চার্লসের সূত্র কি?
১৭৮৭ সালে চার্লস এবং ১৮০২ সালে গে-লুস্যাক আলাদা আলাদা ভাবে তাপমাত্রার সাথে গ্যাসের আয়তনের সম্পর্ক নিয়ে সূত্র আবিষ্কার করেন। তাই এ সূত্রটিকে চার্লসের সূত্র বা গে-লুস্যাকের সূত্রও বলে। সূত্রটি হচ্ছে-
“স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের আয়তন প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানোর ফলে 0°C তাপমাত্রায় তার আয়তনের 1/273 ভাগ হারে যথাক্রমে বাড়বে বা কমবে।”
যদি নির্দিষ্ট চাপে কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন 0°C তাপমাত্রায় V এবং t°C তাপমাত্রায় Vt হয়, তবে চার্লসের সূত্র অনুসারে,
1° C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন হবে = Vo + (Vo x 1 / 273) = Vo (1 + 1 / 273)
4°C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন হবে = Vo + (Vo x 4 / 273) = Vo (1 + 4 / 273)
tº C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন হবে = Vo + (Vo x t / 273) = Vo (1 + t / 273)
তাহলে, Vt = Vo (1 + t / 273 ) = Vo (1 + t / 273)
এই সমীকরণটি সব গ্যাসের ক্ষেত্রেই কাজ করে। অর্থাৎ, এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ালে প্রতিটি গ্যাসের আয়তন তার 0°C আয়তনের 273 অংশ বাড়বে। এই ভগ্নাংশকে গ্যাসের প্রসারাঙ্ক বলা হয়। সুতরাং, গ্যাসের তাপীয় প্রসারাঙ্ক-
α = Vo / 273
এখন, চার্লসের সূত্র থেকে পাওয়া সমীকরণ মতে-
যদি t° C = 273° C হয়, তখন Vt = 2Vo হয়। অর্থাৎ 0°C তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন 100 mL হলে 273°C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন বেড়ে দ্বিগুণ হবে, যেমন 100 × 2 mL = 200mL হবে।
আবার t°C = – 273° C হলে, তখন Vt = 0 হয়। অর্থাৎ 0°C তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন 100 mL হলে শূন্য ডিগ্রির নিচে 273°C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন কমে তাত্ত্বিকভাবে শূন্য হবে।
লেখচিত্রের সাহায্যে চার্লসের সূত্র
তাপমাত্রা বাড়ালে সব গ্যাসের আয়তন বাড়ে এবং তাপমাত্রা কমালে আয়তন কমে। গ্যাসের আয়তনকে Y অক্ষ ও তাপমাত্রাকে X অক্ষ হিসেবে গ্রাফে বসিয়ে তাপমাত্রার বিপরীতে গ্যাসের আয়তনকে রেখে লেখচিত্র আঁকলে দেখা যায় যে, স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে সরল রৈখিকভাবে কমে যায়।
বাস্তবক্ষেত্রে –273°C তাপমাত্রায় পৌঁছার অনেক আগেই সব গ্যাস কোন না কোন তাপমাত্রায় তরল হয়ে যায়। এরপর আর পরীক্ষণ বিন্দু পাওয়া যায় না। কিন্তু সরলরেখা গুলোকে কম তাপমাত্রার দিকে প্রসারিত (extrapolate) করলে দেখা যায় যে, 273.15°C তাপমাত্রায় সব গ্যাসের আয়তন তাত্ত্বিকভাবে শূন্য হয়। এ তাপমাত্রা গ্যাসের প্রকৃতি বা চাপের উপর নির্ভর করে না। তাই 273.15° বা 273°C তাপমাত্রাকেই পরমশূন্য তাপমাত্রা বলা হয় এবং তাকে 0°A বা 0K দিয়ে প্রকাশ করা হয়। A হচ্ছে Absolute বা “পরম”-এর সংক্ষিপ্ত প্রকাশ, আর K হচ্ছে Kelvin-এর সংক্ষিপ্ত প্রকাশ। বর্তমানে কেলভিন শব্দটিই বেশি ব্যবহার করা হয়। সূক্ষ্ম হিসাবে এই তাপমাত্রা হচ্ছে- 273.15°C তবে সাধারণ হিসাবে একে 273° C ধরা হয়।
লেখচিত্র থেকে দেখা যায় যে, 0°C তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের আয়তন Vo লিটার হলে, -273°C তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন তাত্ত্বিকভাবে শূন্য বা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আবার 273°C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের আয়তন বেড়ে 2Vo L হয়।
চার্লসের সূত্রের আরো কিছু লেখচিত্র
এবার চার্লসের সূত্রের সাধারণ দুটো গ্রাফ দেখি যেখানে X অক্ষ বরাবর তাপমাত্রা T এবং Y অক্ষ বরাবর আয়তন V কে বসানো হলে একটা সরলরেখা পাওয়া যাবে, আবার Y অক্ষ বরাবর তাপমাত্রা T এবং X অক্ষ বরাবর আয়তন V কে বসানো হলে একই সরলরেখা পাওয়া যাবে।
আবার, যেহেতু V/T একটা ধ্রুবক হিসেবে কাজ করে, তাই এর সাথে তাপমাত্রা T বা আয়তন V কে বসিয়ে যে গ্রাফ বানাবো, সেখানে একটা আনুভূমিক সরলরেখা পাওয়া যাবে এবং এটি V/T এর ধ্রুবক বা স্থির মানকে প্রকাশ করে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- এনট্রপি কি
- ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)
- কার্শফের ভোল্টেজ সূত্র
- কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ
- গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র
- তাপমাত্রা কাকে বলে
- থার্মোমিটার কি
- নিউটনের তৃতীয় সূত্র
- পরিবাহিতা, আপেক্ষিক পরিবাহিতা ও অতিপরিবাহিতা
- ব্যাপন ও নিঃসরণ এর পার্থক্য
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- সরলদোলকের সূত্র সমূহ