পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরনের, ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন (physical change) এবং রাসায়নিক পরিবর্তন (chemical change)।
ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন
যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু তা কোনো নতুন পদার্থে পরিণত হয় না, তাকে ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন বলা হয়।
উদাহরণ : পানিকে ঠাণ্ডা করলে তা বরফে এবং তাপ দিলে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। আবার বরফকে তাপ দিলে বা বাষ্পকে শীতল করলে পানি পাওয়া যায়। বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা মাত্র। সুতরাং পানি হতে বরফ বা জলীয় বাষ্প তৈরি হওয়া বা তার বিপরীত ঘটনা ভৌত পরিবর্তন। চিনির দানাকে গুঁড়া করলে বড় দানা হতে ক্ষুদ্র দানার সৃষ্টি হয়। কিন্তু চিনি হতে অন্য পদার্থ উৎপন্ন হয় না। মুখে দিলে দেখা যায় যে, টুকরা ছোট কী বড় উভয় প্রকার টুকরাই সমান মিষ্টি। সুতরাং বড় দানাকে গুঁড়া করে ছোট দানা তৈরি করা একটি ভৌত পরিবর্তন। একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে তা চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এ সময় লোহা হতে অন্য কোনো পদার্থের সৃষ্টি হয় না। সুতরাং এ পরিবর্তনও একটি ভৌত পরিবর্তন। চুম্বকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরাকে উত্তপ্ত করলে তা চুম্বকত্ব হারিয়ে সাধারণ লোহায় রূপান্তরিত হয়।
রাসায়নিক পরিবর্তন
যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলা হয়। অন্য কবার, যে পরিবর্তনে বস্তুর রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলা হয়।
উদাহরণ : এক টুকরা লোহাকে বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে তার উপর বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মরিচা নামে পরিচিত। মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও পানি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন যৌগ উৎপন্ন হয়েছে। সুতরাং লোহার উপর মরিচা পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। একটি মোমবাতি জ্বলার সময় উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এটি ভৌত পরিবর্তন। কিন্তু অধিকাংশ মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প তৈরি করে। শেষোক্ত দুইটি বস্তু মোম ও অক্সিজেন হতে সম্পূর্ণ পৃথক। সুতরাং মোমবাতির দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। প্রকৃতপক্ষে সকল দহন রাসায়নিক পরিবর্তন। উল্লেখ্য যে, বাতাসের অক্সিজেনের সাথে কোনো কিছুর বিক্রিয়াকে দহন বলে।
ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য
ভৌত পরিবর্তন
- কোনো নতুন ধরনের বস্তু সৃষ্টি হয় না।
- বস্তুর ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়।
- বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয় না।
- বস্তুর রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয় না।
- এ পরিবর্তন অস্থায়ী। সাধারণ পরিবর্তনের কারণ (যেমন, তাপ ও চাপ) সরিয়ে নিলে বস্তু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
রাসায়নিক পরিবর্তন
- সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক বা একাধিক বস্তু সৃষ্টি হয়।
- বস্তুর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়।
- বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়।
- রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয়।
- এ পরিবর্তন স্থায়ী। বস্তুকে পূর্বের অবস্থায় সহজে ফিরিয়ে আনা যায় না।
- তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ ঘটতে পারে, নাও ঘটতে পারে।
- তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ অবশ্যই ঘটবে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিকর্ষজ ত্বরণ (Gravitational Acceleration)
- আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে
- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ
- ডালটনের পারমাণবিক মতবাদ
- ত্বরণ কাকে বলে
- থমসন পরমাণু মডেল
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- পদার্থের শ্রেণীবিভাগ
- ভর ও ওজন (Mass & Weight)
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- রাসায়নিক ক্রিয়া বা বিক্রিয়া