প্রত্যেক বস্তুর তাপ গ্রহণের ক্ষমতা আছে। একে বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বা তাপগ্রাহীতা বলে। কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1 ডিগ্রী বৃদ্ধি করতে যে তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে। সব বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা সমান না, বরং এটি বস্তুর ভর এবং উপাদানের উপর নির্ভর করে। তেমনি প্রত্যেক বস্তুরই তড়িৎ ধারণের একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। সাধারণত একে বস্তুর তড়িৎ ধারকত্ব বা সংক্ষেপে ধারকত্ব (capacitance) বলে।
আমাদের জানা আছে যে, কোনো একটি পরিবাহীতে চার্জের পরিমাণ বাড়ালে তার তড়িৎ বিভব বেড়ে যায়। তাই চার্জ এবং বিভব পরস্পরের সমানুপাতিক। ধরা যাক, কোনো একটি পরিবাহীতে Q পরিমাণ চার্জ যুক্ত করায় তার বিভব V হলো। অতএব আমরা বলতে পারি,
Q ∝ V
or, Q = ধ্রুবক x V
or, Q = CV
এখানে C একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এই ধ্রুবককে পরিবাহীর ধারকত্ব বলে। যদি V = 1V হয় তবে, Q = C হবে। তাই বলা যায়-
কোনো পরিবাহীর বিভব এক একক বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হয় তাকে সেই পরিবাহীর তড়িৎ ধারকত্ব বলে। একে C দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটি পরিবাহীর আকার, মাধ্যমের প্রকৃতি এবং অন্য বস্তুর সান্নিধ্যের উপর নির্ভর করে।
কাজ ও বিভব দুটোই স্কেলার রাশি। তাই ধারকত্বও স্কেলার রাশি। ধারকত্বের S.I. বা ব্যবহারিক একক হলো ফ্যারাড (Farad)। বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের নাম অনুসারে এই এককের প্রচলন করা হয়েছে। ফ্যারাড একককে সংক্ষেপে F দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
1 ফ্যারাড : কোনো পরিবাহীর বিভব 1 ভোল্ট বাড়াতে যদি 1 কুলম্ব চার্জের প্রয়াজন হয়, তবে সেই পরিবাহীর ধারকত্বকে 1 ফ্যারাড বলে। যেহেতু-
C = Q / V
তাই, 1 F = 1 C / 1 V
কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ফ্যারাড একক খুব বড় হওয়ায় ক্ষুদ্র একককে ধারকত্বের একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব ক্ষুদ্র এককের নাম মাইক্রো ফ্যারাড (μF) এবং মাইক্রো-মাইক্লো-ফ্যারাড বা পিকো ফ্যারাড (μμF or pE)।
1F = 106 μF = 1012 μμF বা 1012 pF
or, 1 μF = 10-6 F
এবং 1μμF = 1 pF = 10-12 F
পরিবাহীর ধারকত্বের নির্ভরশীলতা
ধারকত্বের সূত্র অনুসারে, C = Q/V, তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের জন্য কোনো পরিবাহীর বিভব যে যে কারণে পরিবর্তিত হয়, সে সব কারণে তার ধারকত্বও পরিবর্তিত হবে। এর কারণগুলো হচ্ছে-
পরিবাহীর ক্ষেত্রফল – পরিবাহীর ক্ষেত্রফল যত বাড়ে, পরিবাহীর ধারকত্ব তত বেড়ে যায়।
গোলাকার পরিবাহীর ক্ষেত্রে আমরা জানি, C = 4π∈0∈rr। তাই r বেড়ে গেলে তার ক্ষেত্রফল এবং ধারকত্ব C বাড়বে। এটি সাধারণভাবে সব পরিবাহীর জন্য সত্য।
পরিবাহীর চারপাশের মাধ্যম – পরিবাহীর চারপাশের মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের উপর তার ধারকত্ব নির্ভর করে। অপেক্ষাকৃত বেশি পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে পরিবাহীর ধারকত্ব বেশি হয় এবং কম পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে পরিবাহীর ধারকত্ব কম হয়। একটি পরিবাহীর ধারকত্ব শূন্য স্থানে বা বাতাসে Co এবং ∈r, পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে Ck হলে,
∈r = Ck / C0
= কোনো মাধ্যমে একটি পরিবাহীর ধারকত্ব / শূন্যস্থানে বা বাতাসে ঐ পরিবাহীর ধারকত্ব
অপর কোনো পরিবাহী বা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহীর উপস্থিতি – চার্জগ্রস্ত পরিবাহীর কাছে অন্য কোনো চার্জশূন্য বা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহী থাকলে বৈদ্যুতিক আবেশের জন্য পরীক্ষাধীন পরিবাহীর ধারকত্ব বাড়বে। কিন্তু পরীক্ষাধীন চার্জগ্রস্ত পরিবাহীর কাছে একই জাতীয় চার্জগ্রস্ত বস্তু থাকলে, পরীক্ষাধীন পরিবাহীর ধারকত্ব কমে যাবে এবং বিপরীত জাতীয় চার্জগ্রস্ত বস্তু থাকলে তার ধারকত্ব বেড়ে যাবে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ
- তড়িৎ আবেশ
- তড়িৎ ক্ষেত্র
- তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য
- তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক
- তড়িৎ বলরেখা
- তড়িৎ বিভব
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ
- ধারক ও ধারকত্ব
- ধারকের শ্রেণী বিন্যাস
- ধারকের সমান্তরাল বিন্যাস
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- বিদ্যুৎ প্রবাহ
- বিভব পার্থক্য
- সমান্তরাল পাত ধারক