যে প্রক্রিয়ায় এক একাধিক বস্তু এক একাধিক নতুন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, তাকে রাসায়নিক ক্রিয়া বা বিক্রিয়া বলা হয়।
যেমন : হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে পানি উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে পানি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তু। সুতরাং প্রক্রিয়া একটি রাসায়নিক ক্রিয়া।
2H2 + O2 = 2H2O
বিক্রিয়ার কারণ : কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার সঠিক কারণ নির্দেশ করা কঠিন। তবে রসায়নবিদগণ মনে করেন যে, বিভিন্ন মৌলের পরমাণুসমূহের পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার প্রবণতা আসক্তি আছে। আসক্তির বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন বিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। যেমন ধাতুসমূহের সাথে অধাতুসমূহের মিলিত হওয়ার বিশেষ আসক্তি আছে। তাই সোডিয়াম ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন করে।
আবার কপারের চেয়ে জিংকের ইলেকট্রন ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই জিংক পরমাণু ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে কপার সালফেট হতে কপারকে প্রতিস্থাপিত করে।
CuSO4 + Zn = ZnSO4 + Cu
রাসায়নিক বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহ
বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট বস্তুসমূহের ধর্ম বিক্রিয়কসমূহের ধর্ম হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। যেমন-
C + O2 = CO2
এই বিক্রিয়ায় একটি বিক্রিয়ক কার্বন হচ্ছে কালো বর্ণের কঠিন পদার্থ, কয়লার প্রধান উপাদান। আরেকটি বিক্রিয়ক অক্সিজেন গ্যাস যা দহনে সাহায্য করে এবং মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অপরদিকে উৎপাদিত কার্বন ডাইঅক্সাইড একটি গ্যাস যা আগুনের দহন বন্ধ করে। এছাড়া কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস আমাদের শ্বাসরোধ করে। কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনের পানিকে ঘোলা করে, কিন্তু কার্বন ও অক্সিজেন করে না।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সর্বদা বিক্রিয়কসমূহের একটি নির্দিষ্ট ভর অনুপাতে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন :
2H2 + O2 = 2H2O
H2 + (1/2) 02 = H2O
এক্ষেত্রে 1 mole অণু হাইড্রোজেন 2 mole অণু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে 1 mole পানি উৎপন্ন করে। অর্থাৎ সব সময় 1 ভাগ ভরের হাইড্রোজেনের সাথে 8 ভাগ ভরের অক্সিজেনের বিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণুর সৃষ্টি বা বিলুপ্তি ঘটে না। সুতরাং বিক্রিয়ক ও উৎপাদসমূহে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে-
KOH + NH4Cl = KCl + NH3 + H2O
এ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কসমূহে সর্বমোট একটি পটাসিয়াম পরমাণু, একটি অক্সিজেন পরমাণু, একটি নাইট্রোজেন পরমাণু, একটি ক্লোরিন পরমাণু এবং পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। উৎপাদসমূহেও সর্বমোট হিসাবে এ সকল সংখ্যা অপরিবর্তিত আছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের কোনো পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ বিক্রিয়কসমূহের মোট ভর এবং উৎপাদসমূহের মোট ভর একই হবে। যেমন-
N2 + 3H2 = 2NH3
এক্ষেত্রে 1 মোল নাইট্রোজেন 3 মোল হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে 2 মোল অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে। 28g নাইট্রোজেন ও 6g হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে 34g অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করবে। বিক্রিয়কসমূহের মোট ভর 28g + 6g = 34g.
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অণু ও পরমাণু (Molecules and Atoms)
- একমুখী বিক্রিয়া ও উভমুখী বিক্রিয়া (Irreversible & Reversible Reaction)
- কার্বো অ্যানায়ন (Carbonation)
- গে-লুস্যাকের গ্যাস আয়তন সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Gaseous Volumes)
- গ্যাস আয়তন সূত্র (Gas Volume Formula)
- গ্রাম পারমাণবিক ভর, গ্রাম আণবিক ভর ও মোল (Gram Atomic Mass, Gram Molecular Mass and Mole)
- ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠন (Chemical Structure of DNA)
- পদার্থের পরিবর্তন (Changes in Matter)
- বিপরীত অনুপাত সূত্র (Inverse Ratio Formula)
- ভরের নিত্যতা সূত্র (Law of Conservation of Mass)
- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর (The Conversion of Energy into Chemical Reactions)
- রাসায়নিক সংযোগ সূত্রসমূহ (Laws of Chemical Combinations)
- সালোকসংশ্লেষণ একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বুঝিয়ে লেখো।
- সালোকসংশ্লেষণ একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয় (Determination of Molecular Formula of Hydrocarbons)