সাধারণ অবস্থায় বিভিন্ন পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকে। সাধারণ অবস্থা বলতে 25°C (298 K) তাপমাত্রা ও এক বায়ুমণ্ডল (1 atm) চাপকে বোঝায়। 25°C কে কক্ষতাপমাত্রাও ধরা হয়। কক্ষতাপমাত্রায় পানি তরল, অথচ লবণ কঠিন, নাইট্রোজেন গ্যাসীয়। এর কারণ কী? এক কথায় উত্তর দেয়া যায়, যে সব পদার্থের গলনাঙ্ক কক্ষতাপমাত্রার উপরে তারা কক্ষতাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ হিসেবে থাকে। যে সব পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক কক্ষতাপমাত্রার নিচে তারা কক্ষতাপমাত্রায় গ্যাস হিসেবে থাকে এবং যে সব পদার্থের গলনাঙ্ক কক্ষতাপমাত্রার নিচে ও স্ফুটনাঙ্ক কক্ষতাপমাত্রার উপরে, সেসব পদার্থ কক্ষতাপমাত্রায় তরল হিসেবে থাকে।
NaCl লবণের গলনাঙ্ক (815°C) কক্ষতাপমাত্রার উপরে। সুতরাং তা কক্ষতাপমাত্রায় কঠিন। নাইটোজেনের স্ফুটনাঙ্ক (-196°C) তাপমাত্রার নিচে। সুতরাং তা কক্ষতাপমাত্রায় গ্যাস। অন্যদিকে পানির স্ফুটনাঙ্ক (100°C) কক্ষতাপমাত্রার চেয়ে বেশি এবং গলনাঙ্ক (0°C) কক্ষতাপমাত্রা অপেক্ষা কম হওয়ায় পানি কক্ষতাপমাত্রায় তরল পদার্থ।
পদার্থের গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল
ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন হয়। এর কারণ হল পদার্থের গঠন প্রকৃতি। যে কোন পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা নিয়ে তৈরি। সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে এই ক্ষুদ্রতম কণাকে সে পদার্থের অণু বলা হয়। সমযোজী পদার্থের এ সব অণু একে অপরের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করে, এ আকর্ষণকে আস্তঃআণবিক আকর্ষণ বলে। অণু যখন বন্ধন গঠন করে তখন ইলেকট্রনের ভাগাভাগির উপর এ আন্তঃআণবিক আকর্ষণের পরিমাণ নির্ভর করে। বিভিন্ন যৌগে আন্তঃআণবিক বলের পরিমাণ বিভিন্ন হয়।
আন্তঃআণবিক বলের ভিন্নতার কারণ ও এর প্রভাব
বিভিন্ন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক তাদের আন্তঃআণবিক বলের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। আবার আন্তঃআণবিক বল কিছু নিয়ামক (factor) এর উপর নির্ভর করে। এসব নিয়ামকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আয়নিক যৌগের আয়নসমূহের মধ্যে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল ও কেলাসের ল্যাটিস শক্তি, সমযোজী যৌগ অণুর মেরুপ্রবণতা বা ডাই-পোল গঠন, আণবিক ভর ও পলিমার অণু গঠন ইত্যাদি। এখন এগুলো নিয়ে একটু জানবো-
i) আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে – আয়নিক যৌগ গুলো কেলাস আকারে কঠিন অবস্থায় থাকে। যেমন, Na+Cl– এর গলনাঙ্ক 815°C। আয়নিক যৌগকে তরল বা গ্যাসীয় করতে হলে এর আয়ন গুলোর মাঝে থাকা স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণের চেয়ে বেশি মানের গতিশক্তি কেলাসের আয়ন গুলোকে দিতে হবে। এই কারণে আয়নিক যৌগ গুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি হয়। আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম কণা হচ্ছে বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নগুলো। সুতরাং আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে “আন্তঃআণবিক আকর্ষণ” এর স্থলে “আস্তঃআয়নিক আকর্ষণ-বিকর্ষণ” বল বিবেচনা করা হয়।
ii) অপোলার সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে- অপোলার সমযোজী যৌগ এবং যাদের আণবিক ভর কম সেগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, কারণ তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের পরিমাণ কম। যেমন, CH4 (স্ফুটনাঙ্ক – 162°C), C2H6, (স্ফুটনাঙ্ক –89°C) ইত্যাদি।
iii) পোলার সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে- পোলার অণু গুলোর দুই প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ ও ঋণাত্মক চার্জ থাকে। ফলে একটি অণুর ধনাত্মক প্রান্ত অন্য অণুর ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে আকৃষ্ট থাকে। যেমন, পোলার পানি অণু (H2O) এর H প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ ও O প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ থাকে। তাই পোলার সমযোজী যৌগ গুলো সাধারণ তাপমাত্রায় তরল থাকে। সেজন্য পানি সাধারণ তাপমাত্রায় তরল, এর স্ফুটনাঙ্ক 100°C। কোন কোন ক্ষেত্রে পোলার সমযোজী যৌগ কঠিন অবস্থায়ও থাকে যেমন, চিনি বা সুগার (C12H22O11)।
সমযোজী অণুতে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল ও আস্তঃআণবিক দূরত্বের প্রভাব
কঠিন পদার্থের বেলায়, আন্তঃআণবিক বল সবচেয়ে বেশি থাকে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে কম হয়। অধিক আকর্ষণের কারণে অণু গুলো যথাসম্ভব কাছাকাছি এসে নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে বলে নির্দিষ্ট আকৃতি লাভ করে। এ অবস্থাকে পদার্থের কঠিন অবস্থা বলে। যেহেতু কঠিন অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বেশি থাকে, তাই বেশি তাপ প্রয়োগ করে ঐ আন্তঃআণবিক আকর্ষণকে ভেঙ্গে ফেলতে হয়। যেমন, কঠিন NaCl এর গলনাঙ্ক হলো 815°C।
তরল পদার্থের বেলায়, আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থের চেয়ে কম থাকে, কিন্তু আন্তঃআণবিক দূরত্ব বেশি হয়। তাই এতে কম তাপ দিলে ঐ আন্তঃআণবিক আকর্ষণকে অতিক্রম করা যায়। যেমন, পানির স্ফুটনাঙ্ক হল 100°C।
গ্যাসীয় পদার্থের বেলায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ খুবই কম থাকে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। তাই গ্যাসীয় পদার্থকে খুব কম তাপমাত্রায় শীতল করলে তাদের আন্তঃআণবিক দূরত্ব কমে যায়, তাদের অণুগুলো খুব নিকটে আসে এবং তারা তরলে পরিণত হয়। অর্থাৎ গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক কক্ষ তাপমাত্রা থেকে অনেক কম হয়। যেমন, N2 গ্যাসের ফুটনাঙ্ক হল 196ºC।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আইসোটোপ কাকে বলে
- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে
- জৈব যৌগের প্রকারভেদ
- জৈব যৌগের প্রাচুর্যতা
- জৈব যৌগের সমানুতা ubs
- তাপমাত্রা কাকে বলে
- তাপমাত্রার বিভিন্ন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক
- নিঃসরণ
- পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
- পদার্থের শ্রেণীবিভাগ
- পরমাণুর শক্তির পাল্লা
- প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ
- ব্যাপন ও নিঃসরণ এর পার্থক্য
- শক্তি ও শক্তির বিভিন্ন রূপ
- সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