একটা বিন্দু চার্জের জন্য তৈরি তড়িৎ ক্ষেত্রের সব জায়গায় প্রভাব সমান থাকে না। তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা চার্জিত বা আহিত বস্তুর কাছাকাছি কোনো বিন্দুতে একটি পরখ চার্জ স্থাপন করলে সেটা যতটুকু বল অনুভব করবে, দূরে অবস্থান করলে সেটা এর চেয়ে কম বল অনুভব করবে। আবার চার্জিত বস্তুর চার্জের পরিমাণ বেশি হলে ঐ একই বিন্দুতে কম চার্জের বস্তু অপেক্ষা বেশি বল কাজ করবে। তড়িৎ ক্ষেত্রের এই সবলতা বা দুর্বলতা একটি রাশি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। একে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বা তীক্ষ্ণতা বা সংক্ষেপে তড়িৎ প্রাবল্য (Electric intensity) বলে। তড়িৎ ক্ষেত্রের একই অবস্থান বিন্দুতে স্থাপিত ভিন্ন ভিন্ন পরখ চার্জ এবং একটা নির্দিষ্ট বিন্দু চার্জের মধ্যে কাজ করা বলের মান পরখ চার্জের পরিমাণ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন মানের হয়। কিন্তু সেই স্থানে থাকা প্রতিটা পরখ চার্জের উপর কাজ করা বল ঐ নির্দিষ্ট বিন্দু চার্জের জন্য একই মানের হয়। তাই বলা যায়,
তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একক আধান বা চার্জের উপর কাজ করা বলকে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বলা হয়। একে ক্ষেত্র প্রাবল্যও (Field intensity) বলা হয়।
তড়িৎ ক্ষেত্রকে E দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এটি ভেক্টর রাশি। যেহেতু এটি ভেক্টর রাশি, তাই এর দিক ও মান আছে। E এর দিক হলো একটি ধনাত্মক পরখ চার্জের উপর কাজ করা বল F এর দিক বরাবর। তবে ঋণাত্মক চার্জের ক্ষেত্রে E এর দিক F এর বিপরীতমুখী হয়।
তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত পরখ চার্জ q0 এর উপর কাজ করা বল বল F হলে, ঐ বিন্দুর্তে তড়িৎ প্রাবল্য হবে,
E = F / q0
F = q0 E
তাই বলা যায়, তড়িৎ ক্ষেত্রে বলের মানকে চার্জের মান দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলই হবে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের।
এস. আই. (S.I) পদ্ধতিতে বলের একক নিউটন এবং চার্জের একক কুলম্ব। তাই তড়িৎ ক্ষেত্রের একক হবে নিউটন/কুলম্ব (N/C)। এ ছাড়া এর আরো একটি একক আছে। সেটি হলো- ভোল্ট / মিটার (V/m)।
একটার বেশি বিন্দু চার্জের জন্য কোনো বিন্দুতে তৈরি হওয়া তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বের করতে হলে ঐ বিন্দুতে প্রতিটি চার্জের জন্য আলাদাভাবে প্রাবল্য বের করতে হবে এবং নীট প্রাবল্য হবে আলাদাভাবে বের করা তড়িৎ প্রাবল্যের ভেক্টর যোগফলের সমান। অর্থাৎ, N সংখ্যক চার্জ সেখানে থাকলে এদের জন্য তৈরি হওয়া মোট তড়িৎ প্রাবল্য হবে-
E = E1 + E2 + E3 +…… + En
= sum En
এখন, তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে প্রাবল্যের মান 10 এস. আই. একক বলতে বোঝায়, তড়িৎ ক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে 1 Columb ধনাত্নক চার্জ বসালে তার উপর 10 নিউটন বল কাজ করবে ঐ তড়িৎক্ষেত্রটি।
সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র (Uniform electric field) : কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রের মান ও দিক সব জায়গায় সমান হলে তাকে সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র বলে। নিচের ছবিটা দেখো, এখানে সমান ফাঁক যুক্ত সমান্তরাল বলরেখা গুলো দিয়ে সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে।
এবার আরেকটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে জানি-
তড়িৎ ফ্লাক্স (Electric flux)
কোনো তল বা পৃষ্ঠের ভেতর দিয়ে যতগুলো তড়িৎ বলরেখা অতিক্রম করে তাকে তড়িৎ ফ্লাক্স বলে। একে piE দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে-
তড়িৎ ক্ষেত্র এবং তলের অভিলম্ব যখন সমান্তরাল অবস্থানে থাকে তখন তড়িৎ ফ্লাক্স সবচেয়ে বেশি হয়।
তড়িৎ ক্ষেত্র এবং তলের অভিলম্ব যখন সমকোণে থাকে তখন ফ্লাক্স শূন্য হয়।
‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কোরো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন কোরো না।’ (আল-কুরআন, সূরা : বাকারা)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আধান – Electric Charge
- চার্জ থেকে নির্গত বলরেখার সংখ্যা (Number of Electric Lines of Force Radiated From a Point Charge)
- চার্জের তল ঘনত্ব (Surface Charge Density)
- তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction)
- তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field)
- তড়িৎ ধারকত্ব (Electric Capacity)
- তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Electric Intensity and Electric Potential)
- তড়িৎ বলরেখা (Electric Lines of Force)
- তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি (Superposition Principle of Electric Force)
- তড়িৎ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ (Flow of Current or Electricity)
- তড়িৎ বিভব (Electric Potential)
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ (Electron theory Relating Electricity)
- বিভব পার্থক্য (Potential Difference)
- সমবিভব তল (Equipotential Surface)
- সমান্তরাল পাত ধারক (Parallel Plate Condenser)