একটি চার্জ অপর একটি চার্জকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে। দুটি চার্জের মধ্যকার এ আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান তিনটি শর্তের উপর নির্ভর করে-
- চার্জ দুটির পরিমাণ
- চার্জ দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং
- চার্জ দুটির মধ্যবর্তী মাধ্যম।
এই শর্তগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী কুলম্ব (Coulomb) ১৭৮৭ সালে দুটি “বিন্দু চার্জ”-এর মধ্যে কাজ করা বল নিয়ে একটি সূত্র আবিষ্কার করেন। এই সূত্রটি কুলম্বের সূত্র নামে পরিচিত।
কুলম্বের সূত্র জানার আগে আমরা বিন্দু চার্জ নিয়ে জানবো। আহিত বা চার্জিত বস্তুর আকার যখন খুব ক্ষুদ্র হয়, তখন ঐ চার্জিত বস্তুর চার্জকে বিন্দু চার্জ বলা হয়। ঐ ধরনের চার্জিত বস্তুগুলো তাদের মধ্যকার দূরত্বের তুলনায় এত ছোট যে এগুলোকে গাণিতিক বিন্দু (mathematical point) বিবেচনা করা যায়। বিন্দু চার্জের সাহায্যে কুলম্বের সূত্রকে বর্ণনা করা হয়।
কোনো একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি বিন্দু চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান চার্জ দুটির গুণফলের সমানুপাতিক এবং চার্জ দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল চার্জ দুটির কেন্দ্র থেকে সংযোজক সরলরেখা বরাবর কাজ করে।
ধরি কোনো মাধ্যমে q1 এবং q2 দুটি বিন্দু চার্জের কেন্দ্র একে অপরের থেকে r পরিমাণ দূরে অবস্থিত। এরা যদি পরস্পরের ওপর F পরিমাণ বলে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে, তবে কুলম্বের সূত্র অনুসারে-
F ∝ q1q2, যখন r স্থির বা ধ্রুব থাকে
F ∝ 1 / r2, যখন q1, q2 স্থির বা ধ্রুব থাকে।
যখন r, q1 ও q2 সবগুলো রাশি পরিবর্তনশীল, তখন কুলম্বের সূত্র হবে-
F ∝ q1q2 / r2
F = k q1q2 / r2
এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান চার্জ দুটির মধ্যবর্তী মাধ্যমের প্রকৃতি এবং F, q1 q2 ও r এর পরিমাপের এককের উপর নির্ভর করে।
এস. আই. (S. I.) বা এম. কে. এস. (M.K.S.) পদ্ধতিতে k এর মান 1 / 4π∈ লেখা হয়। ∈ (Epsilon) হচ্ছে চার্জ দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত ঐ মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা বা সংক্ষেপে ভেদ্যতা (permittivity)।
তাহলে কুলম্বের সূত্রের আরেকটা ফরম্যাট হচ্ছে-
F = (1 / 4π∈) (q1q2 / r2)
শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে ∈ কে ∈o হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তাই বায়ু মধ্যমে কুলম্বের সূত্র-
F0 = (1 / 4π∈0) (q1q2 / r2)
এখানে F0 হলো শূন্য মাধ্যমে ক্রিয়াশীল বল এবং ∈0 (Epsilon naught) হচ্ছে শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা বা ভেদ্যতা। এস. আই. এককে চার্জ দুটির মধ্যকার বলকে নিউটন (N) এককে, চার্জ দুটিকে কুলম্ব (C) এককে এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বকে মিটার (m) এককে প্রকাশ করা হলে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে ∈0 এর মান পাওয়া যায়,
∈0 = 8.854 x 10-12 C² / Nm² এবং
1 / 4π∈0 = 1 / 4π x 8.854 x 10-12
= 9 x 109 C² / Nm²
অতএব, কুলম্বের সূত্রের আরেকটা রূপ-
F0 = 9 x 109 (q1q2 / r2)
কুলম্বের সূত্রের ভেক্টর রূপ
যেহেতু দুটি চার্জের মধ্যে কাজ করা বল একটি ভেক্টর রাশি, তাই কুলম্বের সূত্রকে ভেক্টররূপে প্রকাশ করা যায়। ভেক্টরের সাহায্যে কুলম্বের সূত্রকে লেখা যায়-
F = (1 / 4π∈) (q1q2 / r2) ñ
এখানে ñ হলো চার্জ দুটোর কেন্দ্রের সংযোজক সরলরেখা বরাবর একটি একক ভেক্টর। ñ এর দিক F এর দিক বরাবর থাকে। তাই এটির মান-
ñ = r / r
তাই আমরা কুলম্বের সূত্রের আরেকটা ফরম্যাট পাই-
F = nF
= r / r F
= (1 / 4π∈) (q1q2 / r3) r
চার্জের একক (Unit of Charge)
এস. আই. (S. I) পদ্ধতিতে চার্জের একক কুলম্ব। যদি F0 = 9 × 109 N হয়, q1 = q2 = q হয় এবং r = 1 m হয়, তবে q = 1 বা, q = ± 1 Columb হবে।
অর্থাৎ দুটি সমান মানের চার্জ শূন্য মাধ্যমে একে অপরের থেকে 1 মিটার দূরে অবস্থান করে একে অপরের উপর 9 × 109 N বল প্রয়োগ করলে ঐ চার্জ দুটির প্রত্যেককে একক চার্জ বলে এবং এই একক চার্জের নাম কুলম্ব। অন্যভাবে এটিকে 1 Columb বলা হয়।
চার্জের মধ্যকার বলের প্রকৃতি (Nature of force)
কুলম্বের সমীকরণ ব্যবহার করে চার্জের বলের (F) মান বের করা যায়। বলের মান যদি ধনাত্নক রাশি হয়, তবে বল হবে বিকর্ষণমূলক। কারণ একই জাতীয় দুটি রাশির গুণফল ধনাত্নক রাশি। আর বলের মান যদি ঋণাত্নক রাশি হয়, তবে বল হবে আকর্ষণমূলক। কারণ ভিন্ন জাতীয় দুটি রাশির গুণফল ঋণাত্নক রাশি।
ভেদনযোগ্যতা বা ভেদ্যতার একক (Unit of Permittivity)
কুলম্বের সূত্র হতেই ভেদনযোগ্যতার একক নির্ণয় করা যায়। এই সূত্রমতে,
F = (1 / 4π∈) (q1q2 / r2)
or, ∈ = q1q2 / 4πFr2
উপরোক্ত সমীকরণে ডান পাশের রাশিগুলো q1, q2, F এবং r কে S.I. এককে প্রকাশ করলে ভেদনযোগ্যতার একক হয়-
কুলম্ব2 / নিউটন-মিটার3 (C2/Nm3)
আবার কখনও কখনও ফ্যারাড/মিটার (F/m)-কে ভেদ্যতার একক ধরা হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- চার্জের তল ঘনত্ব
- তড়িৎ ক্ষেত্র
- তড়িৎ বলরেখা
- তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি
- তড়িৎ বিভব
- তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- বিভব পার্থক্য
- ভেক্টর সামান্তরিক সূত্র
- ভেক্টরের বন্টন সূত্র
- ভেক্টরের বিনিময় সূত্র
- ভেক্টরের সংযোগ সূত্র
- রোধের সূত্র ও আপেক্ষিক রোধ
- সমান্তরাল পাত ধারক