ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমদের অবদান

আর্কিমিডিসের পর কয়েক শতাব্দীকাল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কম গতিতে চলে। একে বিজ্ঞানের বন্ধ্যাকাল বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক মানুষদের পুনর্জীবন ঘটেনি। এই সমরে পশ্চিম ইউরোপীয় সত্যতা বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিল বাইজানটাইন ও মুসলিম সভ্যতার জ্ঞানের ধারা। আরব জগতে গ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুবাদের মাধ্যমে পরিচিত ছিল। আরবরা বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান (Jabir Ibn Haiwan) ও ইবনে সিনা (Ibn Sina, ১৭৯-১০৩৭) ‘আলকেমির’ উন্নতি সাধন করেন। আলকেমির’ বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে এর মধ্যে একদিকে যেমন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার যোগ ছিল তেমনি আবার রাসায়নিক শিল্প কৌশল ও কুশলতার ঐতিহ্যের সাথেও সম্পর্কযুক্ত ছিল। ‘আলকেমি’ থেকে বর্তমান কেমিস্ট্রি বা রসায়ন নামের উদ্ভব। ইবনে সিনা একাধারে ছিলেন রসায়নবিদ, চিকিৎসক, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ। তিনি গ্রিক (প্রকৃতপক্ষে এশিয়া মাইনরের অধিবাসী) চিকিৎসাবিদ গ্যালেনের (Galen, জন্ম ১২৯) তত্ত্বের উন্নতি সাধন করেন। আরব রসায়নবিদরা বহু রাসায়নিক যন্ত্রপাতির উদ্ভব ঘটান। পরিস্রাবণ (Filtration), পাতন (Distillation), ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) প্রভৃতি প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক রূপ দান করেন আরবরা এবং চিকিৎসায় রসায়নের প্রয়োগ তাঁদের হাতেই পূর্ণতা পায়।

আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি (Abu Abdullah Ibn Musa Al-Khwarizmi, মৃত্যু ৮৫০) বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতির ভিত প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা’ এর নাম থেকে অ্যালজেবরা’ শব্দের উৎপত্তি। তাঁর উত্তরসূরীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পরিব্রাজক আল বেরুনী (Al Beruni) এবং বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম (Omar Khaiyam, ১০১৯–১১৩৫)। মুসলিম জ্যোতির্বিদদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন আল বাশুনি (Al Battani), আল ফারাজী (Al Fazari)। গ্রহ নক্ষত্রের উন্নতি নির্ণয়ের জন্য অ্যাস্ট্রোলাব (Astrolab) নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার আর একটি অতীব প্রয়োজনীয় যন্ত্র সেক্সট্যান্ট (Sextant) একাদশ শতকে প্রথম আবিষ্কার করেন আল খুজাপী নামে একজন মুসলিম বৈজ্ঞানিক। আলোকতত্ত্বের ক্ষেত্রে ইবনে আল হাইথাম (Ibn-Al-Haitham, ১৬৫-১০৩৯) ও আল হাজেন (Al Hazhen, ১৬৫-১০৩৮) এর অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। টলেমী (Ptolemy ১২৭-১৫১) ও অন্যান্য প্রাচীন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে কোনো বস্তু দেখার জন্য চোেখ নিজে আলোকরশ্মি পাঠায়। আল হাজেন এই মতের বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে আসে বলেই আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। ম্যাগনিফাইং গ্লাস বা আতশী কাচ নিয়ে পরীক্ষা তাঁকে উত্তল লেন্সের আধুনিক তত্ত্বের কাছাকাছি নিয়ে আসে। প্রতিসরণ সম্পর্কে টলেমীর স্থূল (Crude) সূত্র সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণের সমানুপাতিক এটি শুধু ক্ষুদ্র কোণের বেলায় সত্য।

মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আরেকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হলেন ইবনে ইউনুস। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী ২০০ বছরের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের রেকর্ড জমা করে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক একটি সারণি তৈরি করেন। এই সারণির নাম ছিল হাকেমাইট অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেবিল। আল-হাকিম ঐ সময়ে কায়রোর খলিফা ছিলেন। তিনি House of Science বা বিজ্ঞানাগার নির্মাণ করেন। ইবনে ইউনুস ১০০৯ সালে মারা যান। এছাড়া আল-মাসুদী প্রকৃতির ইতিহাস (History of Nature) বিষয়ে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লেখেন। এই গ্রন্থে উইন্ডমিল (Windmill) বা বায়ুকলের উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে এই বায়ুকলের সাহায্যে তড়িৎশক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে। আল-মাসুদী ৯৫৭ সালে মারা যান।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool