DNA হচ্ছে একধরনের নিউক্লিক এসিড, যাকে ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (deoxyribonucleic acid) বলি আমরা। নিউক্লিক এসিড নিয়ে কথা বলার সময় জেনেছো যে যেকোনো ধরনের নিউক্লিক এসিড হচ্ছে একটা পলিমার (polymer), যেটা অনেকগুলো নিউক্লিওটাইডের মনোমার (monomer) নিয়ে বানানো। কিন্তু DNA-তে কিভাবে একটার পর একটা নিউক্লিওটাইড মনোমার জোট বেঁধে বেঁধে পুরো DNA-কে বানিয়ে ফেলে? চলো সেটাই দেখি আমরা।
তো শুরুতেই আমরা একটা নিউক্লিওটাইডের Chemical Structure-টা দেখি, যেটাতে শর্করা / Pentose suger থাকবে এবং সেটা হবে ডি-অক্সিরাইবোজ (Deoxyribose)। এছাড়া একটা নাইট্রোজেন ক্ষারও থাকবে এবং ধরে নাও সেটা হবে এডেনিন (A)–
এবার আরেকটা নিউক্লিওটাইডের Chemical Structure দেখি, যেটাতে শর্করা / Pentose suger থাকবে এবং সেটা হবে ডি-অক্সিরাইবোজ (Deoxyribose)। এছাড়া একটা নাইট্রোজেন ক্ষারও থাকবে এবং ধরে নাও সেটা হবে সাইটোসিন (C)–
উপরের দুটো নিউক্লিওটাইড যদি কোনোভাবে জোড়া লেগে যায় তবে সেটাই হবে DNA-এর একটা ছোট অংশ। কিভাবে এরা দুজন জোড়া লাগবে সেটা জানবো এখন।
দুটো নিউক্লিওটাইড জোড়া লাগার সময় তোমাদের দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবে- একটা হলো পেন্টোজ সুগারের ৩ নাম্বার কার্বনে একটা হাইড্রক্সিল গ্রুপ (-OH) এবং ৫ নাম্বার কার্বনে একটা ফসফেট গ্রুপ (-PO4) আছে। দুটো নিউক্লিওটাইড জোড়া লাগার সময় এই দুটো জায়গাতে আসল কাহিনী ঘটে। চিত্র থেকে দেখো কিছু বোঝা যায় কিনা-
ছবিতে ভালো করে দেখো, এখানে দুটো নিউক্লিওটাইডের মধ্যে ৩ নাম্বার কার্বনের থেকে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এবং ৫ নাম্বার কার্বনের থেকে হাইড্রক্সিল আয়ন (OH-) বিক্রিয়া করে পানি (H2O) হিসেবে বের হয়। তারপর ৩ নং এবং ৫ নং কার্বন দুজনের মধ্যে ফসফেট গ্রুপ দিয়ে জোড়া বাঁধে।
তাহলে এখান থেকে আমরা কি কি জিনিস পেলাম?
ফসফেট (একটা Acid গ্রুপ) + হাইড্রক্সিল (সুগারের ৩ নং কার্বনের যেটা এলকোহল গ্রুপ) = এস্টার (COOR গ্রুপ)
কারন এসিড এবং এলকোহল মিলে এস্টার বানায়। এস্টার তৈরি হবার ফলে দুটো নিউক্লিওটাইডের এই বন্ধনকে ফসফো-ডাই-এস্টার বন্ধন (phospho di ester bond) বলি আমরা।
তোমরা হয়ত খেয়াল করতে পেরেছো যে দুটো নিউক্লিওটাইড জোড়া বাঁধে তাদের 5′ OH (মানে ৩ নং কার্বনের হাইড্রক্সিল গ্রুপ) থেকে 3′ PO4 (মানে ৫ নং কার্বনের ফসফেট গ্রুপ) পর্যন্ত। আমরা এতক্ষণ দুটো নিউক্লিওটাইডের জোড়া বাঁধা নিয়ে বলেছি, কিন্তু DNA-তে অনেক অনেক অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড জোড়া বাঁধে ঠিক এভাবেই। একটার হাইড্রক্সিল (-OH) গ্রুপের সাথে আরেকটার ফসফেট (-PO4) গ্রুপ জোড়া বেঁধে বেঁধে বিশাল নিউক্লিওটাইডের চেইন বানিয়ে ফেলে এবং সেটাই আমাদের DNA.
