বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ প্রদান করে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, উত্তরা, পূবালী, ন্যাশনাল, ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে ও এর কার্যাবলি

আধুনিক অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণ-কেন্দ্র স্বরূপ। এই ব্যাংকের কার্যাবলি নিচে বর্ণনা করা হল-

১। আমানত গ্রহণ করা : বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে এবং এর কাজ নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই আমানত গ্রহণ করার কথা চলে আসবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হল জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করা। ব্যাংকের আমানত সাধারণত তিন প্রকার- (ক) চলতি আমানত, (খ) সঞ্চয়ী আমানত ও (গ) স্থায়ী আমানত।

যে আমানতের অর্থ যে কোনো সময় তোলা যায় তাকে চলতি আমানত বলে। এই আমানতের জন্য ব্যাংক আমানতকারীকে কোনো সুদ প্রদান করে না। সঞ্চয়ী আমানত থেকে সপ্তাহে এক বার বা দুই বার অর্থ উঠানো যায়। এর জন্য ব্যাংক আমানতকারীকে অম্ল সুদ প্রদান করে। আর যে আমানত একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হবার পর তোলা যায় তাকে স্থায়ী আমানত বলে। সস্থায়ী আমানতের জন্য আমানতকারীকে উচ্চ হারে সুদ প্রদান করা হয়।

২। ঋণদান করা : ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রধান কাজ হল ঋণ প্রদান করা। জনসাধারণের কাছ থেকে গৃহীত অর্থের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ গচ্ছিত রেখে অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদেরকে ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ব্যাংক সাধারণত মূল্যবান সম্পত্তি বন্ধক রেখে এই ঋণদান করে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে

৩। বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি : বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম কাজ হল বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করা। বর্তমানকালে নোট প্রচলন করার ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ চেক, ব্যাংক ড্রাফট, হুন্ডি, ভ্রমণকারীর ঋণপত্র ইত্যাদি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে। উন্নত দেশগুলোতে অধিকাংশ লেনদেনই এসব বিনিময়ের মাধ্যম দ্বারা সম্পন্ন হয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের আরো কিছু কার্যাবলি

৪। হুন্ডি বাট্টা করা : বাট্টা ধার্য করে হুন্ডি বা বিনিময় বিল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগেই টাকার প্রয়োজন হলে হুন্ডির মালিক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে তুন্ডি ভাঙ্গিয়ে নগদ টাকা পেতে পারে। এই কাজে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।

৫। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়তা করা : বাণিজ্যিক ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেনাপাওনা নিষ্পত্তিতে সাহায্য করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেই বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশ কাজ পরিচালিত হয়।

৬। অর্থ স্থানান্তর করা : বাণিজ্যিক ব্যাংক নিরাপদে এবং দ্রুত টাকা স্থানান্তর করে। চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ভ্রমণকারীর চেক, টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার প্রভৃতি সহজ উপায়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণে আমাদের সহায়তা করে।

৭। অন্যান্য : বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে সেটা নিয়ে এতক্ষণ জানলাম আমরা। উপরিউল্লিখিত কার্যাবলি ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংক মক্কেলদের সুবিধার্থে আরও অনেক কার্যাবলি সম্পাদন করে গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে। যেমন- (ক) বন্ড, স্টক, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, ক্রয়-বিক্রয় করে। (খ) বাড়ি ভাড়া, আয়কর, বীমার প্রিমিয়াম, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ বিল প্রভৃতি পরিশোধ করে। (গ) মূল্যবান অলংকার, দলিলপত্র প্রভৃতি নিরাপদে গচ্ছিত রাখে। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারলাম বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে এবং এর কাজ গুলো কি কি।