবং DNA তে ডিঅক্সিরাইবোজ নামক আরো একটি পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট সুগার থাকে। RNA এবং DNA এর মধ্যে Nitrogen base এবং phosphate group কে যুক্ত করে পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট সুগার। নিচে একটা DNA এর রাসায়নিক গঠন দেখানো হলো-
ব্যাকটেরিয়া বা উদ্ভিদদেহে কার্বোহাইড্রেট এর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এদের কোষপ্রাচীরের প্রতিটা উপাদানই কার্বোহাইড্রেট দিয়ে তৈরি। যেমন কোষপ্রাচীরের মূল উপাদান সেলুলোজ, স্টার্চ, জিলাটিন এগুলো হচ্ছে এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অতিথি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- উদ্ভিদজগতের শ্রেণীবিন্যাস (Classification of Plant Kingdom)
- এনজাইমের বৈশিষ্ট্য – Properties of Enzymes
- জীব কোষের উপাদান : কোষ প্রাচীর
- জীবকোষের উপাদান : প্লাসমোডেসমাটা (Plasmodesmata)
- জৈব যৌগের প্রাচুর্যতা (Excess of Organic Compounds)
- জৈব যৌগের সূচনা (Principle of Organic Chemistry)
- ত্রিমাত্রিক / স্টেরিও সমাণুতা (Operational / Stereo Isomerism)
- নিউক্লিক এসিড (Nucleic Acid)
- প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ (Respiratory Control)
- প্রোটিন – Protein
- বিভব পার্থক্য ও তড়িচ্চালক বলের পার্থক্য (Difference between Voltage & Electromotive Force)
- শ্বসনতন্ত্রের গ্যাসীয় পরিবহণ ( Gaseous Transport of the Respiratory tract)
- শ্বসনের শারীরবৃত্ত (The Physiology of Respiration)
- সালোকসংশ্লেষণ একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয় (Determination of Molecular Formula of Hydrocarbons)