তবে এই figure টা মাত্র একটা সুতা বা চেইনের। দুঃখের কথা হলো DNA দ্বিসূত্রক, মানে এর দুই পাশে দুইটা চেইন আছে। সেটা নিয়ে পরে জানবো, এখন আসি DNA-এর একটা সুতা নিয়ে।
DNA-এর লম্বা সুতার গঠনে একটা হাইড্রক্সিল (-OH) গ্রুপ আরেকটার ফসফেট (-PO4) গ্রুপের সাথে জোড়া বাঁধে। কিন্তু এই জোড়া বাধাটা অসীম না, নিউক্লিওটাইডের শুরুও আছে আবার শেষও আছে। তো প্রথম যে নিউক্লিওটাইড জোড়া বাঁধে সেটা তার ৩ নং কার্বনের হাইড্রক্সিল (3′-OH) দিয়ে পরেরটার ফসফেটের (5′-PO4) সাথে জোড়া বাঁধে, কিন্তু তার নিজের ৫ নং কার্বনের ফসফেট গ্রুপের হাত খালি থাকে। আবার যে নিউক্লিওটাইডটা সবার শেষে থাকে তার ৫ নং কার্বনের ফসফেট (5′-PO4) অন্য আরেকজনের হাইড্রক্সিলের (3′-OH) সাথে জোড়া বাঁধে কিন্তু নিজের ৩ নং কার্বনের হাইড্রক্সিল (3′-OH)-এর হাত খালি রাখে।
তাই আমরা DNA-এর একটা সুতা যখন আঁকতে যাই তখন সবার উপরের নিউক্লিওটাইডের ৫ নং কার্বনে ফসফেটের খালি হাত বোঝানোর জন্য লিখি- 5′ P আর সবার নিচের নিউক্লিওটাইডের ৩ নং কার্বনে হাইড্রক্সিলের খালি হাত বোঝানোর জন্য লিখি- 3′ OH, এবং এদুটোর মাঝখানে অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড একে অপরের সাথে জোড়া বেঁধে থাকে বলে তাদের কোনো খালি হাত নেই।
আগেই বলেছি DNA একটা সুতা দিয়ে বানানো না, এর পাশাপাশি দুইটা সুতা আছে। কিভাবে এই দুইটা সুতা পাশাপাশি থাকে সেটা জানো? আমরা একটা সুতার গঠন যেমন দেখেছিলাম, ঠিক তেমনি একই রকম গঠনের ২য় সুতাটি ১ম সুতার পাশে উল্টো (opposite) হয়ে থাকে। মানে ১ম সুতার শুরুটা হচ্ছে ২য় সুতার শেষ প্রান্ত, এবং ১ম সুতার শেষ হচ্ছে ২য় সুতার শুরুর প্রান্ত। এই Direction-কে Anti parallel বলে। সুতা দুটি একে অপরের সমান্তরাল কিন্তু বিপরীত।
এই দুটো সুতা একে অপরের সাথে মাঝখানে দুটো নাইট্রোজেন ক্ষার (nitrogen base) দিয়ে জোড়া বাঁধে। নাইট্রোজেন ক্ষার দুটো আবার হাইড্রোজেন বন্ধন (hydrogen bond) দিয়ে যুক্ত হয়। তবে মনে রাখবে যে এডেনিন (A) ক্ষার সবসময় থায়োমিনের (T) সাথে দুইটা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে এবং গুয়ানিন (G) ক্ষার সবসময় সাইটোসিনের (C) সাথে তিনটা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে জোড়া বাঁধে। ছবিটা খেয়াল করে দেখো, তাহলে বুঝতে পারবে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- অ্যামিনো এসিড
- এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম
- কার্যকরী মূলক কাকে বলে
- ক্রোমোজোম কাকে বলে
- জড়তার ভ্রামক
- জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি
- জৈব যৌগের গাঠনিক সমাণুতা
- ডিএনএ অনুলিপিকরণ (DNA Replication)
- ডিএনএ কী
- ডিএনএ ট্রান্সক্রিপশন
- ডিএনএ ট্রান্সলেশন
- ত্রিমাত্রিক / স্টেরিও সমাণুতা
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- মিউটেশন কি
- রাইবোজোম কি