Replica শব্দের অর্থ হচ্ছে কপি তৈরি করা। কার কপি? অবশ্যই DNA-এর কপি। একটা DNA থেকে ঠিক তারই মত আরেকটা DNA তৈরি হবার সিস্টেমটাই হচ্ছে DNA Replication বা ডিএনএ অনুলিপিকরণ।
ধরো তোমার কাছে একটা দ্বিসূত্রক DNA আছে। এই DNA থেকে নতুন একটা DNA কপি করবে তুমি। তখন এই DNA-কে পিতৃসূত্রক (Parent) DNA বলা হয়। অর্থাৎ যে DNA তার নিজের মত আরেকটা DNA বানাতে পারে তাকেই পিতৃসূত্রক / Parent DNA বলি আমরা।
এখন চলো ডিএনএ অনুলিপিকরণ সিস্টেমটা কেমন সেটা জানি। এই সিস্টেমটার কয়েকটা পার্ট আছে। সেগুলো হলো-
১.প্যাঁচ খোলা
Replication-এর শুরুতেই একটা লম্বা DNA-এর ভেতরে যেকোনো জায়গায় দুটো সুতার প্যাঁচ খুলে যায় এবং তারা আলাদা দুটো সুতায় পরিনত হয়। প্যাঁচ খোলা অবস্থায় DNA-এর গঠনটাকে তখন একটা বেলুনের মত দেখায়। বেলুনটাকে Replication Bubble বলি আমরা।
ডিএনএ অনুলিপিকরণ
DNA কিন্তু সহজে নিজের প্যাঁচ খুলতে চায় না, তার প্যাঁচ খুলে দেয় Helicase নামক একটা এনজাইম। প্যাঁচ খোলার সময় সেই DNA nitrogen base (নাইট্রোজেন ক্ষার) গুলোর হাইড্রোজেন বন্ধন ভেঙ্গে একটা সুতাতে রূপান্তর হয়। তখন এই একটা সুতার সাথে থাকা nitrogen base গুলোর হাত খোলা থাকে।
প্রতিটা DNA-এর দুটো সুতাতেই nitrogen base গুলো সিরিয়াল ভাবে সাজানো থাকে। এগুলোকে DNA-এর কোড বলে যাদেরকে A, T, C, G এসব অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করি আমরা। একটা DNA-তে বিভিন্ন nitrogen base দুটো সুতাতে নিয়ম অনুসারে বসে। নিয়মটা হচ্ছে একটা সুতাতে C বসলে এর বিপরীত সুতাতে বসবে G, এক সুতায় A বসলে এর বিপরীত সুতায় বসবে T এরকম। এবং তারা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে যুক্ত থাকবে। এরাই হচ্ছে DNA এর Coding Language.
২. এক সূত্রক DNA ধরে রাখা
আমরা যে এখন DNA-এর দুইটা সুতাকে আলাদা করে দিলাম তারা কিন্তু আলাদা থাকতে চাইবে না। দুটো সুতা চাইবে আগের মত জোড়া লেগে থাকতে। তাই সুতা দুটোকে দুপাশ দিয়ে টেনে ধরে রাখে একটা প্রোটিন, যার নাম হচ্ছে- Standard DNA Binding Protein, অর্থাৎ ১ সূত্রক DNA Binding Protein. এরা DNA-এর প্যাঁচ খোলার পর DNA-কে শক্ত করে দুপাশ থেকে ধরে রাখে।
৩. Primer তৈরি
এবার পরের ধাপে আসি, যার নাম হচ্ছে Primer তৈরির ধাপ। DNA-এর সুতা দুটো তো আলাদা হলো, এবার আলাদা সুতা দুটো নতুন DNA বানাবে। তার জন্য একটা এনজাইম সাহায্য করে যার নাম DNA polymerase. তবে এই এনজাইমটার একটা সীমানা (Limitation) আছে। সেটা কেমন?
