উদ্ভিদজগতের শ্রেণীবিন্যাস

আমাদের এ পৃথিবী সব জায়গায় একই রকম না। এর কোথাও আছে বিস্তৃত সমভূমি, কোথাও আছে সুউচ্চ গিরিমালা, আবার কোথাও আছে বালুরাশির বিশাল মরুভূমি। এখানে যেমন রয়েছে মিঠাপানির নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, হ্রদ, তেমনই রয়েছে লবণাক্ত পানির সীমাহীন সাগর মহাসাগর। এর কোথাও সূর্যতাপে মাটি পুড়ে যায়, আবার কোথাও বরফে ঢাকা থাকে বছরের পর বছর ধরে। এই হল আমাদের পৃথিবীর বিচিত্র পরিবেশীয় রূপ।

পৃথিবীর এ বিচিত্র পরিবেশের প্রায় সব জায়গায় রয়েছে উদ্ভিদ। সমুদ্রের গভীরে যেমন রয়েছে উদ্ভিদ, তেমনই এরা রয়েছে সুউচ্চ গিরিমালার সর্বোচ্চ জায়গায়। সিক্ত-কর্দমাক্ত জায়গায় যেমন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়, তেমনই উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায় গরম বালি অথবা হিমশীতল বরফখণ্ডে। জলে স্থলে উদ্ভিদের উপস্থিতি যদিও আমরা দেখে থাকি তবু অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি আছে যা সচরাচর খালি চোখে দেখা যায় না।

অনুমান করা হয় যে, বর্তমানে পৃথিবীতে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭০ হাজারের মত। এতগুলো প্রজাতির উদ্ভিদ একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের প্রতিটি প্রজাতিকে শনাক্ত করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের উপস্থিতিকে বলা হয় প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (species diversity)। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যেমন গঠনগত বৈচিত্র্য (Structural diversity) রয়েছে, তেমনই আবার কার্যগত বৈচিত্র্যও (functional diversity) রয়েছে। সৃষ্টির আদিকালের উদ্ভিদ ছিল সরল প্রকৃতির। সময়ের সাথে সাথে উদ্ভিদের গঠনগত কার্যগত ও সংখ্যারও পরিবর্তন হয়েছে। একই প্রজাতির মধ্যে আবার প্রকরণগত ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। ধানের বিভিন্ন প্রকরণ এর একটি উদাহরণ। ‘জিন’গত পার্থক্যের কারণে এমনটি হয়। একে বলা হয় (জিনগত বৈচিত্র্য) (genetic diversity)। বিভিন্ন পরিবেশতন্ত্রে (ecosystem) বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মে। উদ্ভিদের জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসাথে বলা হয় উদ্ভিদ বৈচিত্র্য (plant diversity)। সামগ্রিকভাবে জীবের (organisms) জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসাথে বলা হয় জীববৈচিত্র্য (biodiversity)।

অসংখ্য ও বিচিত্র উদ্ভিদকে কিভাবে সহজে জানা যায় তার জন্য চাই একটি সুচিন্তিত ও সুবিন্যস্ত পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতিই উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস নামে পরিচিত।

 

শ্রেণীবিন্যাসের সংজ্ঞা বা শ্রেণীবিন্যাস কী?

বিচিত্র ধরনের অসংখ্য উদ্ভিদরাজিকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে একসাথে এবং বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে পৃথক দলে স্থাপনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব উদ্ভিদকে জগৎ, বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ, প্রজাতি প্রভৃতি দল-উপদলে ভাগ করার পদ্ধতিকে বলা হয় শ্রেণীবিন্যাস।

 

উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Plant Classification)

কয়েকটা কারণে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজিকে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়-

১। আমাদের প্রয়োজনেই বিশ্বের সব উদ্ভিদকে জানা আবশ্যক, কিন্তু সারা বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ প্রজাতির প্রতিটিকে পৃথক পৃথকভাবে জানা অসম্ভব, অথচ আমাদের তা জানতে হবে। উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস সহজ উপায়ে সব উদ্ভিদকে জানতে সাহায্য করে।

২। উদ্ভিদবিজ্ঞানের যে কোন শাখায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মানবকল্যাণে যথার্থ প্রয়োগ ইত্যাদির জন্য উদ্ভিদের সঠিক শনাক্তকরণ প্রয়োজন। উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাস উদ্ভিদের সঠিক শনাক্তকরণকে সহজতর করে দেয়।

৩। শ্রেণীবিন্যাস উদ্ভিদ সম্পর্কিত আমাদের জ্ঞানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

৪। আধুনিক শ্রেণীবিন্যাস উদ্ভিদের আদিকাল বর্তমান কাল নির্ধারণে সাহায্য করে এবং বিবর্তন ধারার নির্দেশ করে।

৫। শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমেই উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান, বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তকে সহজ উপায়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং এসব জ্ঞানকে প্রয়োজনে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করা যায়।

৬। উদ্ভিদজগতে যে কোন নির্দিষ্ট উদ্ভিদের অবস্থান জানার জন্য চাই শ্রেণীবিন্যাস।

৭। কৃষি, বন ও উদ্যানপালনবিদ্যায় উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত জ্ঞান প্রয়োজন।

৮। ওষুধ তৈরির জন্য ভেষজ উদ্ভিদ শনাক্তকরণ ও বাছাই করতে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন।

৯। পৃথিবীর সকল উদ্ভিদকে সহজে আন্তর্জাতিক পরিচিতি প্রদানে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন।

অর্থাৎ বলা যায়, উদ্ভিদজগতকে সহজে সঠিকভাবে জানার জন্য, সহজতর উপায়ে উদ্ভিদকে শনাক্তকরণের জন্য, উদ্ভিদ সম্পর্কে পাওয়া জ্ঞানকে সহজতর উপায়ে সংরক্ষণের জন্য এবং সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য, উদ্ভিদ জগতের বিবর্তন ধারা ও উদ্ভিদজগতের আদি থেকে উন্নত অবস্থান ইত্যাদি জানার জন্য উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাস প্রয়োজন।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool