একটি অচার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে চার্জিত করার জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। প্রথম একটা স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র নিতে হবে। আবেশ প্রক্রিয়ায় আমরা একে ধন (Positive) চার্জে এবং ঋণ (Negative) চার্জে চার্জিত করতে পারবো। আবেশের মাধ্যমে এই চার্জিত করার পদ্ধতি তিনটি ধাপে করা হয়-
- একটি চার্জিত আবেশী বস্তুকে অচার্জিত স্বর্ণপাত যন্ত্রের (বা পরিবাহীর) নিকট আনা হয়,
- তারপর স্বর্ণপাত যন্ত্রকে (বা পরিবাহীকে) স্পর্শ করা হয় এবং
- তারপর আবেশী বস্তুকে অপসারণ করা হয়।
এবার আমরা ধাপে ধাপে প্রতিটা বিষয় নিয়ে জানবো-
ধনাত্নক চার্জে চার্জিত করার পদ্ধতি
একটি ইবোনাইট দণ্ড নিবো। ফ্লানেল কাপড় দ্বারা ঘষে একে ঋণ চার্জে চার্জিত করবো এবং একটি অচার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকটে আনবো। আবেশ প্রক্রিয়ায় চাকতিতে বদ্ধ ধন চার্জ এবং স্বর্ণপাত দুটিতে মুক্ত ঋণ চার্জ উৎপন্ন হবে। স্বর্ণপাত দুটি ঋণ চার্জে চার্জিত হওয়ায় তাদের মধ্যে বিকর্ষণ ঘটবে। ফলে স্বর্ণপাত দুটি ফাঁক হবে।
স্বর্ণপাতের ঋণ চার্জ টিনের পাতের ভেতরের পৃষ্ঠে ধন চার্জ এবং বাইরের পৃষ্ঠে ঋণ চার্জকে আবিষ্ট করে। টিনের পাতের ভেতরের পৃষ্ঠের চার্জ স্বর্ণপাতের বিপরীত চার্জ দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে আবদ্ধ থাকে এবং পাত দুটির ফাঁক আরও বৃদ্ধি পায়।
এবার ইবোনাইট দন্ডকে একটা স্থানে রেখে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করবো কিংবা পরিবাহী তার দিয়ে মাটির সাথে যুক্ত করে দিবো। স্বর্ণপাতের মুক্ত ঋণ চার্জ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে মাটিতে চলে যাবে এবং স্বর্ণপাত চার্জহীন হয়ে মিলিত হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে টিনের পাতের চার্জও মাটিতে চলে যাবে।
এখন চাকতিটির সাথে ভূ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইবোনাইট দন্ডটিকে সরিয়ে নিবো। চাকতির বদ্ধ চার্জ আবেশী চার্জ থেকে প্রভাবমুক্ত হয়ে চাকতি, দণ্ড এবং স্বর্ণপাতে ছড়িয়ে যাবে। স্বর্ণপাত দুটি তখন ধনাত্নক চার্জে চার্জিত হয়ে বিকর্ষণের ফলে ফাঁক হয়ে যাবে। অতএব স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র এখন ধনাত্নক চার্জে চার্জিত।
ঋণাত্নক চার্জে চার্জিত করার পদ্ধতি
একটি অচার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে ঋনাত্নক চার্জে চার্জিত করতে হলে প্রথমে একটি কাচ দণ্ড নিতে হবে। একে রেশমী কাপড় দিয়ে ঘষে ধনাত্নক চার্জযুক্ত করবো এবং তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির কাছে নিয়ে ধরবো। আবেশের ফলে চাকতিতে বদ্ধ ঋণ চার্জ এবং স্বর্ণপাতে মুক্ত ধন চার্জ উৎপন্ন হবে এবং পাত দুটি ফাঁক হয়ে যাবে।
এরপর কাচ দণ্ডটিকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে চাকতিটিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করবো কিংবা পরিবাহী তার দিয়ে এটাকে মাটির সাথে যুক্ত করবো। এতে স্বর্ণপাতের যুক্ত ধন চার্জকে মাটি হতে ঋণ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন এসে প্রশমিত করবে এবং পাত দুটি দুরত্ব কমিয়ে ফেলবে। তারপর চাকতিটিকে মাটি হতে বিচ্ছিন্ন করবো এবং কাচ দণ্ডটিকে সরিয়ে নিবো। এখন চাকতির বন্ধ ঋণ চার্জ আবেশী চার্জের থেকে প্রভাবমুক্ত হয়ে চাকতি, দণ্ড এবং স্বর্ণপাতে ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র আবেশ প্রক্রিয়ায় ঋণাত্নক চার্জে চার্জিত হবে।

তাহলে এই বিষয়টা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আবেশ প্রক্রিয়ায় অচার্জিত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে যে চার্জে চার্জিত করতে হবে, তার বিপরীতধর্মী চার্জ তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকটে আনতে হবে।
আরেকটা বিষয়! অপরিবাহী কিংবা কুপরিবাহীর যে অংশে চার্জ দেওয়া হয় সে অংশেই তা আবদ্ধ থাকে। চার্জ কুপরিবাহী পদার্থের এক অংশ হতে অন্য অংশে যায় না। কিন্তু অন্তরীত পরিবাহীর যে কোনো অংশে চার্জ দিলে সমধর্মী চার্জের বিকর্ষণের জন্য তারা পরিবাহীর সবজায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, সেইসাথে এই চার্জ কেবল পরিবাহীর বাইরের পৃষ্ঠে অবস্থান করে, ভেতরের পৃষ্ঠে বা পরিবাহীর মধ্যে কোনো বিন্দুতে থাকে না।
‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের বিস্মৃত হও?’ (আল-কুরআন, সূরা : বাকারা)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আধানের নিত্যতা এবং কোয়ান্টায়ন (Conservation and Quantization of Charge)
- আবেশ প্রক্রিয়ায় চার্জিতকরণ (Charging by Induction)
- কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law)
- চার্জের তল ঘনত্ব (Surface Charge Density)
- তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction)
- তড়িৎ ধারকত্ব (Electric Capacity)
- তড়িৎ বলরেখা (Electric Lines of Force)
- তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি (Superposition Principle of Electric Force)
- তড়িৎ বিভব (Electric Potential)
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ (Electron theory Relating Electricity)
- তড়িৎগ্রস্ততার সুনিশ্চিততর পরীক্ষা (The surer test of Charging or Electrification)
- তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র (Electroscope)
- ধারক ও ধারকত্ব (Capacitor & Capacitance)
- বিভব পার্থক্য (Potential Difference)
- রোধের সূত্র এবং আপেক্ষিক রোধ (Laws of Resistance & Specific Resistance)