DNA polymerase এনজাইমের দ্বারা একটা সাধারণ DNA-এর দুটো সুতাই 5′ প্রান্ত থেকে 3′ প্রান্তের দিকে তৈরি হয়। 5′ প্রান্তে থাকে ফসফেট (-PO4) গ্রুপ, এবং 3′ প্রান্তে থাকে হাইড্রক্সিল (-OH) গ্রুপ। নতুন DNA বানাতে হলে DNA-এর 3′ OH গ্রুপটা খুব দরকারী, যদি 3′ OH গ্রুপটা না থাকে তবে নতুন DNA তৈরি হবে না কখনো।
কিন্তু ভালো করে খেয়াল করো, নতুন DNA বানানোর জন্য আমাদের Replication Bubble-এর ভেতরে প্যাঁচ খুলে যাওয়া সুতার মধ্যে কোনো হাইড্রক্সিল গ্রুপ (-OH) নেই!
তাই Replication Bubble-এর ভেতর মুক্তভাবে 3′ OH গ্রুপ না থাকার ফলে সেখানে একটা Primer দরকার হয়। Primer হচ্ছে একটা ছোট RNA. এই RNA-টা যে এনজাইম দিয়ে তৈরি হয় তার নাম হচ্ছে RNA Polymerase. তো এখন Primer কিভাবে কাজ করে?
Primer-এর একটা মুক্ত -OH গ্রুপ আছে। এবং এই মুক্ত -OH গ্রুপ থেকেই নতুন DNA সুতা তৈরি হয়। তারমানে নতুন DNA সুতা তৈরি হবার জন্য Primer টা Parent DNA-কে 3′ OH গ্রুপ প্রদান করে।
৪. নতুন সুতা তৈরি
এবার চলো পরের ধাপে। এই ধাপে নতুন DNA-র সুতা তৈরি হয়। কেননা আমাদের হাতে এখন Primer আছে, Primer-এর মুক্ত -OH গ্রুপও আছে। তবে নতুন DNA বানাতে হলে আমাদের DNA polymerase এনজাইমটা লাগবে। DNA polymerase এনজাইমটা Replication Bubble-এর দুই পাশে থাকে।
এটি Parent DNA কে 5′ P direction থেকে 3′ -OH direction এর দিকে নতুন DNA সুতা তৈরি করে দিতে পারে কিন্তু উল্টো দিকে (মানে 3′ থেকে 5′ এর দিকে) নতুন DNA সুতা তৈরি করতে পারে না।
একটা DNA যখন 5′ P থেকে 3′ -OH এর দিকে তৈরি হয় তখন এর Replication / কপি তৈরি হবে উল্টো দিকে অর্থাৎ 3′ -OH থেকে 5′ P এর দিকে। আবার Parent DNA-এর যে পাশে 5′ P থাকবে তার উল্টো পাশে নতুন DNA-এর 3′ -OH প্রান্ত থাকবে, আর Parent DNA-এর যে পাশে 3′ -OH থাকবে তার উল্টো পাশে নতুন DNA-এর 5′ P থাকবে।
DNA polymerase এনজাইমটা Primer-এর OH গ্রুপ থেকে ধরে ধরে বাকি DNA কে A-T, G-C কোড অনুসারে বানায়। এক্ষেত্রে Parent DNA-এর যেদিকে 3′ OH থাকে নতুন DNA-এর সেদিকে 5′ P থাকে। নিচের চিত্রে দেখো নতুন DNA-টা দুপাশে তৈরি হলেও বাকি দুইপাশ কিন্তু খালিই রয়ে গেছে। এখানে DNA polymerase এনজাইমের সাহায্যে নতুন DNA সুতা সরাসরি তৈরি হতে পারে না।
DNA polymerase এনজাইমটা শুধু 5′ থেকে 3′ এর দিকেই নতুন DNA সুতা বানাতে পারে। তাই খালি জায়গা দুটোতে DNA polymerase এনজাইমটা নতুন DNA সুতা ভেঙ্গে ভেঙ্গে তৈরি করে। এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা DNA খন্ডগুলোকে Okazaki Fragment বলি আমরা।
৫. ফাঁকা জায়গা বন্ধ করা
ডিএনএ অনুলিপিকরণ এ সবশেষে আরেকটা ধাপ আছে। new DNA কপি হবার সময় তার শরীরে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে। Okazaki Fragment-এও প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকে। এসব ফাঁকা জায়গা গুলোকে জোড়া লাগানো হয় ligase enzyme নামক একটা এনজাইম দিয়ে। এভাবেই একটা DNA থেকে তারই মত আরেকটা DNA তৈরি হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-