প্রাণিবিজ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যতম পুরোনো শাখা। তবে এর উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে মূলত বিংশ শতাব্দীর শেষ অর্ধে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে প্রাণিবিজ্ঞানেরও বিভিন্ন অজানা দিক উদ্ভাবিত হচ্ছে। তারই আলোকে একেকটি দিক নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে একেকটি শাখা। এ শাখাগুলোকে তিনটি প্রধান বিভাগের আওতাভুক্ত করা হয়ে থাকে-
- বিশুদ্ধ প্রাণিবিজ্ঞান,
- ফলিত প্রাণিবিজ্ঞান এবং
- বিশেষিত প্রাণিবিজ্ঞান।
বিশুদ্ধ প্রাণিবিজ্ঞান (Pure Zoology)
প্রাণিবিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণীর স্বভাব, বাসস্থান, গঠনশৈলী, শরীরবৃত্ত নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বিশুদ্ধ প্রাণিবিজ্ঞান বলে। বিশুদ্ধ প্রাণিবিজ্ঞানের প্রধান শাখাগুলো হলো-
অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (Morphology) : এ শাখায় প্রাণিদেহের আকার, আয়তন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থান ও গঠন সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়। প্রাণিদেহের বাহ্যিক গঠন নিয়ে আলোচনা করা হলে তাকে বহিঃঅঙ্গসংস্থান (external morphology) এবং ব্যবচ্ছেদের পর প্রাণিদেহের অভ্যন্তরীণ গঠন, বিভিন্ন অঙ্গতন্ত্রের অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হলে তাকে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান (anatomy) বলে।
কোষবিদ্যা (Cytology) : এ শাখায় কোষ, কোষের আকার, প্রকৃতি, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন, কোষ বিভাজন, শারীরবৃত্তিক কাজ ইত্যাদি আলোচনা করা হয়।
কলাস্থানবিদ্যা (Histology) : প্রাণিদেহে বিভিন্ন কলার অবস্থান, গঠন, আকার, আয়তন ও কাজ সম্বন্ধে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
শারীরবিদ্যা (Physiology) : প্রাণিদেহের পুষ্টি, শ্বসন, ক্ষরণ, রেচন, জনন প্রভৃতি শারীরবৃত্তিক কার্যাবলী এ শাখার আলোচনার বিষয়বস্তু।
ভ্রূণবিদ্যা (Embryology) : জননকোষের উৎপত্তি, নিষিক্ত জাইগোট থেকে ভ্রূণের সৃষ্টি, গঠন, পরিসস্ফুটন, বিকাশ প্রভৃতি আলোচনা এ শাখার প্রধান বিষয়।
জীনতত্ত্ব বা বংশগতি (Genetics) : এ শাখায় প্রাণীর বংশগত গুণাবলী কিভাবে এক বংশ থেকে অন্য বংশে সঞ্চারিত হয় তার রীতি-নীতি, সংকর, প্রজনন, পরিব্যক্তি, প্রকরণ সৃষ্টির কারণ ইত্যাদি আলোচিত হয়।
বাস্তব্যবিদ্যা (Ecology) : বাসস্থান বা পরিবেশের সাথে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং জীবকূলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি আলোচনা এ শাখার বিষয়বস্তু।
বিবর্তন বা অভিব্যক্তি (Evolution) : এ শাখায় বিভিন্ন প্রাণীর উৎপত্তি, ধারাবাহিক পরিবর্তন ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়।
শ্রেণীবদ্ধবিদ্যা (Taxonomy) : এ শাখায় প্রাণিদের নামকরণ, শ্রেণীবিন্যাস ও তার রীতিসমূহ আলোচিত হয়।
প্রাণিভূগোল (Zoogeography) : এ শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখায় প্রাণীর বিস্তৃতি ও অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
ফলিত প্রাণিবিজ্ঞান (Applied Zoology)
যে শাখা প্রাণীর উন্নয়ন, প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও সদ্ব্যবহার তথা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করে তাকে ফলিত প্রাণিবিজ্ঞান বলে। এবার ফলিত প্রাণিবিজ্ঞানের প্রধান শাখা গুলো নিয়ে জেনে আসি-
মৎস্য চাষ (Pisciculture) : পুকুর, ঝিল, খাল-বিল, নদ-নদী, সমুদ্র, জলাধার প্রভৃতি জলাশয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছের চাষ এবং সুষ্ঠু সংরক্ষণ সম্বন্ধে আলোচনা এ শাখার প্রধান বিষয়বস্তু।
মৌমাছি পালন (Apiculture) : এ শাখায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মৌমাছি প্রতিপালন, মধু উৎপাদন এবং মোম নিষ্কাশন সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়।
রেশম চাষ (Sericulture) : বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রেশম মথ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও রেশম উৎপাদন এ শাখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
চিংড়ি চাষ (Prawn culture) : বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
মুক্তাচাষ (Pearl culture) : সঠিক প্রজাতির ঝিনুক নির্বাচন করে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট মুক্তার বাণিজ্যিক উৎপাদন এ শাখায় আলোচিত হয়।
