তোমরা জানো যে ধাতব বা পরিবাহী পদার্থের মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। পরিবাহীর দু’প্রান্তে বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলে পরিবাহীর ভিতর দৈর্ঘ্য বরাবর তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহের জন্যই পরিবাহীতে বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। কঠিন পদার্থের ভিতর দিয়ে মুক্ত ইলেকট্রনের গতি খুবই জটিল প্রকৃতির। উদাহরণস্বরূপ একটি তামার তার বিবেচনা করা যাক। এর প্রতিটি পরমাণুর বাইরের খোলকে একটি ইলেকট্রন রয়েছে যা পরমাণু হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তামার তারের মধ্যে এলোমলো বা বিক্ষিপ্তভাবে (randomly) প্রায় 106 ms-1 বেগে বিচরণ করতে পারে। বাইরের খোলকের ইলেকট্রন মুক্ত হওয়াতে প্রতিটি তামার পরমাণু এক একটি আয়নে পরিণত হয়। এ আয়নগুলো নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে স্পন্দিত হতে থাকে। এখন অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন ক্ষুদ্র ইলেকট্রনগুলো আয়নগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন ধাক্কা বা ঘর্ষণ লাগে (প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 1014 বার) ফলে ইলেকট্রনের গতি বাধাগ্রস্ত হয়। প্রতিটি ধাক্কা বা ঘর্ষণের ফলে ইলেকট্রনগুলোর গতিপথ পরিবর্তিত হয়, ফলে প্রকৃতপক্ষে মুক্ত ইলেকট্রনগুলোর সরণ ঘটে না বললেই চলে। ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ শূন্য হয়। তাই, এক টুকরা তামার তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে না।
এখন তামার তারটিকে যদি একটি তড়িৎ শক্তির উৎস যেমন তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারির দু’প্রান্তে যুক্ত করা হয়, তবে মুক্ত ইলেট্রনগুলোর গতি আর পুরাপুরি বিক্ষিপ্ত থাকে না। তারের প্রান্তদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্যের কারণে এর মধ্যে তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো কোষের ধনাত্মক প্রান্তের দিকে খুবই সামান্য মানের একই বেগে ধাবিত হয় এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। মুক্ত ইলেট্রনের এই বেগ বা দ্রুতিকে তাড়ন বেগ বলে। সুতরাং, তাড়ন বেগ হচ্ছে-
বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় যে বেগে ইলেকট্রন নিম্ন বিভব হতে উচ্চ বিভব প্রান্তের দিকে ধাবিত হয় তাকে ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ বলে।
বিদ্যুৎ প্রবাহ ও তাড়ন বেগের সম্পর্ক
ধরা যাক AB একটি ধাতব পরিবাহী যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে।
মনে করি, ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ = v
একক আয়তনে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা = n
পরিবাহীর প্রস্বচ্ছেদের ক্ষেত্রফল = A
প্রতিটি মুক্ত ইলেকট্রনের চার্জ = e
পরিবাহীর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ = I
এখন, dr সময়ে ইলেকট্রন কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব l = vt
সুতরাং,
পরিবাহীর কোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা
N = nV
= nAl
= nAvdt
এখানে V হলো dt সময়ে পরিবাহীর অতিক্রান্ত দূরত্ব l অংশের আয়তন।
dt সময়ে প্রবাহিত চার্জের পরিমাণ = dq = eN
= enAvdt
আমরা জানি,
বিদ্যুৎ প্রবাহ I = dq / dt
= enAvdt / dt
= nAve
or, v = I / nAe
এই সমীকরণটি হলো বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং তাড়ন বেগ সম্পর্কীয় রাশিমালা।
প্রবাহ ঘনত্ব ও তাড়ন বেগের সম্পর্ক
কোনো পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের একক ক্ষেত্রফল দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ প্রবাহকে প্রবাহ ঘনত্ব বলে। একে j দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি একটি ভেক্টর রাশি। j-এর দিক হবে বিদ্যুৎ প্রাবল্যের দিক বরাবর। অর্থাৎ- বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে একটি ধনাত্মক চার্জের সঞ্চালন পথই এর দিক।
ধরা যাক, একটি সুষম প্রস্থচ্ছেদের পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A,
এবার মনে করি, পরিবাহীর মধ্যদিয়ে প্রস্থচ্ছেদের অভিলম্ব বরাবর বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে I পরিমানে। সুতরাং সংজ্ঞানুসারে প্রবাহ ঘনত্ব j-এর মান হবে-
j = I / A
or, I = jA
এস. আই. (SI) এককে j-এর একক Am-2
তাহলে,
v = I / nAe
= jA / neA
= j / ne
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-