জীববিজ্ঞান শব্দটির ইংলিশ নাম হচ্ছে Biology. এই শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ Bios এবং Logos থেকে। যেখানে Bios মানে জীবন এবং Logos মানে জ্ঞান। অর্থাৎ জীবন নিয়ে যে শাখায় আলোচনা করা হয় সেটাই Biology.
Biology শব্দটি প্রথম বের করেন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল। এখন জীবন বলতে কি বোঝায় সেটা আগে জানতে হবে আমাদের। জীবন হচ্ছে একটা জিনিসের যে বৈশিষ্ট্যের কারণে সেটি নিজে নিজে পরিবেশের উপর বিভিন্ন কাজ করতে পারে। যেমন আমরা মানুষ হচ্ছি একটা জীব, যার জীবন আছে, তাই আমরা পরিবেশের উপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারি। জীবের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য তার জীবন আছে বলে ধরা হয়, সেই বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে প্রোটোপ্লাজম। প্রোটোপ্লাজম আমাদের শরীরের প্রতিটা জায়গায় থাকে বলে আমরা জীব হিসেবে বেঁচে আছি।
জীববিজ্ঞানে পৃথিবীতে আবিষ্কৃত সব প্রাণি এবং উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করা হয়। কাজেই এটি বিজ্ঞানের একটা বিশাল শাখা। এই শাখাটিকে মোট দুটো ভাগে ভাগ করা হয়-
ভৌত শাখা (Fundamental Branch)
এখানে জীববিজ্ঞানের একদম মৌলিক বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের ভৌত শাখা গুলো হচ্ছে-
a) অঙ্গসংস্থান বিদ্যা (Morphology) – এটিতে একটা জীবের দৈহিক গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। জীবদেহের বাহ্যিক বিষয়কে বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External Morphology) বলে এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়কে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান বিদ্যা (Internal Morphology) বলে।
b) শ্রেণিবিন্যাস বিদ্যা (Taxonomy) – এখানে বিভিন্ন জীবের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
c) শরীরবিদ্যা (Physiology) – এখানে জীবের শরীরের ভেতরকার বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
d) কলাবিদ্যা (Histology) – জীবদেহে থাকা কলা বা টিস্যু নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
e) ভ্রূণবিদ্যা (Embryology) – জনন কোষ, জাইগোট, ভ্রূণ ইত্যাদি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
f) কোষবিদ্যা (Cytology) – জীবকোষের গঠন, কাজ, বিভাজন ইত্যাদি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
g) বংশগতি বিদ্যা (Genetics) – জীবের বংশগতি এবং জিন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
h) বিবর্তন বিদ্যা (Evolution) – পৃথিবীতে দীর্ঘ সময় ধরে প্রাণি গোষ্ঠী কিভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায় সেসব নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
i) বাস্তুবিদ্যা (Ecology) – পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্ক নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
j) এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology) – জীবদেহে থাকা হরমোন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
k) জীবভূগোল (Biography) – পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা জীবদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয় এখানে।
ফলিত শাখা (Applied Branch)
ভৌত শাখাকে আরো বেশি বিস্তারিত করে মানুষের কল্যাণের জন্য যে নতুন শাখা তৈরি করা হয়েছে তাই ফলিত শাখা। নিচে বিভিন্ন ধরনের ফলিত শাখা নিয়ে জানবো আমরা-
a) জীবাষ্ম বিজ্ঞান (Palaeontology) – অনেক আগে পৃথিবীতে বাস করা প্রাগৈতিহাসিক জীব এবং তাদের জীবাষ্ম (মৃত কংকাল) নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
b) জীব পরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics) – বিভিন্ন জীবের সংখ্যা, হিসাবনিকাশ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
c) পরজীবীবিদ্যা (Parasitology) – যেসব জীবগুলো অন্য জীবদের উপর নির্ভর করে থাকে তাদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
d) মৎসবিজ্ঞান (Fisheries) – বিভিন্ন ধরনের মাছ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
e) কীটতত্ত্ব (Entomology) – কীটপতঙ্গের জীবন, বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
f) অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology) – ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সহ বিভিন্ন অতি ক্ষুদ্র জীবদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
g) কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture) – কৃষি কাজের সাথে সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
h) চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical Science) – মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
i) জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering) – জীব এবং উদ্ভিদ দেহে থাকা জিন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার কাজ করা হয় এই শাখায়।
j) প্রাণরসায়ন (Biochemistry) – জীবের দেহে ঘটা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং রাসায়নিক বস্তু নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
k) পরিবেশবিজ্ঞান (Environmental Science) – পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
l) সামুদ্রিক বিজ্ঞান (Oceanography) – সমুদ্র এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
m) বনবিজ্ঞান (Forestry) – বন এবং বন সম্পদ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
n) জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology) – মানুষ এবং পরিবেশের কল্যাণে জীবের ব্যবহার নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
o) ফার্মেসি (Pharmacy) – ঔষধ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
p) বন্য প্রাণিবিদ্যা (Wildlife) – বনে থাকা পশু-পাখিদের নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
q) বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics) – কম্পিউটার ব্যবহার করে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে রিসার্চ করার কাজ করা হয় এই শাখায়
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- কম্পিউটারের ধারণা
- ক্রোমোসোমকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয় কেন?
- জীববিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কী?
- জীববিজ্ঞানের বিকাশ
- দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি কী?
- দ্বিপদ নামকরণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্ব (The importance of Zoology in maintaining the balance of the environment)
- প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা (Different Branches of Zoology)
- বলের ধারণা (Concept of Force)
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (Different types of Actions and Reactions)
- ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ (Development of Physical Science)
- রোবটিক্স এর ধারণা (Concept of Robotics)
- শ্বসন কাকে বলে?
- সংখ্যা পদ্ধতির ধারণা (Concept of Number System)
- সৌরজগতের ধারণা (Concept of Solar System)