ব্যাঙ চাষ (Frog culture) : বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি না করে নির্ধারিত এলাকায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যাঙের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও আহারযোগ্য অংশের প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সুষ্ঠু সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে এ শাখা আলোচনা করে।
গবাদি পশু পালন (Animal husbandry) : এ শাখায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন জাতের উন্নত মানের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য গবাদি পশু প্রতিপালন, উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং দুধ, মাংস, পনির প্রভৃতি উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় আলোচিত হয়।
হাঁস-মুরগী পালন (Poultry farming) : বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন জাতের হাঁস-মুরগী প্রতিপালন, উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং মাংস ও ডিমের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এ শাখায় আলোচিত হয়।
বালাই নিয়ন্ত্রণ (Pest control) : এ শাখায় শস্যক্ষেতে বা গুদামজাত ভোগ্যপণ্যের অনিষ্টকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণের বিষয় আলোচিত হয়।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ (Conservation of wildlife) : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এ সম্পর্কিত আলোচনা এ শাখার বৈশিষ্ট্য।
বিশেষ প্রাণিবিজ্ঞান (Specialized Zoology)
প্রাণিবিজ্ঞানের যে বিভাগের শাখাগুলো একেকটি বিশেষ গোষ্ঠীভুক্ত প্রাণী সম্বন্ধে আলোচনা করে, তাকে বিশেষ প্রাণিবিজ্ঞান বলে। প্রাণিবিজ্ঞানের বিশেষ শাখাগুলো হলো-
কৃমিবিদ্যা (Helminthology : গ্রীক helminth = worm বা কৃমি) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় ফিতাকৃমি ও সুতাকৃমি সম্মন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়।
পতঙ্গবিদ্যা (Entomology : গ্রীক entomon = insect বা পতঙ্গ) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় Arthropoda পর্বভুক্ত সন্ধিপদ প্রাণী সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
কম্বোজবিদ্যা (Conchology : গ্রীক konche = shell বা খোলক) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় Mollusca পর্বভুক্ত কম্বোজ প্রাণী সম্বন্ধে যাবতীয় আলোচনা করা হয়।
মৎসবিদ্যা (Ichthyology : গ্রীক ichthys = fish বা মাছ) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় বিভিন্ন ধরনের মাছ সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
হার্পেটোলজি (Herpetology : গ্রীক herpein = to creep বা হামাগুড়ি দেয়া) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় নানা ধরনের উভচর ও সরিসৃপ প্রাণী সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
পাখিবিদ্যা (Ornithology : গ্রীক ornis = bird বা পাখি) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় পাখি সম্মন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়।
স্তন্যপায়ীবিদ্যা (Mammalogy : ল্যাটিন mamma = breast বা স্তন) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় স্তন্যপায়ী প্রাণী সম্বন্ধে বিস্তারিত অধ্যয়ন করা হয়।
সামুদ্রিক প্রাণিবিদ্যা (Marine Zoology) : এ শাখায় সমুদ্রে বসবাসকারী সকল ধরনের প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
স্বাদুপানীয় প্রাণিবিদ্যা (Freshwater Zoology) : এ শাখায় স্বাদু পানির প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
বন্যপ্রাণিবিদ্যা (Wildlife Biology) : প্রাণিবিজ্ঞানের এ শাখায় বন্যপ্রাণীর (উভচর থেকে স্তন্যপায়ী) বর্তমান অবস্থা ও বিস্তৃতি এবং ওদের সংরক্ষণ বিষয় আলোচনা করা হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- জীববিজ্ঞানের ধারণা ও শাখা
- জৈব রসায়নের ইতিহাস
- তাপমাত্রার বিভিন্ন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক
- পদ প্রকরণ
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- প্রাণিবিজ্ঞান পরিচিতি
- বলবিদ্যা
- বিভিন্ন ধরণের তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ
- বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- ভাইরাসের উপকারীতা ও অপকারীতা
- ভাইরাসের গঠন
- শক্তি ও শক্তির বিভিন্ন রূপ
- সবুজ রসায়ন কাকে বলে
- সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