কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বলতে বোঝায় এই ব্যাংক একটি দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংক দেশের অর্থ বাজার, মুদ্রা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের সার্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেই এর নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের কাগজী মুদ্রা প্রচলনের একমাত্র অধিকারী হল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বলতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বোঝায়।
যে ব্যাংক অন্যান্য সমস্ত ব্যাংকের কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে, দেশের মুদ্রা প্রচলন ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সরকারের প্রতিনিধি ও আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে ও এর কার্যাবলি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে নিচে তা বর্ণনা করা হল :
১। নোট প্রচলন করা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে ও এর কাজ নিয়ে জানার ক্ষেত্রে বলতে হবে বর্তমান যুগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজী নোট প্রচলনের একমাত্র অধিকারী। দেশের কাগজী মুদ্রার প্রচলন ও মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত মুদ্রাই দেশের ‘বিহিত মুদ্রা’ এবং এর অভ্যন্তরীণ ও বহির্মূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
২। সরকারের ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিনা খরচে বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের পাওনা আদায় এবং বিভিন্ন খাতে সরকারের দেনা পরিশোধ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের হিসাব-নিকাশ করে ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। এই ব্যাংক সুদ ছাড়া সরকারের অর্থ জমা রাখে এবং প্রয়োজন বোধে সরকারকে ঋণ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে আর্থিক ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বলতে এটি সরকারের ব্যাংককেও বোঝায়।
৩। অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। অন্যান্য ব্যাংকে তাদের মূলধনের নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই জমার পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধি করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
৪। ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হল ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা। বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ দেশের মোট মুদ্রার যোগানের অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টির দরুন মোট অর্থের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মোট মুদ্রার চাহিদা ও যোগানের মধ্যে যথাস সমতা বিধান করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। মুদ্রা সংকোচন ও মুদ্রাস্ফীতি এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো কিছু কার্যাবলি
৫। ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বশেষ পর্যায়ের ঋণদাতা হিসেবে কাজ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয় এবং অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ গ্রহণে ব্যর্থ হয় তখন বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিয়ে আর্থিক সংকটের হাত থেকে রক্ষা করে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বলতে তাই ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থলও বোঝানো হয়।
৬। নিকাশঘর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের পারস্পরিক দেনাপাওনার ক্লিয়ারিং হাউজ বা নিকাশ ঘর হিসেবে কাজ করে। দৈনন্দিন ব্যবসা বাণিজ্য চেক আদান প্রদানের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মধ্যে দেনা-পাওনার সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে চেকের মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক দেনাপাওনা মিটিয়ে থাকে।
৭। বৈদেশিক বিনিময়ের হার রক্ষা : অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাথে দেশের মুদ্রার নির্দিষ্ট বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রক্ষা করে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বলতে এটি বৈদেশিক বিনিময়ের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
৮। উন্নয়নমূলক কার্যাবলি : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা, জাতীয় বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করা ইত্যাদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ।
৯। অন্যান্য কার্যাবলি : উপরিউক্ত কার্যাদি ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো অনেক কাজ সম্পন্ন করে থাকে। যেমন, প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ দেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ, রৌপ্য প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু এবং উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করে। তাই এই আলোচনা থেকে বোঝা গেলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে।