গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন

গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ PV = (1/3) mNc2 এর সত্যতা প্রত্যক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়। কেননা গ্যাস অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ বা অন্য কোন গতিবেগ নির্ধারণ করা যায় না। কিন্তু গ্যাসীয় সূত্রসমূহ এ সমীকরণ হতে উপপাদন করা যায় এবং গ্যাসীয় সূত্রসমূহ হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে প্রাপ্ত গ্যাসের সত্য ভৌত বৈশিষ্ট্য। সুতরাং এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণটি এবং তা যে যে স্বীকার্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তারা সঠিক।

 

বয়েলের সূত্র উপপাদন

কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থাৎ n মোল গ্যাসে N সংখ্যক অণু থাকলে, প্রতিটি অণুর ভর m এবং অণুসমূহের বর্গমূল গড় বর্গ গতিবেগ c এবং ঐ গ্যাসের চাপ P ও আয়তন V হলে গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে যে গতীয় সমীকরণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে নিম্নরূপ-

PV = (1/3) mNc2

or, PV = (2/3) N x (1/2) mc2

or, PV = 2/3 x ET ——– (1)

এখানে, (1/2) mc2 অণুসমূহের গড় গতিশক্তি।

অণুসমূহের মোট গতিশক্তি,

ET = (1/2) mNC2

আবার গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে, মোট গতিশক্তি (ET) কেলভিন তাপমাত্রার সমানুপাতিক।

অণুসমূহের মোট গতিশক্তি,

ET ~ T

or, ET = KT, এখানে K হলো ধ্রুবক। সুতরাং (1) নং সমীকরণে মোট গতিশক্তি E এর মান বসিয়ে পাই-

PV = (2/3) × KT ——– (2) [স্থির তাপমাত্রায়]

or, PV = K’

যেখানে, (2/3) × KT = K’ (আরেকটা ধ্রুবক)

or, V = k’ (1/P)

or, V ~ 1/P [স্থির তাপমাত্রায়]

এটিই বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপ। অতএব, গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে বয়েলের সূত্র উপপাদন করা হল।

 

চার্লসের সূত্র উপপাদন

গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত গতীয় সমীকরণ হচ্ছে,

PV = (1/3) mNc2

= (2/3) N (1/2) mc2

এখানে P = গ্যাসের চাপ, V = নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন, m = প্রতিটি গ্যাস অণুর ভর, N = মোট অণুর সংখ্যা, c = গ্যাসের RMS বেগ। আবার = mc2 হচ্ছে গ্যাসের অণুসমূহের গড় গতিশক্তি। গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে, গ্যাসের অণুসমূহের গড় গতিশক্তি কেলভিন তাপমাত্রার সমানুপাতিক। অর্থাৎ-

(1/2) mc2 ~ T

or, (1/2) mc2 = KT, যেখানে K একটি ধ্রুবক,

এবার এই সম্পর্ক গুলো থেকে পাই-

PV = 2/ 3 NKT

or, V = (2NK / 3P) x T (স্থির চাপে)

এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের অণুর সংখ্যা N এর মান নির্দিষ্ট। অতএব স্থির চাপ (P)-এ নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের জন্য লেখা যায়,

V = K’ × T, যেখানে K’ = 2NK / 3P একটা স্থির সংখ্যা।

or, V ~ T (স্থির চাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের জন্য)

এটিই চার্লসের সূত্রের গাণিতিক রূপ। অতএব, গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে চার্লসের সূত্র উপপাদন করা হল।

 

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র উপপাদন

একই তাপমাত্রা (T) ও একই চাপ (P)-এ সমআয়তনের (V) দুটি গ্যাসের কথা বিবেচনা করি। গ্যাসের গতীয় সমীকরণ মতে,

১ম গ্যাসের জন্য পাই,

PV = (1/3) m1N1c12

যেখানে m1, N1, ও c1 যথাক্রমে প্রথম গ্যাসের প্রতিটি অণুর ভর, অণুর সংখ্যা এবং অণুসমূহের RMS গতিবেগ।

অনুরূপভাবে, ২য় গ্যাসের ক্ষেত্রে,

PV = (1/3) m2N2c22

যেহেতু উভয় গ্যাসের ক্ষেত্রে P ও V সমান, সুতরাং তাদের PV এর মান পরস্পর সমান। তাহলে,

