অতীতে যখন বিভিন্ন জ্যোতির্বিদরা আকাশে তারাদের পর্যবেক্ষণ করতেন তখন তারা দেখতে পেতেন যে অনেকগুলো তারার গুচ্ছ মিলে বিভিন্ন প্রাণী কিংবা মানুষের আকৃতি ধারণ করেছে। রাতের আকাশে বর্তমানে আমরা এই ধরনের তারাদের প্যাটার্নকে Constellation বা নক্ষত্রপুঞ্জ বলি।
Constellation শব্দটি ল্যাটিন শব্দ constellstio থেকে এসেছে যার অর্থ তারার সমাবেশ বা নক্ষত্রপুঞ্জ। এ পর্যন্ত নক্ষত্রবিজ্ঞানীরা মহাকাশে মোট ৮৮টি নক্ষত্রপুঞ্জ আলাদা করতে পেরেছেন। এদের মধ্যে ৪২টির আকার বিভিন্ন প্রানীর মতো, ২৯টির আকার বিভিন্ন জড় বস্তুর মতো এবং ১৭টির আকার পৌরাণিক প্রাণীর মতো। তবে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ এসব constellation এর বিভিন্ন ধরনের নাম দিয়েছে।
মহাকাশে কোনো একটা বস্তুকে খুঁজে বের করার জন্য জ্যোতির্বিদরা Constellation এর প্যাটার্ন গুলো ব্যবহার করত। তবে নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে থাকা বেশিরভাগ তারাগুলোই দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব তারাগুলো কেউই একই রকম নয়। পৃথিবী থেকে দেখতে তাদের একই রকম মনে হয়। মহাকাশে কিছু পরিচিত নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়, এগুলো হলো-
Orion (অরিয়ন)
অরিয়ন রাতের আকাশের একটি বিশিষ্ট এবং পরিচিত নক্ষত্রপুঞ্জ। বেশিরভাগ সময় শীতকালে রাতের আকাশে যে বিশাল constellation দেখা যায় সেটার নাম ওরিয়ন (Orion). এই নামটি গ্রিক মিথ অনুসারে দেওয়া। একজন গ্রিক শিকারি ‘অরিয়ন’ এর নাম অনুযায়ী এটির নামকরণ করা হয়েছে। Orion এর গঠন অনেকগুলো তারা নিয়ে তৈরি যেগুলো একজন শিকারীকে নির্দেশ করছে, যে তার হাত দিয়ে তলোয়ার উঁচিয়ে রেখেছে। অরিয়ন আকাশের বিশিষ্ট নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর একটি। এটি বিষুব রেখার উপরে অবস্থিত এবং পৃথিবীর সব জায়গা থেকে এটিকে দেখা যায়। এটি অন্যান্য তারকাপুঞ্জের তুলনায় অনেক বড় আকৃতির
ওদিকে প্রাচীন সুমেরিয়রা মনে করত যে Orion এর মধ্যে থাকা তারাগুলো একটা জাহাজের আকৃতি নিয়ে বসে আছে। প্রাচীন চীনে Orion কে “Three” নামে ডাকা হতো, কেননা এর বেল্টের মধ্যে তিনটা খুব উজ্জ্বল তারা দেখা যায়।
জানুয়ারি এবং মার্চ মাসের মধ্যে এটিকে সন্ধ্যার সময় বেশি স্পষ্ট দেখা যায়। অরিয়নের সাতটি উজ্জ্বল তারা মিলে আকাশের গায়ে একটি বালুঘড়ির আকৃতি ধারণ করে। এই সাতটি তারা খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়। পৃথিবী থেকে দেখা এটিই সবথেকে বড় নক্ষত্রপুঞ্জ।
Phoenix (ফিনিক্স)
ফিনিক্স একটি ছোট নক্ষত্রপুঞ্জ, যার নামকরণ করা হয়েছে রুপকথার পাখির নামে। এটির নামকরণ করেছেন ইয়োহান বেয়ার। এটি দক্ষিণ আকাশে অবস্থিত। এটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া অথবা সাউথ আফ্রিকা থেকে দেখা যায়। যদিও এটি অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জ এর তুলনায় কম আলোকিত।
Pegasus (পেগাসাস)
পেগাসাস (পক্ষীরাজ ঘোড়া) নক্ষত্রপুঞ্জটি উত্তর আকাশে অবস্থিত। এটি ৮৮টি আবিষ্কৃত নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে সপ্তম বৃহৎ নক্ষত্রপুঞ্জ। পেগাসাস এর সবথেকে বড় নক্ষত্রটি সূর্যের থেকে প্রায় ১২ গুণ ভারী।
Ursa major (উরসা মেজার)
এ নক্ষত্রপুঞ্জটি উত্তরাঞ্চলের স্বর্গীয় গোলার্ধে অবস্থিত এবং টলেমি কর্তৃক দ্বিতীয় শতাব্দীর নক্ষত্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত। উরসা মেজার প্রায় সারা বছর উত্তর গোলার্ধের আকাশে দেখা যায়। উরসা মেজারের সবথেকে দৃশ্যমান প্যাটার্ন বা আকার হল, সাতটি উজ্জ্বল তারা মিলে একটি ভালুকের আকার ধারণ। এটি তৃতীয় বৃহত্তম নক্ষত্রপুঞ্জ যা অনেক গভীর আকাশে অবস্থিত।
Ophiuchus (অফিউকাস)
অফিউকাস তারকাপুঞ্জটি স্বর্গীয় বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থিত। এর নামটি গ্রিক শব্দ (Ophioukhos) থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ হল- ‘সর্প-বাহক’। এটি দেখলে মনে হয় একজন মানুষ একটি সাপকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে। অফিউকাস তারকাপুঞ্জ টলেমির তালিকাভুক্ত ৪৮টি নক্ষত্রপুঞ্জের অংশ ছিল এবং পূর্বে সর্পবাহক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে অবস্থিত। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অতিথি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- গলজি বস্তু কি?
- টলেমির মহাবিশ্বের মডেল (Ptolemy Model of the Universe)
- টেলিস্কোপ (Telescope)
- নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা (The Brightness of Star)
- নক্ষত্রের উপাদান শনাক্তকরণ (Identification of Star Elements)
- নক্ষত্রের জন্ম (Birth of Star)
- নক্ষত্রের মৃত্যু (Death of Star)
- নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি (The Basis of the Class of Stars)
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)
- পদার্থের অবস্থাভেদের কারণ কি?
- পৃথিবী ও সূর্যের মডেল (The model of Earth & Sun)
- মহাজাগতিক বস্তু : ছায়াপথ
- মহাজাগতিক বস্তু : ধূমকেতু ও উল্কা
- মহাজাগতিক বস্তু : নীহারিকা
- মানবচক্ষু (Human Eye)