(1/3) m1N1c12 = (1/3) m2N2c22

or, m1N1c12 = m2N2c22 ———(1)

এখানে গ্যাস দুটির তাপমাত্রা সমান, তাই গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে উভয় গ্যাসের অণুর গড় গতিশক্তি সমান। তাহলে-

(1/2) m1c12 = (1/2) m2c22

or, m1c12 = m2c22 ——– (2)

সমীকরণ (১)-কে সমীকরণ (২) দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়, N1 = N2 অর্থাৎ একই তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তনের বিভিন্ন গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। এটিই অ্যাভোগাড্রোর সূত্র। সুতরাং গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র উপপাদন করা হল।

 

গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র উপপাদন

গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত গতীয় সমীকরণ হচ্ছে,

PV = (1/3) mNc2

or, mNc2 / V = 3P ——– (1)

আবার কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের নমুনায় N সংখ্যক অণু থাকলে এবং প্রতি অণুর ভর m হলে mN হচ্ছে সে নমুনা গ্যাসের ভর। গ্যাসের আয়তন V হলে, তখন গ্যাসের ঘনত্ব,

d = ভর / আয়তন

    = mN / V

সুতরাং, (1) সমীকরণে, d এর মান বসিয়ে পাই,

dc2 = 3P

or, c2 = 3P / d

or, c = √(3P / d)

or, c = √(3P) x (1/√d)

or, c = K (1/√d)

এখানে K = √3P একটি ধ্রুবক, যখন P স্থির থাকে।

তাহলে, c ~ 1 / √d

একটি গ্যাসের অণুসমূহের গতিবেগ যত বেশি হবে, কোন সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সে গ্যাসের ব্যাপন হার তত বাড়বে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন গ্যাসের ব্যাপন হার-

r ~ c

সুতরাং, গ্যাসের ব্যাপনের হার,

r ~ 1/√d, যখন গ্যাসের চাপ ও তাপমাত্রা স্থির থাকে।

এটিই গ্রাহামের ব্যাপন সূত্রের গাণিতিক রূপ। অতএব গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র উপপাদন করা হল।

 

ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের উপপাদন

মনে করি, নির্দিষ্ট T তাপমাত্রায় A ও B দুটি গ্যাসকে V আয়তনের পৃথক দুটি পাত্রে আবদ্ধ করতে যথাক্রমে P1 ও P2 চাপের প্রয়োজন হয়। আবার পরস্পর বিক্রিয়াহীন এ গ্যাস দুটিকে একই তাপমাত্রায় ও একই V আয়তনে রাখতে P চাপের প্রয়োজন হয়। আংশিক চাপের সংজ্ঞা মতে, P1 ও P2 হল ঐ গ্যাস মিশ্রণে যথাক্রমে A ও B উপাদান গ্যাসের আংশিক চাপ। প্রমাণ করতে হবে যে, P = P1 + P2.

মনে করি, A গ্যাসে প্রতিটি m ভরের N সংখ্যক অণু আছে এবং এদের বর্গমূল গড় বর্গবেগ হল c। সুতরাং গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে আমরা পাই,

P1V = (1/3) mNc2

      = (2/3) N (1/2) mc2

     = (2/3) N Ke, এখানে (Ke = A এর প্রতি অণুর গড় গতিশক্তি)

     = (2/3) KEA, এখানে KEA = A এর N সংখ্যক অণুর মোট গড় গতিশক্তি।

or, KEA = (3/2) P1V

অনুরূপভাবে, B গ্যাসের জন্য দেখানো যায় যে, KEB = (3/2) P2V

আবার A ও B গ্যাস দুটির মিশ্রণের বেলায়,

KETotal = (3/2) PV

গ্যাস দুটি পরস্পর বিক্রিয়াহীন এবং এদের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট, তাই-

KETotal = KEA + KEB

or, (3/2) PV = (3/2) P1V + (3/2) P2V

or, (3/2) PV = (3/2) V (P1 + P2)

or, P = P1 + P2

অর্থাৎ গ্যাস মিশ্রণের মোট চাপ-এর উপাদান গ্যাসসমূহের আংশিক চাপের যোগফলের সমান। এটিই ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র। অতএব, গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র উপপাদন করা হল।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool